ভেজালমুক্ত দেশ চাইলে ভেজালমুক্ত মানুষ চাই

    আমিনুল হক বাবু : ভেজাল,মূল্যবৃদ্ধি, অতিরিক্ত মুনাফা এগুলো সব একই সুত্রে গাথা। রমজানের চাঁদ উঠার আগে চাঁদ উঠে যেনো বাজারে, রমজানে যে সকল খাদ্যের চাহিদা থাকে সেগুলো পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও সেগুলোর মূল্যবৃদ্ধি আমাদের দেশে একটি স্বাভাবিক ঘটনা, আবার ভোক্তাদের মধ্যেও অতিরিক্ত খাদ্য এক সাথে কেনার একটা প্রবনতা মূল্যবৃদ্ধিকে তরান্বিত করে।

    বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বড় যে কোন উৎসবে মূল্য কমিয়ে বিক্রয় উৎসব ঘোষনা করে, থাকে মূল্য ছাড় এবং উপহারের ছড়াছড়ি। কিন্তু আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো।

    উৎসবকে ঘিরে করা হয় মুনাফা অর্জনের মূল টার্গেট,ব্যবসাতে মুনাফার দরকার কিন্তু তার মাত্রা বোধ হয় ছড়িয়ে যায় বাংলাদেশে, এ ভাবে মুনাফা করার পরেও বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ড গুলোর নামে যদি ভেজালের অভিযোগ উঠে সেটা কি মেনে নেওয়া যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ড এর ভোগ্যপণ্যে ভেজালের কারনে বাজার থেকে ঐ পণ্য সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌছে গেছে যে শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিতে বাধ্য হয়েছে।

    শুধু কি ভেজাল, ঈদকে সামনে রেখে কিছু কিছু কাপড় ব্যবসায়ীরা ক্রয় মূল্যের তিন থেকে পাচ গুন কিংবা তার চেয়ে ও বেশি মুনাফার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। উদাহরন হিসাবে বলা যায় সম্প্রতি একটি কাপড়ের দোকানে ২৫ হাজার টাকার শাড়ীর দাম ম্যাজিস্ট্রেট যাওয়ার পরে মাত্র পাচ হাজার টাকায় নামিয়ে আনে। বড় ব্র্যান্ড গুলোও পিছিয়ে নেই সেই দৌড়ে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেখানে মুসলমান সংখ্যা লঘিষ্ট সেখানে নামী দামি ব্রান্ড শপগুলো যেখানে পবিত্র রমজান তথা ঈদকে সামনে রেখে দাম কমানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে সেখানে আমাদের দেশে ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।

    রমজান মাসে ভেজাল বিরোধী অভিযানের তোড়জোড় চলার সময় আমরা বুঝতে পারি সারা বছর কি পরিমান ভেজাল আমরা ভক্ষন করি। ভেজাল খাওয়ার ফলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ নানাবিধ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। গ্যাস্ট্রিক নামক রোগের ঔষধ খেতে হয় না এমন সৌভাগ্যবান আমাদের দেশে বিরল। শুধু কি খাদ্য প্রসাধনী কিনতে যাবেন, সেখানে ও ভেজালের মহোৎসব। নাম সর্বস্ব কারখানায় বিদেশি স্টিকার লাগিয়ে তৈরি হয় প্রসাধনী, সে গুলো ব্যবহার করে মানুষ নানা ধরনের চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়।

    অধিকাংশ প্রসাধন সামগ্রীয় মোড়কে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ থাকে না। প্রসাধন সামগ্রীর আবার মেয়াদ থাকে না থাকেনা এ সম্পর্কে অনেকের কোন ধারনাই নেই।

    এহেন জঠিল একটি সময় আমরা পার করছি, খাদ্য অধিদফতর, ভোক্তা অধিকার কিংবা জেলা প্রশাসন সীমিত সাধ্যের মাঝে মাঝে একের পর এক অভিযান চালিয়ে চেষ্টা করছে এগুলো রোধ করার জন্য, কিন্ত এ গুলো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম, এ সকল অভিযান শুধু রমজানে নই সারা বছর জোরদার করতে হবে এবং অবশ্যই জোন ভাগ করে থানা পর্যায়ে মনিটরিং টিম নিয়োগ করতে হবে, অপরাধ করলেই শুধু জরিমানা নই প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিল এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি আপামর জনগণকে সচেতন হতে হবে।

    সচেতনতার কোন বিকল্প নাই। আমরা ভেজালমুক্ত দেশ পেতে হলে ভেজালমুক্ত মানুষ গড়ে তুলতে হবে।

    আমিনুল হক বাবু, মানবাধিকার সংগঠক ও লেখক