চট্টেশ্বরী সড়কের নাম নিয়ে দ্বিমত নেই, পরিবর্তনের পরিকল্পনাও নেই-নওফেল

    চট্টগ্রাম মেইল : বাংলাদেশের বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরসমূহের মধ্যে অন্যতম শ্রী শ্রী চট্টেশ্বরী কালী মায়ের বিগ্রহ মন্দির। জনশ্রুুতি মতে, প্রায় ৩০০-৩৫০ বছর পূর্বে আর্য ঋষি যোগী ও সাধু সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে এ মন্দিরে চট্টেশ্বরী দেবীর প্রকাশ ঘটে। চট্টগ্রাম নগরীর তিন পাহাড়ের কোনে অবস্থিত প্রায় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩শ বছরের পুরনো এ বিখ্যাত মন্দিরের নামেই নামকরণ রয়েছে চট্টেশ্বরী সড়ক।

    সম্প্রতি সড়কের নাম পরিবর্তণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে নগরবাসীর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে গুজব। অবশ্য যে সংস্থাটির বিরুদ্ধে নাম পরিবর্তণের গুজব উঠেছে সে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সুনির্দ্দিষ্ট কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেকেই অবগত নয় নাম পরিবর্তণের বিষয়টি। অতচ কয়েকদিন ধরে ঐতিহাসিক এ মন্দিরের নামে নামকরণ করা সড়কটির নাম পরিবর্তণ করার বিষয়টি চট্টগ্রাম বাসীর মাঝে ঝড় তুলে আলোচনা সমালোচনার।

    তবে ঐতিহাসিক এ মন্দিরের নামে চট্টেশ্বরী সড়কের নাম পরিবর্তণের বিষয়ে যে গুজবটি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে তা কার্যকর হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম ৯ আসনের সাংসদ ও সরকারে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

    তিনি আজ মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সোয়া ১১টার দিকে তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

    তার Mohibul Hassan Chowdhoury নামের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা স্ট্যাটাসে লিখেন চট্টগ্রাম শহরের নামের সাথে চট্টেশ্বরী মন্দিরের নামের ইতিহাস জড়িত আছে, এই ঐতিহাসিক স্থাপনার নামে চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী রোড। এই সড়কের নাম পরিবর্তন মানেই বলতে গেলে চট্টগ্রাম নামের পরিবর্তন!

    এই সড়ক চট্টগ্রাম নয় (৯) সংসদীয় আসনের অন্তর্গত। এই নয় আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে শুধু নয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপ মন্ত্রী হিসেবে আমি বলতে চাই এই ঐতিহাসিক সড়কের নাম নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই, নামের পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনাও নেই। তাই এটি নিয়ে বিতর্কের আর প্রয়োজন নেই।

    কেউ যদি সরল মনে কোনো মন্তব্য করেন এটি হয়তোবা ভুল বশত করেছেন। আদৌ এটি কেউ চেয়েছেন কিনা বা বলেছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে, যাতে কোনো ভুল সংবাদের বরাতের স্বীকার কেউ হচ্ছেন কিনা।

    নওফেল তার স্ট্যাটাসে বলেন, আমি ইতিমধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামের সাথে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়ার নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির নামে সেই যাদুঘরের নাম পরিবর্তন ও প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করেছি মন্ত্রিপরিষদের সভায়। এটি অচিরেই বাস্তবায়িত হবে।

    এভাবে পালাক্রমে সকল অপশক্তির নাম চট্টগ্রাম থেকে আমরা উৎপাটিত করবো। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ নাম গুলো এবং স্থাপনাগুলো আমরা সংরক্ষন করবো। চট্টেশ্বরী রোড/সড়ক এই নামেই থাকবে।

    জানা যায়, দেবী চট্টেশ্বরী হলেন দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়া দুরগা/কালীর রূপ বিশেষ। জনশ্রুতি মতে এটি একটি সতীপীঠ। যেখানে দেবী সতীর দেহের কোনও অংশ পরেছিল দক্ষযজ্ঞের পরে। মূল রাস্তা থেকে একটু উঁচুতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে মধ্যের বাঁধানো চত্বরটির বাঁদিকে কালী মন্দির ও ডানদিকে শিব মন্দির। যেটি একটি ভৈরবের প্রতীক, যা সতীর কুন্ডকে প্রতিরক্ষা দান করে।

    শিব মন্দিরের পাশে রয়েছে একটি কুন্ড। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা এই মন্দিরটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং মন্দিরের সেবায়েতের বাড়ি ও বিগ্রহ বিনষ্ট করা হয়। দেশ স্বাধীনতা লাভের পর মন্দিরের সেবায়েত ডা. তারাপদ অধিকারী তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্য মন্ত্রী তরুণ কান্তি ঘোষ এবং সনাতন ধর্মীদের সাহায্য ও সহযোগিতায় কষ্টি পাথরের কালী মূর্তি ও শ্বেত পাথরের শিব মূর্তি পুনঃনির্মান করেন, যাতে ও বাংলাদেশ সরকারও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স….