কর্ণফুলী তীরে চলছে চতুর্থ দিনের অভিযান : অরক্ষিত জায়গা পুনঃদখলের শঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা

    চট্টগ্রাম মেইল : দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত কর্ণফুলী নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে চুতুর্থ দিনের মতো অভিযান শুরু হয় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে।

    সদরঘাটের মাঝিরঘাট এলাকার বিবি মসজিদ হাবিব গল্লির মুখ থেকে চতুর্থদিনের উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম শুরু করার কথা মুঠোফোনে জানিয়েছেন উচ্ছেদ অভিযানের নের্তৃত্ব দেওয়া নির্বাহী হাকিম তাহমিলুর রহমান।

    তিনি জানান, সকালে রৌদের তীব্রতা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে। তীব্র এ রোধ উপেক্ষা করে সেখানে থাকা গোডাউন ও লবণমিলসহ ছোট বড় বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকরা।

    পতেঙ্গা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার তাহমিলুর রহমানের সাথে উচ্ছেদ অভিযান তদারকিতে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম। এছাড়া উচ্ছেদ অভিযানে র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।

    কর্ণফুলি তীরবর্তী অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া অভিযানে বুধবার পর্যন্ত তিন দিনে ১৪০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করার কথা জানিয়েছেন তাহমিলুর। ইতিমধ্যে সদর ঘাট, লাইটারেজ জেটি, মাঝির ঘাট, আনু মিয়া মাঝির ঘাট, লবণ ঘাটসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়।

    তিনি বলেন, এ তিন দিনে সদরঘাটস্থ জেটিঘাট থেকে লবণঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫ একর ভুমি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার উদ্ধার হওয়া ভূমির পরিমাণ ১ একর। এর আগের দুদিনে অন্তত একশো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৪ একরের মত ভুমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। উদ্ধার করা সরকারি ভুমির কিছু কিছু স্থানে গাছের চারা রোপন করা হয়েছে বলেও জানান তাহমিলুর।

    কর্ণফুলি নদীর তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে প্রথম ধাপে সদরঘাট থেকে বারিকবিল্ডিং পর্যন্ত ২০০টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে গত সোমবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। প্রথম ধাপের উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে দ্বিতীয় ধাপে সদরঘাট থেকে মোহরা এবং তৃতীয় ধাপে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হবে রুবি সিমেন্টের পর থেকে পতেঙ্গা এলাকা পর্যন্ত। কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে মোহরা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার তীরে গড়ে ওঠা দুই হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চলছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।

    জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ এর পক্ষে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

    আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে দুই হাজার ১শ ২৭টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা করে হাইকোর্টে জমা দেয় জেলা প্রশাসন।

    ২০১৬ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে কর্ণফুলী নদীর ওপর গড়ে ওঠা ২১৮৭ টি স্থাপনা ৯০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেয়া হয়। সে নির্দেশের দু’বছর পর সকল জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দরনগরী কর্তৃপক্ষ এবং সিটি কর্পোরেশন এ উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে। সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত এ উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

    অরক্ষিত ভুমি পুনঃদখলের শঙ্খায় বিশেষজ্ঞ মহল : একদিকে দীর্ঘদিন পর কর্ণফুলি নদী তীর রক্ষায় প্রশাসনের বড় ধরনের অভিযান দেখে এবং অব্যাহত রাখায় খুশি স্থানীয় জনসাধারণসহ সর্বমহল। তবে উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষে উদ্ধারকৃত সরকারি জমিতে যেন নতুন করে কেউ দখলে নিতে না পারে সেজন্য প্রশাসনকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহবান করেছে সচেতন মহল।

    অন্যদিকে পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় কর্ণফুলী নদীর দু’তীরের উদ্ধারকৃত জায়গা পুনঃ দখলের আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞ মহল। তারা বলেন, এখন পর্যন্ত ৫ একরের মতো ভুমি উদ্ধার করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি স্থানে মাত্র গুটি কয়েক গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। এতে করে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করা বিশাল পরিমাণের ভুমি রয়ে গেছে সম্পূর্ণ অরক্ষিত।

    অবৈধ দখলে থাকা কর্ণফুলি নদী দুই পাড়ের স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম আরো দ্রুতগতিতে পরিচালনা করে উদ্ধারকৃত জায়গায় নদীর দু’তীরে ওয়াক ওয়ে নির্মাণ এবং বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনে ভুমির মূল মালিক বন্দরের সহযোগিতা নিতে জেলা প্রশাসনকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…