শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টার ৩১ বছর, শেষ হয়নি বিচারকাজ : শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা

    চট্টগ্রাম মেইল : ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি লালদীঘি ময়দানে শেখ হাসিনার সমাবেশ বানচাল করতে গুলি চালায় পুলিশ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গুলিতে প্রাণ হারান ২৪ জন। সেদিনের গণহত্যায় নিহত শহীদদের স্মরণে নগরীর কোর্ট বিল্ডিংয়ের পাদদেশে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিফলক।

    তবে ঘটনার ৩১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি এ মামলার বিচারকাজ। নানা কারণে দীর্ঘায়িত হচ্ছে সাক্ষ্যগ্রহণ। জানা যায়, বহুল আলোচিত এই মামলার মোট আসামী ৮ জন। এরমধ্যে পলাতক ১জন। এছাড়া জামিনে রয়েছে ৪ জন, আর মারা গেছে ২জন। তবে প্রধান আসামী তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছে বলে জানানো হলেও তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি আদালত।

    দীর্ঘ তিনদশকেও এঘটনার বিচার না হওয়ায় হতাশ মামলার সাক্ষীরা। অতচ কয়েকমাস আগে মামলাটি দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে মামলার মোট ১৬৮ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪৬ জন। তবে কবে নাগাদ শেষ হবে, তা বলতে পারছেনা চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

    আজ বৃহস্পতিবার গণহত্যায় নিহত শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আইনজীবী ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

    ১৯৮৮ সনে ২৪ জানুয়ারি গণ-হত্যায় শহীদদের প্রতি আদালত ভবন চত্বরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এসময় চসিক প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

    সকালে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের নের্তৃত্বে শহীদদের স্মৃতিস্তম্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় আওয়ামী লীগ নেতারা।

    ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারী লালদীঘির মাঠে তৎকালীন ১৫ দলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় তৎকালীন স্বৈরাচার সরকার নির্দেশে নিহতদের স্মৃতি রক্ষার্থে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত কোট বিল্ডিং চত্বরে নির্মিত শহীদ বেদীতে গতকাল পুষ্পস্তবক অর্পন করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, সিডিএ বোর্ড সদস্য ও সিডিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

    এসময় সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, তৎকালীন ১৫ দলীয় নেত্রী ও বর্তমান শেখ হাসিনার জনসভায় তৎকালীন স্বৈরশাসকের পেটোয়া বাহিনী মুক্তিকামী জনতার উন্মাতাল জনজোয়ার দেখে ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাই এ সমাবেশ বানচাল করে দিতে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার রকিবুল হুদার নির্দেশে গর্জে উঠে পুলিশ বাহিনীর রাইফেল।

    দলের নেতাকর্মীরা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে নেত্রীকে বাঁচাতে মানববর্ম রচনা করেন। কিছু বুঝে উঠার আগেই শুরু হয় অতর্কিত গুলি ছোঁড়াছুঁড়ি। সেদিনের সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী এবং আইনজীবী, চিকিৎসকসহ অন্তত ২৪ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়। তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই শহীদ বেদী নির্মান করেছে যাতে করে নিহতদের স্মৃতি রক্ষা করা যায়।

    এসময় অন্যান্য মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিডিএ সাবেক বোর্ড সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সিডিএ বোর্ড সদস্য কেবিএম শাহজাহান, হাসান মুরাদ বিপ্লব, সিডিএ নগর পরিকল্পনাবিদ শহিনুর ইসলাম খান, প্রকৌশরী মো. হাসান, স্বেচ্ছাবেকলীগ নেতা মনি, মো. মানিক, পংকজ পাল, সাধন, রাকিব প্রমুখ।

    ২৪ জানুয়ারি গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে ৩৪নং ওয়ার্ড পাথরঘাটা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ’র উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচীর মধ্যে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাচ ধারণ পুষ্পস্তবক অর্পন ও আলোচনা সভা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা ওমর ফারুক’র সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত হয়।

    উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মশিউর রহমান রোকন। বিশেষ অতিথি ছিলেন থানা আওয়ামী লীগ নেতা দীপক ভট্টাচার্য্য, আব্দুস সালাম, জসিম উদ্দিন মাস্টার। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা এড. তপন কুমার দাশ, এড. স্বাগতম দাশ, এড. উজ্জ্বল দাশ, প্রকাশ জৈন, আবু বক্কর, যুবলীগ নেতা সুফি দিদারুল আলম, আফজাল হোসেন আজু, শুভ দাশ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাধন দাশ, ছাত্রলীগ নেতা শওকত ওসমান তানজির, দেব জয় দে, শাওন দাশ প্রমুখ।

    বক্তারা, দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে ঝুলে থাকা আলোচিত মামলাটির দ্রুত বিচার কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান।

    বিএম/রাজীব সেন..