মসজিদ, মন্দির,উপসনালয়ের বকেয়া বিল পরিশোধে কিস্তির সুবিধা দেওয়ার আহবান সুজনের

    চট্টগ্রাম মেইল : পবিত্র রমজান মাস সমাগত। এ মাসটি হচ্ছে মুসলমানদের জন্য ইবাদত বন্দেগীর মাস। তাই রমজান মাসে গতবারের মতো পুরো চট্টগ্রামে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বিউবো’র প্রধান প্রকৌশলী’র প্রতি আহবান জানিয়েছেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

    পাশাপাশি বকেয়া বিলের জন্য রমজান মাসে যেন কোন মসজিদের লাইন না কাটার অনুরোধ জানিয়ে মসজিদ, মন্দির কিংবা অন্যান্য উপসনালয়ে বকেয়া বিলগুলো সারচার্জমুক্ত করে কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তিনি প্রধান প্রকৌশলীর নিকট আহবান জানান।

    ২৪ এপ্রিল বুধবার সকাল ১১টায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম এর প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন এর সাথে তাঁর দফতরে বিশেষ মতবিনিময় কালে এ আহবান জানান সুজন।

    চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, নাগরিক উদ্যোগ জনগন এবং সরকারের সেবা সংস্থা সমূহের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করছে। এরই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সেবা সংস্থাসমূহের সাথে ধারাবাহিক মতবিনিময় এবং আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে নাগরিক উদ্যোগ।

    তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কার্যকরী দিকনির্দেশনায় বিদ্যুৎ বিভাগ সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে ফলতঃ লোড শেডিং এখন নেই বললেই চলে। এক সময় বিদ্যুৎ এর জন্য রাস্তা ঘাট অবরোধ করা হতো, বিদ্যুৎ অফিস ভাংচুর করা হতো। ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ে নিমজ্জিত থাকতো মানুষ। কলকারখানা, ব্যবসা বানিজ্য, উৎপাদন স্থবির হয়ে থাকতো বিদ্যুৎ এর অভাবে। শুধুমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একক জাদুকরী নেতৃত্বে সে সকল খবর আজ জাদুঘরে। শত প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে গিয়ে শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে বিদ্যুৎ উৎপাদন এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি ভাবে চট্টগ্রামেও বিদ্যুৎ বিভাগ জনগনের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বিধায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সকল স্তরের কর্মকতা এবং কর্মচারীদের তিনি ধন্যবাদ জানান।

    তিনি গতবছরের মত এবারও রমজান মাসে, বিশেষ করে ইফতার, তারাবী নামাজ এবং সেহেরীর সময় বিদ্যুৎ যেন ধর্মপ্রান মুসলমানদের ইবাদতে বাঁধা হয়ে না দাড়ায় সেজন্য বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

    তাছাড়া তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো চট্টগ্রামে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করে সরকারের উন্নয়নের সুফল জনগনের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করার আহবান জানান।

    বিউবো’র প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন আন্তরিকতার সাথে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনেন। তিনি প্রথমেই নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে বিদ্যুৎ ভবনে মতবিনিময় করতে আসায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

    তিনি বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একজন ক্ষুদ্র সেবক হিসেবে আমি জনগনের সেবা করতে পারছি সেটা আমার জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের। তবে একথা যথার্থই যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একক এবং বলিষ্ট পদক্ষেপের কারণে আজ দেশজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎসব শুরু হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। যার কারণে একদিকে যেমন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে এবং অন্যদিকে জনগনও নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে। তার মানেই দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

    একটি দেশের উন্নতি এবং সমৃদ্ধির জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ আবশ্যক এবং সেটা জনগনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। তিনি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একগুচ্ছ উন্নয়নের ফিরিস্তি এবং কর্মপরিকল্পনা নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দের নিকট উপস্থাপন করেন।

    তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগে বিদ্যুৎ এর সঞ্চালন লাইনগুলো ছিলো অনেক পুরানো। সাবষ্টেশন ছিল অপ্রতুল। প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যেতো। গ্রাহকগণ দিনের পর দিন ট্রান্সফরমারের অভাবে ভোগান্তিতে পড়তো। কিন্তু আজ বর্তমান সময়ে সে সমস্ত খবর নাই।

    চট্টগ্রামে ১৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১টি সাবষ্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে মানসম্মত বিদ্যুত সরবরাহের জন্য। সম্প্রতি ২৮০০ কোটি বরাদ্ধ করা হয়েছে আরো নতুন ২৫টি সাবষ্টেশন নির্মাণ করার জন্য। বিদ্যুৎ অফিসের গোডাউনে পর্যাপ্ত পরিমান মালামাল মজুদ রয়েছে। বিদ্যুতের পুল, ট্রান্সফরমার, তার এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি চাহিবা মাত্রই জনগনের নিকট সরবরাহ করা হচ্ছে।

    প্রচুর ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যুত অফিসের কর্মচারীরা দিনরাত জনগনকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সুফল থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হয় সেজন্য সদা সর্বদা সচেষ্ট বিদ্যুত বিভাগের আপামর কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

    তিনি আরো জানান রমজান মাসের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ইতিমধ্যে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। রমজানের পূর্বেই আমাদের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকান্ড আমরা সমাপ্ত করবো। ধর্মপ্রান মুসলমানদের ইবাদতে যাতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা না হয় সেজন্য ইফতার, তারাবী নামাজ এবং সেহেরীর সময় নিরিবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

    তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, প্রি-পেইড মিটার পুরোপুরি স্থাপন হয়ে গেলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে গ্রাহকরাও বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবে। তিনি গ্রাহকবৃন্দকে কোন প্রকার প্ররোচনায় প্ররোচিত না হওয়ারও আহবান জানান।

    তিনি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক শর্ট সাকির্টসৃষ্ট আগুন থেকে রক্ষা পেতে কলকারখানা, মার্কেট, বহুতল ভবন এবং বাসা বাড়ীতে মানসম্মত ইলেকট্রনিক সামগ্রী ব্যবহার করার অনুরোধ জানান।

    তিনি গ্রাহক ভোগান্তি নিরসনে গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ৩৭নং ওয়ার্ড আনন্দবাজার এলাকায় একটি নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপনের নির্দেশ দেন এবং এছাড়াও গ্রাহকদের বেশকিছু সমস্যার তাৎক্ষনিক সমাধান করেন।

    এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মোঃ ইমাম হোসেন, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রকৌশলী মোঃ মকবুল হোসেন, প্রকৌশলী বি.এম জাহাঙ্গীর, প্রকৌশলী শামসুল আলম, রাজনীতিবিদ হাজী মোঃ ইলিয়াছ, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব হাজী হোসেন কোম্পানী, আব্দুল আজিম, আব্দুর রহমান মিয়া, এজাহারুল হক, মোঃ কামাল উদ্দিন, মোরশেদ আলম, নুরুল কবির, হাজী শাহীন চৌধুরী, অধ্যক্ষ কামরুল হোসেন, সমীর মহাজন লিটন, সাইফুল্লাহ আনসারী, শেখ মামুনুর রশীদ, সফি আলম বাদশা, স্বরূপ দত্ত রাজু, রকিবুল আলম সাজ্জী, নগর ছাত্রলীগ সভাপতি এম. ইমরান আহমেদ ইমু, শেখ মহিউদ্দিন বাবু, তৌহিদুল ইসলাম, আব্দুল জাহেদ মনি, মনিরুল হক মুন্না, হাসান মুরাদ, শুভ চক্রবর্ত্তী, অংকন শীল, অনিক চক্রবর্ত্তী প্রমূখ।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…