নবরুপে সজ্জিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

    রাজীব হাসান রাজন : শুক্রবার মানে বড় বড় দালান কৌঠা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ছায়া এবং যান্ত্রীক নগরীর বাইরে থাকার দিন। পরিবার ও স্বজনদের সাথে প্রাণভরে সময় কাটানোর দিন।

    চট্টগ্রাম নগরীর ভ্রমন পিপাসু অধিকাংশ মানুষ অধির আগ্রহে বসে থাকে সপ্তাহের এ একটি দিনের জন্য। কর্মক্ষেত্রের কারণে যন্ত্রের মাঝে ডুবে থাকা যান্ত্রিক মানুষগুলো ছুটির দিনগুলোতে হারিয়ে যেতে চান প্রকৃতির মাঝে।

    তবে লক্ষ লক্ষ ভ্রমন পিপাসুর তুলনায় এমনিতেই পর্যটন স্পটের সংখ্যা অনেক কম বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে। গুটি কয়েক পর্যটন স্পট থাকলেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণেরর অভাবে সেগুলো থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেকে। এরপরও চট্টগ্রামের ভ্রমন পিপাসু দর্শনার্থীদের সবচেয়ে প্রধান ও অন্যতম মনমুগ্ধকর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত।

    যেখানে রয়েছে সমুদ্রের বিশালতার সাথে দর্শনার্থীদের আলিঙ্গন করার সুযোগ। কাছ থেকে বিশালাকার সুর্যকে দেখার সুযোগও রয়েছে এ বিনোদন স্পটে। তবে নানা অযত্ন আর অবহেলা এবং কিছু দুশ্চরিত্রের ব্যবসায়িদের নানান অসামাজিক কার্যকলাপে আগ্রহ ও ইচ্ছা দুটোই হারিয়ে ফেলেছিল চট্টগ্রামের ভ্রমন পিপাসুরা। কমতে শুরু করেছিল দুর দুরান্ত থেকে আসা পর্যটকের সংখ্যাও। ভ্রান্ত ধারণা মনের মাঝে পুষণ করে ছুটির দিনেও বিনোদন হিসেবে টিভি ও মোবাইলের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই বেঁচে নিয়েছে অনেকে।

    না সব মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে আজ শুক্রবার সরেজমিনে পর্যটন স্পটটিতে গেলে। স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায় আজ ১৫ মার্চ শুক্রবার ছুটির দিনে। হবেই না কেনো? দর্শনাথী টানতে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পতেঙ্গা সৈকতকে আরো আকর্ষণীয় করে নতুন রূপে সাজিয়েছে সৈকতের তীর। বিশ্বমানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সৈকত জুড়ে করা হয়েছে শতকোটি টাকার উন্নয়ন। যেখানে পর্যটকদের হাঁটার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ওয়াক ওয়ে। তীর জুড়ে করা হয়েছে ফুলের বাগান। দর্শনার্থীদের জন্য বসানো হয়েছে ছোট-ছোট বিশ্রাম চেয়ার এবং নানা ধরনের রঙিন পাথর। চলছে শিশুদের জন্য রাইড নির্মাণের কাজ। সব মিলিয়ে আধুনিক ও নান্দনিকতার ছোঁয়ায় নতুন রূপে সেজেছে পতেঙ্গা সৈকত।

    আর তাইতো নতুন রূপে সাজা পতেঙ্গা সৈকতকে নতুনভাবে দেখতে ভিড় জমিয়েছে দর্শনার্থীরা। শুক্রবার ছুটির দিনে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সমুদ্রের বিশালতার মাঝে নিজেকে হারিয়ে দিতে সৈকতে ভিড় জমিয়েছে দর্শনার্থীরা। পরিবার-পরিজন, বন্ধু মহল আর প্রিয় মানুষকে নিয়ে দর্শনার্থীরা চষে বেড়াচ্ছে নতুন রূপে সাজা পতেঙ্গার বুক জুড়ে। দর্শনার্থীদের মাঝে কেউ কেউ হাঁটছেন নতুন তৈরি হওয়া ওয়াক ওয়েতে, কেউবা বিশ্রাম নিচ্ছে বিশ্রাম চেয়ারে, কেউবা আবার বাগানে ফোঁটা ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে দেখছেন সমুদ্রের বিশালতা।

    সৈকতে বেড়াতে এসে নিজেকে স্বার্থক বিনোদন প্রেমি উল্লেখ করে সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী শাহনাজ পারভিন জবা বলেন, অবৈধভাবে গড়ে তোলা মাদকসেবিদের আস্তানা উচ্ছেদ করে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে নবরুপে সাজানো হয়েছে শুনেছি বান্ধবীদের কাছে। আজ তা নিজেই প্রত্যক্ষ করেছি। সত্যি অসাধারণ অনুভুতি হয়েছে আজ এ বিনোদন স্পটটি পরিদর্শন করে। আমি মুগ্ধ।

    ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রোকন নামে এক ভ্রমন পিপাসু বলেন, আজ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে এসে দেখলাম স্মরণকালের সবচে বেশি পর্যটক ভিড় করেছে। যে ভিড়ের সিমানা সমুদ্র সৈকত ছাড়িয়ে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটারে ছুঁয়েছে। মুখ ফিরিয়ে নেয়া পর্যটকদের কিভাবে ফেরাতে হয় তা শুধু প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন। তিনি বলেন চট্টগ্রামের প্রতি দেশনেত্রী শেখ হাসিনার অধিক মায়া রয়েছে বলেই খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম।

    এদিকে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি পর্যটক আজ এক সাথে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ভিড় করায় ৩নং বন্দর গেইট হতে সি বিচ পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।আবার অনেক অবিভাবকে ভিড়ের মধ্যে তাদের ছোট বাচ্চা হারিয়ে এদিক সেদিক ছুটতেও দেখা গেছে।

    এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি উৎপল বড়ুয়া ছুটির দিনে উপচে পড়া ভিড়ে ছোট বাচ্চাদের না আনার জন্য পরামর্শ দেন দর্শনার্থীদের। তাছাড়া চট্টগ্রামসহ দেশের দুর দুরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় অধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি ট্যুরিষ্ট পুলিশসহ অতিরিক্ত আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান ওসি উৎপল বড়ুয়া।

    সন্ধার পর হতে মশার অতিরিক্ত উৎপাতের অভিযোগ করে বিদেশি পর্যটক রবাট ব্রেহাম বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি একটু দৃষ্টি দেন তাহলে বিশ্ববাসীর কাছে ভ্রমন উপযোগী একটি সমুদ্র সৈকতে রুপান্তর হবে।

    বিএম/রাজন/রাজীব সেন প্রিন্স…