ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শহীদ মিনারে সুবীর নন্দীর মরদেহ,কালী মাতা মন্দিরে শেষকৃত্য

    বাংলা গানের ভুবনে বহু জনপ্রিয় গান উপহার দেওয়া কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন কফিনবন্দি হয়ে।

    অসংখ্য ডেইজি ও গাঁদা ফুলে সজ্জিত একটি মঞ্চ। যার চারপাশে রজনীগন্ধা ছড়ানো। তার মধ্যিখানে চুপ করে শুয়ে আছেন দেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী। ফুলে ফুলে ঢেকে আছেন তিনি। তাঁকে ঘিরে আছে রাজ্যের মানুষ!

    বুধবার সকাল থেকে এমন দৃশ্যই দেখা গেলো ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সাধারণত কোনো পূজা কিংবা আরতির সময় এমন আয়োজন দেখা যায় পুরান ঢাকার এই মন্দিরটিতে।

    ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ফুলেল শ্রদ্ধায় সুবীর নন্দী

    সহস্র মানুষের কাছে পূজনীয় সুবীর নন্দী। বাংলা চলচ্চিত্র ও আধুনিক বাংলা গানে তাঁর যে অবদান তা অস্বীকার করার ক্ষমতা কারো নেই। সেই সাথে তাঁর আচার-ব্যবহার ও বিনয়ের কারণে বাংলার স্রোতা দর্শকের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।

    বুধবার সকাল ৯টার দিকে গ্রীন রোডের বাসা থেকে ঢাকেশ্বরী নিয়ে আসা হয় সুবীর নন্দীকে। সেখানে নেয়ার পর ফুলে ফুলে ঢেকে দেয়া হয় তাঁর পুরো শরীর। এসময় তার পরিবারের সব সদস্যকেই দেখা গেছে। এখানে উপস্থিত ছিলেন তার নিকট আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য ভক্ত অনুরাগীরাও।

    মন্দিরে ফুলেল ভালবাসায় সুবীর নন্দী

    সকাল ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যাত্রা করে তাকে বহনকারী গাড়িটি।

    এ মুহূর্তে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়েছে সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীর মরদেহ।

    বুধবার সকাল ১১টায় সম্মলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শহীদ মিনারে আনা হয় সুবীর নন্দীর মরদেহ। যেখানে শেষ বারের মতো তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ।

    সংগীত, চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গুণী মানুষদের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকেও এসময় ফুল নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

    আগেই পরিবার থেকে বলা হয়েছিলো, বুধবার সকাল ১১টায় সব শ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সুবীর নন্দীর মরদেহ রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বেলা ১২টায় এফডিসি ও ১টা ৩০মিনিটে তাঁর মরদেহ রাখা হবে চ্যানেল আই কার্যালয়ের সামনে।

    আজ বিকেলে রাজধানীর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালী মাতা মন্দির ও শ্মশানে আজ তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

    গেল ১৪ এপ্রিল ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন সুবীর নন্দী। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে সুবীর নন্দীর চিকিৎসার জন্য ৩০ এপ্রিল সকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়।

    এক নজরে সুবীর নন্দী:
    সুবীর নন্দী, বাংলা সংগীত জগতের কিংবদন্তি নাম। ১৯৬৩ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নকালেই তিনি গান করতেন। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি সিলেট বেতারে গান করেন। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন গুরু বাবর আলী খান। লোকগানের ওস্তাদ ছিলেন বিদিত লাল দাস। সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন ১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে। দরদী কন্ঠের আধুনিক বাংলা গানের অবিস্মরণীয় এ কণ্ঠশিল্পী ৪৩ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গান গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য গান।

    চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে। এরপর থেকে তিনি অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন। ১৯৮১ সালে তার একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ডিস্কো রেকর্ডিং এর ব্যানারে বাজারে আসে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে তিনি যুগোস্লাভিয়া, ইংল্যান্ড, সুইডেন, আমেরিকা, আরব আমিরাত, জাপান, নেপাল ও ভারতে সংগীত পরিবেশন করেছেন। চলচ্চিত্রের সংগীতে অবদানের জন্য তিনি চার বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন (মহানায়ক ১৯৮৪, শুভদা ১৯৮৬, শ্রাবণ মেঘের দিন হাজার ১৯৯৯, মেঘের পরে মেঘ ২০০৪)। এছাড়া চার বার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন। শিল্পকলা- সংগীতে গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সুবীর নন্দীকে ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

    বিএম/রনী/রাজীব