রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিলম্ব, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতায়

    কক্সবাজার প্রতিনিধি : জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের জন্য মিয়ানমার দায়ী, সমাধানও মিয়ানমার থেকেই আসতে হবে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হচ্ছে। আরাকানে চলমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া অনিরাপদ। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথ আলোচনায় মানবাধিকার নিয়েই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে কাজ করছে জাতিসংঘ।

    শুক্রবার উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বিকেলে হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

    জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি সকালে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকোক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক এন্তোনিও ভিতোরিনোকে নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের ১১, ১৭ ও ১৮ ব্লক পরিদর্শনের পর তারা যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে মিলিত হন।

    প্রেস ব্রিফিংয়ে ফিলিপ্পো গ্রান্ডি আরও বলেন, প্রায় এক মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে গিয়ে স্থানীয়রা সব দিক দিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। স্থানীয়দের আবাসন ও চাষের জমি, বন, পাহাড় ও পরিবেশের চরম ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গারা ঝুপড়িতে থাকতে গিয়ে যেমন কষ্টে আছে, তেমনি তাদের কারণে স্থানীয়রাও দুর্ভোগে রয়েছে।

    তিনি বলেন, এতসব কষ্ট ভোগের বিনিময়ে বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয়দের মানবিকতার নজির বিশ্বময় প্রসংশিত হয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক কমিউনিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও এদেশের উদার মানবতার সঙ্গে আমরাও একাত্মতা ঘোষণা করছি।

    আন্তর্জাতিক তিন সংস্থার প্রধান রোহিঙ্গা ইস্যুতে বলেন, মিয়ানমার তাদের আদি গোষ্ঠী রোহিঙ্গার ওপর যে নিপীড়ন চালিয়েছে তা অমানবিক। সভ্য যুগে এটি কল্পনাও করা যায় না। আমরা এর নিন্দা জানাই।তারা বলেন, আমারা চাই রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাক। ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে তাদের সাথে কথা হয়েছে। তারাও (রোহিঙ্গারা) ফিরে যেতে চান। তবে, নাগরিকত্ব ও স্বাধীনভাবে মাথা উচুঁ করে থাকার নিশ্চয়তা নিয়ে ফিরতে চান তারা। এটি যৌক্তিক। আমরাও চাই তারা সেই অধিকার নিয়েই ফিরে যাক।

    গত বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মাঝে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। আমরা আশাবাদী ছিলাম, মিয়ানমার চুক্তিমতো কাজ করবে। কিন্তু তারা, এখন আরাকানে যে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে এতে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হবেই। রোহিঙ্গাদের ফিরেয়ে নিতে মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।

    রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ভাসানচরে নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন তৈরি করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু এটি যে নিরাপদ হবে এ বিষয়টি রোহিঙ্গারে কোনো মতেই বিশ্বাস করানো যাচ্ছে না। তাই তারা ওখানে স্থানান্তরিত হতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। এতে আইএনজিও বা ইউএন’র কোনো হাত নেই। আবার জোর করে তাদের ভাসানচরে পাঠানোর পক্ষেও নয়।

    এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির নেতৃত্বে প্রায় ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। কক্সবাজার পৌঁছে তারা প্রথমে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার। এরপর জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালামের সঙ্গে বৈঠক করেন।

    বিএম/ইসলাম/রাজীব…