বইমেলায় “নিজস্ব কারাগার” এর দ্বিতীয় মুদ্রণ

    সাহিত্য মেইল : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’ -এ প্রকাশিত হলো কবি অসিত দেবনাথ অন্তুর প্রথম কবিতার বই ‘নিজস্ব কারাগার’ এর দ্বিতীয় মুদ্রণ। প্রকাশনা সংস্থা ‘বাংলার প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত এ কাব্যগ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন ‘ধৃতক্ষণ’। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে “বাংলার প্রকাশন”র ৪২৮ নাম্বার স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। ৪৮ পৃষ্ঠার বইটির দাম রাখা হয়েছে ১৪০ টাকা। বইমেলা উপলক্ষ্যে মূল স্টলে এবং রকমারী-তে ২৫% ছাড়ে বইটি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০০ টাকায়। 

    বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে তরুণ সমাজে এক ধরণের কবিতা বিমুখতা দৃশ্যমান এবং কবিতার বই বিক্রি হয় কম, এমন অপ্রিয় বাস্তবতার মাঝে একজন তরুণ কবির প্রথম বইয়ের দ্বিতীয় মুদ্রণ বাজারে আসা নিশ্চয়ই আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি ঘটনা। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে আমরা এমনটি খুব কমই দেখতে পেয়েছি। সাহিত্যিক-সমালোচক মহলেও বইটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

    মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯) মেলায় কথা হয় “নিজস্ব কারাগার” বইয়ের লেখক কবি অসিত দেবনাথ অন্তুর সঙ্গে। সেখানে আলোচনায় তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘নিজস্ব কারাগার’র দ্বিতীয় মুদ্রণ, বইমেলা, কবিতা এবং ব্যাক্তিজীবনের কিছু কথাও উঠে আসে। 

    কুশলাদি বিনিময়ের পর প্রথমেই তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, বইমেলা কেমন লাগছে? -জবাবে তিনি বলেন, ‘”অমর একুশে বইমেলা একটা উৎসব। বাংলাদেশে আর কোন উৎসব এতো দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় না। উৎসবের মধ্যে থাকতে এবং বাঁচতে কার না ভালো লাগে!” 

    “গতবারের পর এবারের বই মেলাতেও আপনার বই ‘নিজস্ব কারাগার’র প্রকাশিত হলো! অনেক খুশি হয়েছেন নিশ্চয়ই?”- এমন প্রশ্নের ব্যাখ্যায় কবির জবাব, ”অবশ্যই। মানুষ কবিতা গ্রহণ করছে, পড়ছে! এটা সব কবির জন্যই খুব আনন্দের সংবাদ। তবে আমার বইয়ের দ্বিতীয় মুদ্রণ আসায় আমি যতটা না খুশি, তার চেয়ে বেশি খুশি হবো যদি পাঠক কবিতাকে ধারণ করেন। বর্তমান সময়ে অনেকেই অনেক ভালো লিখছেন, যাদের খবর পাঠক জানেন না। অভিমানে অনেক কবি দূরে সরে যাচ্ছেন। পাঠকের কাছে আমার সবিনয় অনুরোধ থাকবে, যেন তারা তরুণ কবিদের কবিতা একবার হলেও পড়েন। পড়ার পর ভালো লাগলে উৎসাহ দিন, ভালো না লাগলে সমালোচনা করুন। খারাপ লাগলে বাতিল করুন। তবুও অন্তত একবার পড়ুন।”

    “নতুন আঙ্গিকে সাজানো এবারে বইমেলার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?” – জানতে চাওয়া হলে অন্তু বলেন, ‘সন্তোষজনক। তবে আমার মনে হয় মেলার পরিধি এবং সময় আরো বাড়ানো হলে ভালো হতো। বাণিজ্য মেলার সময় বাড়ানো হয় অথচ বইমেলার সময় বাড়ানো হয় না-এই ব্যপারটা আমাকে ব্যথিত করে।’

    ”আপনার পরবর্তী বইটি আমরা কবে নাগাদ দেখতে পাবো?” -জবাবে আশাবাদী কন্ঠেই কবি বললেন,’পরের বইমেলায় আমার নতুন একটি কাব্যগ্রন্থ আসবে। এই লক্ষ্যেই এখন কাজ করছি। নিয়মিত লেখার চেষ্টা করছি। এ ব্যপারে আমি আশাবাদী। আশা করছি সবাই সাদরে সেটা গ্রহণও করবে। এ ছাড়াও এবার থেকে নিয়মিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, সাহিত্য পত্রিকা এবং বিভিন্ন ম্যগাজিনে নিয়মিত লেখার চেষ্টা করবো।’

    “পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়ে কাব্যচর্চা, কতটা শখের বসে আর সাধ্যের ভেতর পড়ে?” -দৃপ্তকন্ঠে কবির জবাব,”আমার তিন প্রেমিকা। কবিতা, রাজনীতি এবং পদার্থবিজ্ঞান। আমি এদের ধারণ করি। তবে কবিতা আমার খুব কাছের। একান্ত আপন। কখনো যে এদের মধ্যে ঝগড়া হয় না, এমনটা না। কখনো কখনো আমার অন্য দুই প্রেমিকার জন্য কবিতাকে ঠিকভাবে সময় দেয়া হয়ে উঠে না। তবে বাকিদের সাথে প্রেম করলেও বিয়ে আমি কবিতাকেই করবো।”

    “শেষ প্রশ্ন! কাব্যচর্চার অনুপ্রেরণা পান কোত্থেকে?” -জবাবে অন্তু বললেন,”মানুষ জন্মগতভাবে নিঃসঙ্গ এবং একা। কবিতা এই বোধটুকু আমাদের মাঝে জাগ্রত করে এবং কিছুটা সঙ্গ দেয়। আর তাই কবিতাকে আমি গায়ের চামড়া করে নিয়েছি। নানান পোষাকে হয়তো আমরা গা ঢেকে রাখি, কিন্তু দিনশেষে সবকিছুই খুলে ফেলতে হয়, চামড়া ছাড়া। এটা খোলা যায় না। কারণ এটাই আমাদের একান্ত নিজস্ব এবং ব্যক্তিগত।”

    এরপর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে কবির থেকে বিদায় নিলাম। তাঁর কথাগুলোই মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকলো। ‘রাজনীতি-কবিতা-পদার্থবিজ্ঞান’কে এক সুতোয় গাঁথতে পারা এবং কবিতাকে নিজের শরীরের চামড়া হিসেবে কল্পনা করতে পারা একজন স্বভাব কবির পক্ষেই হয়তো সম্ভব! সাক্ষাতকার গ্রহণ করে ফাহিম মন্ডল :

    বিএম/রাজীব সেন….