‘যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের অধিকার রুখতে আইন করা জরুরি’

    একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতির সুযোগ দেওয়া, তাদের সন্তানদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান ও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের অধিকার রুখতে আইন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

    রোববার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ডব্লিউবিএ মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবর্ষিকীর আলোচনায় তিনি একথা বলেন।

    সভার শুরুতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “জামাতিরা হেরে গেলেও এখন তারা আওয়ামী লীগের ভেতরে ঢুকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অন্তর্ঘাত সৃষ্টি করবে। তারা চেষ্টা করবে, ভেতর থেকে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করে দিতে। এই অন্তর্ঘাতের চ্যালেঞ্জটাই হবে আওয়ামী লীগের বড় চ্যালেঞ্জ।”

    তার কথায় সমর্থন জানিয়ে মন্ত্রী মোজাম্মেল বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ‘বর্ণচোরা’ হিসেবে থেকে সময়মতো আঘাত হানতে পারে।

    তিনি বলেন, “সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পলিসি থাকে। যারা দেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না তারা কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার অংশীদারিত্ব পেতে পারে?

    “সে কারণে তারা যেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না পান, সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য আইন করা ফরজ হয়ে গেছে।”

    বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ওপর ১০০ নম্বর এবং প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে উদ্যোগ নেবেন বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

    তিনি বলেন, “পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তু আমরা নিজেরাই লিখব, নিজেরাই সম্পাদনা করব, তারপর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেব। কোনো ভাড়াটে লোককে দিয়ে করালে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র যেন সব শ্রেণিকক্ষে প্রদর্শিত হয়, তা যেন বাধ্যতামূলক করা হয়, তাও আমরা দেখব।”

    যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতির সুযোগ বন্ধে এবার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে মনে করছেন মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক।

    তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতির সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে এর আগে কথাও হয়েছে। আওয়ামী লীগ অপেক্ষা করেছিল জন রায়ের। এবার সে রায় দিয়েছে জাতি। এবার আর কোনো অজুহাত দেবে না সরকার।”

    এবারের জাতীয় নির্বাচনে জনগণ সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে ‘লাল কার্ড দেখিয়ে খেলার মাঠ থেকে বের করে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

    আলোচনা সভার সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আওয়ামী লীগকে আত্মতুষ্টিতে না ভোগার পরামর্শ দেন।

    তার কথার সূত্র ধরে মন্ত্রী বলেন, “সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে কি না, তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সরকার, জনগণ কীভাবে এগিয়ে যায়।”

    স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে মনে হবে, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির কবর রচনা হয়েছে। কিন্তু তারা ঘাপটি মেরে আছে। তারা সাময়িকভাবে ঘাপটি মেরে আছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”

    জামায়াতে ইসলামী যদি নতুন করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আর বিস্তার করতে না পারে তবে তাদের অবস্থা মুসলিম লীগের মতো হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

    একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির বিশাল বিজয়: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শিরোনামে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক।

    একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ছাড়াও শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি কে এম সফিউল্লাহ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক নুজহাত চৌধুরী আলোচনায় অংশ নেন।

    বিএনপি-জামাত জোটকে ‘অপশক্তি’ আখ্যায়িত করে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, “আজকে বিএনপি-জামাতের রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে কি না, এটাই প্রথম প্রশ্ন হওয়া উচিৎ। আজকে আমার মনে হয়, বিএনপি-জামাতের বিলুপ্তি হওয়া উচিৎ। তা না হলে স্থিতিশীলতা আসবে না। আমরা যে উন্নয়নের কথা বলছি, সেটাও সম্ভব হবে না।”

    হেফাজতে ইসলামীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের ‘সুসম্পর্ক’ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সভার বক্তারা।

    মুনতাসীর মামুন বলেন, “সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করে ভোট আশা করতে পারেন, কিন্তু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যেসব কথা আমরা বলি, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে তা সম্ভব হবে না।”

    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছর ১০ জুন থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অভিযাত্রা’ শিরোনামে এক প্রচারাভিযান পরিচালনা করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। অনুষ্ঠানের শুরুতে সেই প্রচারাভিযান নিয়ে সাইফউদ্দিন রুবেল নির্মিত একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।