ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল চুরিতে সক্রিয় রোহিঙ্গা নারী : গ্রেফতার ২

    চট্টগ্রাম মেইল : ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহি বিপনী বিতান গুলোতে ইতিমধ্যে জমে উঠেছে ঈদ পোষাকের জমজমাট বিকিকিনি। সমাগমও বেড়েছে ক্রেতার। মার্কেটে আসা ক্রেতাদের অধিকাংশই নারী। এসব নারী ক্রেতাদের টাকা পয়সা ও মোবাইল রাখার অন্যতম সেফটি ব্যাংক তাদের ভ্যানিটি ব্যাগ।

    অন্যদিকে মার্কেটে ভিড়ের মাঝে নারীদের ভ্যানিটি ব্যাগের চেইন খুলে সুকৌশলে টাকা ও মোবাইল হাতিয়ে নিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা নারীরা। এদের পেছনে রয়েছে ঢাকা, বি-বাড়িয়া ও হবিগঞ্জ থেকে আসা কয়েকজন সক্রিয় পকেটমার ও নারী চোর। এমনই দুজন নারী চোরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে চোরাই ৫টি মোবাইল সেট।

    পুলিশ জানায় নগরীর ব্যস্ততম টেরিবাজার ও জহুর হকার্স মার্কেটে চুরি যাওয়া মোবাইল সেট উদ্ধারের পাশাপাশি চোর চক্রের ২ নারী সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গত দুইদিনে চট্টগ্রামের টেরিবাজার ও সিনেমা প্যালেস থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

    গ্রেফতারকৃতরা হলেন, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট পৌরসভার গণেশপুর ফকির বাড়ির মকবুল হোসেনের মেয়ে মোসাম্মৎ স্বপ্না (৩২) ও কক্সবাজারের হ্নীলা ইউপি সিরাজ চেয়ারম্যান এলাকার নয়াপাড়া মুচনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আব্দুল গফুরের মেয়ে নুর ফাতেমা প্রকাশ ফাতেমা বেগম (২০)। এরমধ্যে স্বপ্নার কাছ থেকে একটি ও ফাতেমার কাছ থেকে ৪টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করার তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

    কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে স্বপ্না পকেটমার বলে স্বীকার করেন। ঈদকে সামনে রেখে চুরির উদ্দ্যেশে হবিগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে এসে নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে বেড়ান। যেখানেই ভিড় দেখেন সেখানে অবস্থান করা নারী ক্রেতার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে সুকৌশলে নিমিষেই মোবাইল ও টাকা পয়সা হাওয়া করে দিতে সে বেশ পারদর্শী। তার সাথে ভ্যানিটি ব্যাগ চুরির কাজে যোগ দিয়েছে টেকনাফের হ্নীলা শরনার্থী শিবিরের ফাতেমা বেগম।

    ওসি মহসিন বলেন, গত ২৪ মে টেরী বাজার পুরাতন বক্সিরহাট পুলিশ ফাড়ীর গেইটের সামনে রাস্তার উপর এক নারী ক্রেতার ভ্যানিটি ব্যাগের চেইন খুলে ১২ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল সেট চুরির সময় জনতার হাতে ধরা পরে স্বপ্না। পরে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ স্বপ্নাকে গ্রেফতার করে। এ বিষয়ে মো. ইলিয়াছ নামে এক ব্যাক্তি বাদি হয়ে অভিযোগ দিতে এলে গ্রেফতার স্বপ্নার বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় গ্রেফতার স্বপ্নার বিরুদ্ধে গত ২০১৭ সালের ১৮ মার্চ ঢাকা সাভার থানায় আরো একটি মাদক আইনে মামলা রয়েছে।

    কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, গোপন তথ্য রয়েছে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বেশ কয়েকজন নারী চোর চট্টগ্রামের বিপনী বিতানগুলোতে অবস্থান করছে। পাশাপাশি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকেও কয়েকজন নারী শরণার্থী ঈদ বাজারকে টার্গেট করে চট্টগ্রামে এসেছে।

    গোপন খবরের এসব নারী চোরদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে পুলিশও বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে সাদা পোষাকে বিভিন্ন মার্কেটে অবস্থান নিয়েছে। এর ফলও মিলছে। ইতিমধ্যে গত কিছুদিনে বেশ কয়েকজন নারী চোরকে সনাক্ত করে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে চোরাই মোবাইলও উদ্ধার করা হয়েছে।

    তিনি জানান, শনিবার রাত ১২টার সময় নগরীর সিনেমা প্যালেসস্থ সৌদিয়া বাস কাউন্টারের সামনে সন্দেহজনকভাবে ঘুরাফেরা করতে দেখে পুলিশ ফাতেমা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী নারীকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে বিভিন্ন মার্কেটে মোবাইল চুরির তথ্য দেন। তার কাছ থেকে মোট চারটি চোরাই মোবাইল সেটও উদ্ধার করা হয়।

    এদিকে একইদন রাত দেড়টার সময় আকলিমা আক্তার আঁখি নামে এক নারী ক্রেতা তার মোবাইল চুরির অভিযোগ করতে থানায় এলে তার দেয়া তথ্যের সাথে গ্রেফতার নারী চোর ফাতেমা বেগমের তথ্য মিলে যায়। পরে চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনটি শনাক্ত করে ফোনটি সংগ্রহ করে নেন আঁখি।

    একইভাবে অপর এক নারী গত ১৬ মে চুরি হওয়া মোবাইল ফোনটি থানায় এসে সনাক্ত করে তা সংগ্রহ করার তথ্য জানিয়ে গ্রেফতার ফাতেমা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে বললেন পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।

    বিএম/রাজীব সেন..