চট্টগ্রাম মেইল : রোগীর জীবন বাঁচাতে খুবই কার্যকর একটি ইনজেকশানের নাম ইফিডিন (Ephidin)। অপারেশনের সময় রোগির জন্য খুবই জরুরী এ ঔষুধটি সম্প্রতি সরবরাহ বন্ধ রাখে গোনোসাসথিয়া ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ইফিডিনের উৎপাদনও হয় খুব সীমিত আকারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে ৮টি প্রতিষ্ঠান এ ঔষুধটি তৈরির তথ্য জানা গেলেও সম্প্রতি পপুলার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ‘ইফিডিন’ ইনজেকশানটি বাজারে বেশ সারা ফেলে। কিন্তু সেটিও বেশ কয়েক মাস ধরে মুনাফালোভী ঔষুধ বিক্রেতারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে সংকট সৃষ্টি করেছে। আর এদের চক্রান্তের ফাঁদে পড়ে পকেট ফাঁকা হচ্ছে রোগীর স্বজনদের।
জরুরি মুহুর্তে রোগীর স্বজনরা যখন নিরুপায় তখনই মুনাফা লোভী ফার্মেসী ব্যবসায়িরা সুযোগ বুঝে আকাশচুম্বী দাম হাঁকে এ ইনজেকশানের। মাত্র ২৫ টাকার ইনজেকশান হয়ে যায় তখন ১২ শ টাকা। বিশেষ করে অপরাশেন থিয়েটারে রোগির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে বেশি দাম দিয়ে হলেও কিনতে বাধ্য হচ্ছেন রোগির স্বজনরা।
এমনকি নাম পরিচয় গোপন রেখে এ ইনজেকশানটি রশিদমূলেও ৭শ টাকায় ক্রয় করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সম্মানিত সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন স্বল্প মূল্যের ইনজেকশানটি অধিক মূল্যে বিক্রি হওয়ার বিষয়টি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নজরে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে ওষুধটি বিষয়ে অনুসন্ধানকালে এর যথেষ্ট প্রমানও মেলে।
সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন ফার্মেসীতেও অভিযান চালিয়ে ৩শ হতে ৭শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অভিযানের পূর্বে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রশিদমূলে বেশ কয়েকটি ফার্মেসী থেকে তা কিনে নেন। সর্বশেষ রবিবার নগরীর তিনটি ফার্মেসীতে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানার পাশাপাশি তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এমন তথ্য জানান অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
রোববার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে তদারকিমূলক অভিযানকালে ২৫ টাকা মূল্যের ইনজেকশন ৩শ থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রির প্রমাণ পায়। অভিযানকালে অধিক দামে ওষুধ বিক্রি ও অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির দায়ে তিনটি ফার্মেসীকে জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ডবলমুরিং থানার মা ও শিশু হাসপাতাল ফার্মেসিকে ১০ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মুখে অবস্থিত বিসমিল্লাহ ফার্মেসিকে ২০ হাজার টাকা এবং জীবন ফার্মেসিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানের নের্তৃত্ব দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (মেট্রো) জনাব বিকাশ চন্দ্র দাস। জরিমানার পাশাপাশি সকল ঔষুধ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে দেন তিনি। এপিবিএন, ৯ এর সদস্যবৃন্দের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীতে কয়েকমাস থেকে ইফিডিন ইনজেকশান সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ইফিডিনের উৎপাদন খুব সীমিত আকারে করে থাকে। তারপরেও হাতে গোনা দু’একটি কোম্পানি ছাড়া এই ইনজেকশনের সাপ্লাই এখন নেই দাবী বিভিন্ন ফার্মেসী ব্যবসায়িদের।
অধিকাংশ ফার্মেসীতে জীবন রক্ষাকারী ঔষুধটি ক্রয় করতে গেলে প্রথমে নেই বললেও পরে ক্রেতার চাহিদাকে পুঁজি করে সংকট ও সরবরাহ কম দেখিয়ে ২৫ টাকার ঔষুধ বিক্রি করে ১২শ টাকা পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জীবন রক্ষাকারী ওষুধটি ব্যবহৃত হয় পোস্ট অপারেটিভ ড্রাগ হিসেবে। এক প্যাকেটে ১০টি ইঞ্জেকশন (অ্যাম্পুল) এর প্যাকেটের গায়ে খুচড়া মূল্য মাত্র ২৫০ টাকা লেখা থাকলেও প্রতিটি অ্যাম্পুল এর সর্বোচ্চ বিক্রয় হয়েছে ১২শ টাকা পর্যন্ত।
তিনি বলেন, যেহেতু ওষুধটিতে এমআরপি (সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য) ২৫ টাকা উল্লেখ আছে সেহেতু এটি বেশি দামে বিক্রয় করার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে একই অপরাধে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকবৃন্দ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং এটি অব্যহত থাকবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, ইফিডিন ইঞ্জেকশান মূলত সিভিয়ার অ্যাজমার রোগীকে প্রেসক্রাইব করা হয়। এছাড়া হাইপোটেনশন, ডায়াবেটিস রোগীদের সার্জিক্যাল ব্যথা কমানো এবং প্রেশার বৃদ্ধিতে প্রয়োগ করা হয়।
উচ্চ দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে রোগীর স্বজনদের থেকে মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ অনেক রোগী ও রোগীর স্বজনরা করেছে। এ বিষয়ে তিনি সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নজরদারি আরো বাড়ানোর তাগিদ দেন।
বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স