আজ পয়লা আষাঢ়। রূপময় ঋতু বর্ষার প্রথম দিন। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বর্ষা ঋতুর শুরুটা হবে আজ। আনুষ্ঠানিক ঋতু বর্ষার শুরু । বাংলায় আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষা ঋতু। বর্ষাকাল চলবে শ্রাবণের শেষ দিনটি পর্যন্ত।
বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরো কতো ফুলের সুবাস। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। উপচে পড়া পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি। রবী ঠাকুরের ভাষায়, “আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে… আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে…”
এবার বর্ষা যেন নিজেকে জানান দিয়েই এলো। স্বরূপেই আবির্ভূত হলো গরমের দাপটকে দমাতে। বৃষ্টি হচ্ছে ক’দিন ধরেই। নদীতে পানি উপচেপড়া। কোথাও বিপৎসীমা ছাড়িয়ে। আকাশেও মেঘের ঘনঘটা। নিম্নচাপ, ঝিরঝির বৃষ্টি জানিয়েই দিল সময়টা এখন তার। সময় এখন বর্ষার ।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবেগময় গান ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান; কিংবা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সেই ধ্রুপদী পঙিক্ত ‘গভীর গর্জন করে সদা জলধর/উথলিল নদ-নদী ধরনীর উপর’—মনে করিয়ে দিল আবারও সবুজ সমারোহে হাজির হয়েছে বর্ষাকাল।
ষড়ঋতুর এই দেশে আষাঢ়কে বলা হয় ঋতুর রানী। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নব যৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা…’। রবীন্দ্রনাথ ও মধুসূদনের মতো বর্ষার রূপ-ঐশ্বর্যে মোহিত অনেক কবিই বাংলা সাহিত্য ঋদ্ধ করেছেন।
চিরকালই আষাঢ় সাজে নানা রূপে। বৃষ্টিরধারায় নবতর জীবন আসে পুষ্প-বৃক্ষে, পত্রপল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে প্রকৃতির অবয়বে। নতুন সুরের বার্তা নিয়ে সবুজের সমারোহে আগমন বর্ষার।
বর্ষা বাঙালী জীবনে চিরকালই কামনার। আজও ফুরায়নি সে আবেদন। কারণ, বর্ষা মানেই সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরও কত ফুলের সুবাস। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। উপচেপড়া পুকুরে রঙিন হয়ে ফোঁটে পদ্ম, সে কেবলই বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি। আহা কত না মধুর এই বরষা। যদিও সে বর্ষা এখন কল্পনাতেই বেশি খুঁজে নিতে হয়।
ইতিহাস বলে এ সময় জলীয় বাষ্পবাহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুিম বায়ু সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় বর্ষায়। তাই চারপাশের পরিবেশ বদলে যায়। আসুন আমরা আজ মনটাকে ধুয়ে ফেলি প্রতিকী বর্ষার জলে। ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল’-এর ভুবনভুলানো হাসি মনে ধারণ করি ।
কী গ্রাম, কী নগর সর্বত্রই বর্ষার আগমনী বার্তা দেয় কদম। যেন একই কথার জানান দিতে পেখম মেলে ময়ূর। বৃষ্টির জল গায়ে নিয়ে নৃত্য করে।
রিমঝিম এ বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দে কাটে বাঙালীর শৈশব। স্কুলে যেতে যেতে কিংবা ফেরার পথে দুরন্ত কিশোরী আনন্দে গায়ে মাখে বৃষ্টির ফোঁটা। তুমুল বৃষ্টিতে গাঁয়ের ছেলেরা নেমে পড়ে ফুটবল নিয়ে। বর্ষার এই রূপ কখনো কি ভোলা যায়? বর্ষার সবই উপভোগ্য। আবার ভারি বর্ষণে, পাহাড়ি ঢলে গ্রামের পর গ্রাম যে ভাসিয়ে নেয় সেও বর্ষা! বন্যাকবলিত নিচু এলাকার মানুষ তাই আতঙ্কে পার করে বর্ষা। একই কারণে সারা বছরের অর্জন ফসল তলিয়ে যায়। শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়।
সুখ স্মৃতিগুলো মনে রেখেই প্রতিবছর বর্ষাকে বরণ করে নেয় বাঙালি। বিশেষ করে শহরে নগরে হরেক আয়োজনে চলে বর্ষা বন্দনা। প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীতে আজ বর্ষাবরণে নানা আয়োজন রয়েছে। বর্ষার রাগিনীতে বর্ষাকে বরণ করে নেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আজ অনেকেই মেতে উঠবেন বর্ষাবরণ উৎসবে।
বিএম/এমআর