দুর্দান্ত জয়ে বিশ্বকাপ শুরু টাইগারদের

    জয় দিয়েই স্বপ্ন আর সম্ভাবনার বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩৩০ রান আর সাকিব আল হাসানের মাইলফলক স্পর্শের দিনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টাইগাররা হারিয়েছে ২১ রানে।

    টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। শুরুতে সাবধানী ব্যাটিং করতে থাকেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। প্রোটিয়া পেসার লুঙ্গি এনজিডি আর কাগিসো রাবাদার কিছু বল সৌম্য সরকারের ব্যাটের কানা স্পর্শ করলেও বেঁচে যান তিনি। ধীরে ধীরে চড়াও হন সৌম্য সরকার। নিজের প্রথম ওভারে তামিম ইকবালকে ফিরিয়ে দিয়ে ৬০ রানের এ জুটি ভাঙেন আন্দিলে ফেহলুকায়ো। ১৬ রান করে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন তামিম।

    তামিমের বিদায়ের পর বেশীক্ষণ টিকেননি সৌম্য। পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন সৌম্য। তিনি খেলেন ৩০ বলে ৪২ রানের ইনিংস।

    এরপর সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমের ১৪২ রানের জুটিতে ভর করে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। তাদের দৃঢ়তায় বড় স্কোরের সম্ভাবনা জাগায় টাইগাররা। ৭৫ রান করে ইমরান তাহিরের বলে বোল্ড হন সাকিব। তার ইনিংস ছিল ৮ চার আর ১ ছক্কায় সাজানো।

    সেরা খেলোয়াড় সাকিব

    মুশফিক ও মোহাম্মদ মিঠুন যোগ করেন ২৫ রান। ২১ বলে ২১ রান করে ইমরান তাহিরের দ্বিতীয় শিকার হন মোহাম্মদ মিঠুন। চড়াও হতে গিয়ে আউট হন মুশফিকুর রহিম। অফ সাইডে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফেহলুকায়োর শিকার হন মুশফিক। ৮০ বলে ৭৮ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন তিনি।

    মুশফিককে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। কমে আসে রানের গতি। তবে শেষের দিকে দারুণ ব্যাটিং করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মোসাদ্দেক হোসেন। শেষ ৬ ওভারে রান হয় ৭০। ৪৯ তম ওভারে আউট হওয়া মোসাদ্দেক করেন ২০ বলে ২৬ রান। ৩ চার আর ১ ছক্কায় সাজানো ৩৩ বলে ৪৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩৩০ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ।

    প্রথম থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন বাংলাদেশের দুই বোলার মুস্তাফিজুর রহমান আর মেহেদি হাসান মিরাজ। রান নেওয়াটা খুব সহজ ছিল না দুই প্রোটিয়া ওপেনারের জন্য। হাশিম আমলার অনুপস্থিতিতে কুইন্টন ডি ককের সাথে ইনিংস সূচনা করতে মাঠে নামেন এইডেন মারক্রাম।

    জয়ে উল্লসিত টাইগাররা

    শুরু থেকে দারুণ লেন্থে বোলিং করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়াতে থাকেন দুই ওপেনার। তাদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে। মিরাজের বলে ডি ককের ক্যাচ মিস করেন মুশফিক। বলটি মুশফিকেকে পরাস্ত করে খানিক পেছনে গেলে রান নিতে চেষ্টা করেন ডি কক। সেই সুযোগ কাজে লাগান মুশফিক। সরাসরি থ্রো তে স্টাম্প ভাঙলে দলীয় ৪৯ রানের মাথায় ২৩ রান করে বিদায় নেন ডি কক।

    দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসকে সাথে নিয়ে হাল ধরেন এইডেন মারক্রাম। বেশ হাত খুলে খেলতে থাকেন ফাফ ডু প্লেসিস। বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তাজা নিজের প্রথম স্পেলে ছিলেন খরুচে। প্রথম তিন ওভারে হজম করেন তিন বাউন্ডারি।দারুণ ডেলিভারিতে মারক্রামকে বোল্ড করেন সাকিব। এ উইকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ২৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। দ্রুততম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৫ হাজার রান আর ২৫০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন তিনি।

    মারক্রাম আর ডু প্লেসিসের ৫৩ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। অসাধারণ ডেলিভারিতে বোল্ড করেন মারক্রামকে। ৫৬ বলে ৪৫ রান করেন তিনি। এরপর হাশিম আমলার বদলে ডাক পাওয়া ডেভিড মিলারকে সাথে নিয়ে ফাফ ডু প্লেসিস যোগ করেন ৪৫ রান। সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন ফাফ ডু প্লেসিস। বাংলাদেশের হুমকি হয়ে উঠা এ ব্যাটসম্যানকে ফেরান মেহেদি হাসান মিরাজ। তার অফ ব্রেক ডাউন দ্যা উইকেটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। করেন ৬২ রান।

    এরপর হাল ধরেন ডেভিড মিলার আর ফন ডার ডুসেন। মোসাদ্দেকের দারুণ এক ডেলিভারিতে ফন ডার ডুসেন পরাস্ত হলেও তা অল্পের জন্য আঘাত হানেনি স্টাম্পে। পরের ওভারে মুস্তাফিজুরের বলে ডেভিড মিলার থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ভুলের কারণে জীবন পান। ভাগ্যের সহায় নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন দুজন।

    ডেভিড মিলারকে নিজের পরের ওভারে ফেরান মুস্তাফিজ। পয়েন্টে দারুণ ক্যাচ নেন মিরাজ। ৪৩ বলে ৩৮ রান করে বিদায় নেন তিনি। জেপি ডুমিনিকে এলবিডব্লিউ করলেও তিনি বাঁচেন রিভিউ নিয়ে। মুস্তাফিজের ওপর চড়াও হন ফন ডার ডুসেন। এক ওভারে হাঁকান একটি চার আর ছক্কা। ভয়ঙ্কর হতে থাকা এ ক্রিকেটারকে ফেরান মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ৪১ রান করে বোল্ড হন তিনি। ঐ ওভারে উইকেট মেইডেন নেন সাইফুদ্দিন। এরপর আন্দিলো ফেহলুকায়োকেও ফিরিয়ে দেন তিনি। ক্যাচ তালুবন্দী করেন সাকিব।

    এরপর ক্রিস মরিস মুস্তাফিজের বলে ফুল্টাসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন সৌম্য সরকারের হাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ আশা ছিলেন জেপি ডুমিনি। শেষ চার ওভারে রান দরকার ছিল ৫৫। সাইফুদ্দিনের ওভারে দুই চার মারেন ডুমিনি। পরের ওভারেই মুস্তাফিজের বলে বোল্ড হন তিনি। নিভে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার আশার প্রদীপ। জয় তখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। অবশেষে ৩০৯ রান করতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

    সংক্ষিপ্ত স্কোর

    বাংলাদেশ ৩৩০/৬, ৫০ ওভার
    মুশফিক ৭৮, সাকিব ৭৫, রিয়াদ ৪৬, সৌম্য ৪২
    ফেহলুকায়ো ২/৫২, তাহির ২/৫৭, মরিস ২/৭৩

    দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০৯/৮, ৫০ ওভার
    ডু প্লেসিস ৬২, ডুমিনি ৪৫, মারক্রাম ৪৫
    মুস্তাফিজ ৩/৬৭, সাইফুদ্দিন ২/৫৭, সাকিব ১/৫০

    বিএম/রনী