কর্ণফুলি তীর রক্ষায় দ্বিতীয় দিনের উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্ন : উচ্ছেদ হলো আরো ৩০ স্থাপনা

    রাজীব সেন প্রিন্স : সবধরণের জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করায় প্রশাসনকে স্বাগত জানিয়েছেন সর্বসমহল। এর আগেও বারবার কর্ণফুলিকে দখলমুক্ত করার উদ্দ্যেগ নিলেও প্রভাবশালীদের নানা মহলে তদবির ও জেলা প্রশাসনে আর্থিক ফান্ডের স্বল্পতার অজুহাতে তা করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ উচ্ছেদ কার্যক্রমের জন্য আর্থিক যোগান দেওয়ার আশ্বাস এবং কারো তদবিরে মাথা নত না করার নির্দেশে অনেকটা কোমড় বেঁধেই উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে জেলা প্রশাসন।

    চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীর রক্ষায় সোমবার থেকে শুরু হওয়া অভিযানের আজ দ্বিতীয় দিনের অভিযান সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন। তবে তিনধাপের উচ্ছেদ অভিযানের প্রথম ধাপ এখানো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। আগামী দুদিনের মধ্যে প্রথম ধাপের অভিযান সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসন।

    প্রথম ধাপে সদরঘাট থেকে বারিকবিল্ডিং পর্যন্ত ২০০ অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে সোমবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। অভিযানের প্রথম দিনে সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া অভিযান চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এতে ৮০টির বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে কর্ণফুলী নদীর পাড় ভূমি দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করার কথা জানিয়েছিলো জেলা প্রশাসন।

    দ্বিতীয় দিনের শুরুতে প্রথমে আগেরদিন বুলডোজার ও স্ক্যাভেটার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া অবৈধ স্থাপনার জঞ্জাল পরিস্কার করা হয়। পরে মাঝিরঘাট থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে সন্ধ্যা ৬টায় অভিযান শেষ করে। দ্বিতীয় দিনের অভিযানেও প্রায় ৩০টির মতো স্থাপনা উচ্ছেদ হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় দিন মিলে সর্বমোট চার একর সরকারি জমি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

    প্রথমদিনের মতো আজ দ্বিতীয় দিনের অভিযানেও নের্তৃত্ব দেন পতেঙ্গা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার তাহমিলুর রহমান এবং জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম। উচ্ছেদ অভিযানে র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অংশ নেন।

    সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দুদিনে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও প্রায় ৪ একরের মতো নদী তীরবর্তী সরকারি জায়গা উদ্ধারের কথা জানিয়ে পতেঙ্গা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার তাহমিলুর রহমান বলেন, প্রথম ধাপের সদরঘাট টু বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকার অনেকটা শেষ হয়েছে। আশা করি আগামী দুদিনের মধ্যে তা সম্পন্ন করা হবে।

    তিনি বলেন মঙ্গলবারের অভিযানে ৩০টির মতো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্যে পাকা আধা পাকা বেশ কিছু স্থাপনা ছিলো। তবে এসব অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের সময় তাদের কোন প্রকার সমস্যা, কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন বা অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি বলে জানান তাহমিলুর। তাছাড়া আজকের অভিযানের পাশাপাশি গতকালের অভিযানে উচ্ছেদ করা কিছু স্থাপনার অবশিষ্ট শ্রমিকরা নিয়োজিত থাকায় কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তাহমিলুর রহমান।

    প্রথম ধাপের উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে দ্বিতীয় ধাপে সদরঘাট থেকে মোহরা এবং তৃতীয় ধাপে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হবে রুবি সিমেন্টের পর থেকে পতেঙ্গা এলাকা পর্যন্ত।

    জানা যায়, মোহরা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত মোট দুই হাজার একশো ৮৭ স্থাপনা চিহ্নিত করে উচ্ছেদের এই অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন।

    ২০১৬ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে কর্ণফুলী নদীর ওপর গড়ে ওঠা ২১২৭ টি স্থাপনা ৯০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেয়া হয়। সে নির্দেশের দু’বছর পর সকল জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দরনগরী কর্তৃপক্ষ এবং সিটি কর্পোরেশন এ উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে। সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত এ উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে তারা।

    বিএম/রাজীব…