ফিল্ডিংয়ের ব্যবধানেই টাইগারদের পরাজয়

    কিউইদের ছোট লক্ষ্য ছুঁড়ে দিলেও লড়াই করে হেরেছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের দিনে মাঝারি লক্ষ্য দাঁড় করানোর পর নিজেদের ভুল ফিল্ডিং বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে হারের বেদনায়। টাইগাররা ম্যাচ হেরেছে মাত্র ২ উইকেটের ব্যবধানে।

    কেনিংটন ওভালে বুধবার (৫ জুন) টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার দিচ্ছিলেন ভালো শুরুর ইঙ্গিতই। তামিমের ধীর ব্যাটিংয়ের বিপরীতে চড়াও হয়ে খেলছিলেন সৌম্য সরকার। তবে হঠাৎ ঘটে ছন্দপতন।

    চাপ সামলে চড়াও হওয়া সৌম্য নিজের মোকাবেলা করা ২৫তম বলে ২৫ রান করে বোল্ড হয়ে যান। দলীয় ৬০ রানে ফেরেন আরেক ওপেনার তামিম ইকবালও (৩৮ বলে ২৪)। এরপর অবশ্য প্রতিরোধ গড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন আগের ম্যাচের জয়ের দুই নায়ক সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম।

    তবে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন উইকেটে সেট হওয়া মুশফিক (৩৫ বলে ১৯)। সাকিব অবশ্য একপ্রান্ত আগলে রাখেন সযত্নে। মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গ উপভোগ করে তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের সপ্তম অর্ধ-শতক।

    তবে ক্যারিয়ারের ৪৪তম ফিফটির ইনিংসটি থামে ৬৪ রানে গিয়ে। বিদায়ের আগে ৬৮ বলের মোকাবেলায় হাঁকান ৭টি চার। সাকিবের বিদায়ে দায়িত্ব বর্তায় মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উপর। তবে কিউই পেসারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের চাপ সামলাতে পারেননি তারাও। মিথুন ২৬ (৩৩ বল) ও রিয়াদ ২০ (৪১ বল) রান করে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন।

    শেষদিকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন মারকুটে ব্যাটিংয়ে দলের সংগ্রহ নিয়ে যান আড়াইশর কাছাকাছি। ৩ চার ও ১টি ছক্কায় ২৩ বলে গড়া তার ২৯ রানের ইনিংসে ভর করে ৪৯.২ ওভারে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৪৪ রান। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে নবম ও দশম উইকেট হারানোয় আড়াইশ রান পূর্ণ করার সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ।

    নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ম্যাট হ্যানরি একাই শিকার করেন চারটি উইকেট। এছাড়া ট্রেন্ট বোল্ট দুটি এবং লক ফার্গুসন, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও মিচেল স্যান্টনার একটি করে উইকেট শিকার করেন।

    জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামা নিউজিল্যান্ডকে ইনিংসের ১১তম ওভারেই চেপে ধরার সুযোগ পেয়েছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। তবে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের বড় ধরনের ভুলে কেন উইলিয়ামসনকে রান আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। শেষদিকে ভালো ফিল্ডিং করলেও ইনিংসের শুরুর দিকের ভুল ফিল্ডিং বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরতে দেয়নি।

    সহজ লক্ষ্যে নামা কিউইরা দলীয় ৩৫ রানে হারায় ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে (১৪ বলে ২৫)। দলীয় ৫৫ রানে কলিন মুনরোও (৩৪ বলে ২৪) ফেরেন সাজঘরে। দুই ওপেনারকেই শিকার করেন সাকিব। দলীয় ৬১ রানে উইলিয়ামসন অবিশ্বাস্যভাবে জীবন পেলে দলের বিপর্যয় প্রতিরোধ গড়েন রস টেলরকে সঙ্গে নিয়ে।

    তৃতীয় উইকেটে উইলিয়ামসন ও টেলর গড়েন ১০৫ রানের জুটি। ৭২ বলে ৪০ রান করার পর উইলিয়ামসনকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫ বলের ব্যবধানে মিরাজ ফেরান টম লাথামকেও (০)। এতে ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা জাগে বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের রানে গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে গেলে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা টেলরকে ফেরান মোসাদ্দেক। তার আগে ৯১ বলের মোকাবেলায় ৯টি চারের সহায়তায় করেন ৮২ রান।

    ৪৩তম ওভারে ১৫ রান করা কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে সাজঘরে ফেরান সাইফউদ্দিন। পরের ওভারে উইকেটে সেট জিমি নিশামকে সাজঘরে ফেরান মোসাদ্দেক। শেষদিকে ম্যাট হেনরি সাজঘরে ফিরলেও ১৭ রানে অপরাজিত মিচেল স্যান্টনার দলের ২ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন ১৭ বল বাকি থাকতেই।

    বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন মিরাজ, সাকিব, সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেক। কিউইদের পেসাররা উজ্জ্বল থাকলেও বাংলাদেশের স্পিনাররাই ছিলেন বেশি সফল।

    শেষ ওভারে ২ উইকেট হাতে রেখেও ঐ ওভারের প্রথম দুই বলেই বাংলাদেশের অলআউট হয়ে যাওয়া, কিংবা ফিল্ডিংয়ে দুই দলের সুস্পষ্ট ব্যবধানই হয়ত হয়ে ছিল এই ম্যাচের নিয়ামক। রান আউট হাতছাড়া করে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হওয়া মুশফিক গ্র্যান্ডহোমকে দারুণ ক্যাচে সাজঘরে পাঠিয়ে প্রশংসারও দাবি রাখেন। দিনশেষে বাংলাদেশ হেরে গেলেও বিশ্বকাপে টাইগাররা যে মোটেও হেলাফেলার দল নয়, ছোট লক্ষ্য ছুঁড়েও দারুণ লড়াই করা ম্যাচটি প্রমাণ করে তাই।

    সংক্ষিপ্ত স্কোর

    টস: নিউজিল্যান্ড

    বাংলাদেশ ২৪৪ (৪৯.২ ওভার)
    সাকিব ৬৪, সাইফউদ্দিন ২৯ মিথুন ২৬, সৌম্য ২৫, রিয়াদ ২০
    হেনরি ৪৭/৪, বোল্ট ৪৪/২

    নিউজিল্যান্ড ২৪৮/৮ (৪৭.১ ওভার)
    টেলর ৮২, উইলিয়ামসন ৪০, গাপটিল ২৫
    মোসাদ্দেক ৩৩/২, সাইফউদ্দিন ৪১/২, সাকিব ৪৭/২, মিরাজ ৪৭/২

    সেরা খেলোয়াড় : রস টেলর

    ফল: নিউজিল্যান্ড ২ উইকেটে জয়ী।

    বিএম/এমআর