চট্টগ্রাম মেইল : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রেখেছে প্রশাসন। আজ বুধবার সকালে নির্ধারিত সময় থেকেই শুরু হয় তৃতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান।
তিন ধাপের উচ্ছেদ কার্যক্রমের আজও প্রথম ধাপের সদরঘাট লাইটারেজ জেটি থেকে মাঝিরঘাট এলাকার মধ্যেই চলছে এ অভিযান।
বরাবরের মতই উচ্ছেদ অভিযানের নের্তৃত্বে রয়েছেন পতেঙ্গা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার তাহমিলুর রহমান এবং জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম। উচ্ছেদ অভিযানে র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা ও সহযোগীতায় দায়িত্ব পালন করছে।
গত সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দুদিনে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও প্রায় ৪ একরের মতো নদী তীরবর্তী সরকারি জায়গা উদ্ধারের কথা জানিয়েছিলো পতেঙ্গা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার তাহমিলুর রহমান।
তিনি জানিয়েছেন দ্বিতীয় দিন ৩০টি বড় পাকা স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি একটি উপখাল দখলমুক্ত করা হয়েছে। খালের মুখটি ২০ ফুট চওড়া হলেও দখল করে নেওয়ার কারণে এটি নালায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল। উচ্ছেদের মধ্যে খাদ্য ও নানা পণ্যের গুদামের সংখ্যা বেশি। দীর্ঘদিন ধরে নদীর পাড়ে এসব গুদাম তৈরি করে দখল করে রেখেছে একটি চক্র। এর আগে উচ্ছেদ অভিযানের প্রথম দিন সদরঘাট জেটি এলাকায় অন্তত ৮০টি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলো জেলা প্রশাসন।
একদিকে দীর্ঘ দিন পর কর্ণফুলি নদী তীর রক্ষায় প্রশাসনের বড় ধরনের অভিযান দেখে এবং অভিযান অব্যাহত রাখায় খুশি স্থানীয় জনসাধারণসহ সর্বমহল। উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষে উদ্ধারকৃত সরকারি জমিতে যেন নতুন করে কেউ দখলে নিতে না পারে সেজন্য প্রশাসনকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহবান করেছে সচেতন মহল। তবে ক্ষিপ্ত হয়ে একটি প্রভাবশালী মহল বিভিন্ন মহলে তদবিরসহ উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও করছে জেলা প্রশাসন।
এসব হুমিক ও তদবির আমলে না নিয়ে বরং হুমকি দাতা ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, কর্ণফুলি নদীর তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে প্রথম ধাপে সদরঘাট থেকে বারিকবিল্ডিং পর্যন্ত ২০০টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে গত সোমবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। প্রথম ধাপের উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে দ্বিতীয় ধাপে সদরঘাট থেকে মোহরা এবং তৃতীয় ধাপে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হবে রুবি সিমেন্টের পর থেকে পতেঙ্গা এলাকা পর্যন্ত। মোহরা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত মোট দুই হাজার একশো ৮৭ স্থাপনা চিহ্নিত করে উচ্ছেদের এই অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন।
২০১৫ সালে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে দুই হাজার ১শ ২৭টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা করে হাইকোর্টে জমা দেয় জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে কর্ণফুলী নদীর ওপর গড়ে ওঠা ২১২৭ টি স্থাপনা ৯০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেয়া হয়। সে নির্দেশের দু’বছর পর সকল জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দরনগরী কর্তৃপক্ষ এবং সিটি কর্পোরেশন এ উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে। সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত এ উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স….