ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের যাত্রা শুরু

    চট্টগ্রামের বহুল প্রত্যাশার বিশ্বমানের ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল আজ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে তার সেবা কার্যক্রম।

    শনিবার (১৫ জুন) সকাল ১০টায় এ হাসপাতাল উদ্বোধন করেন বিশ্বের খ্যাতনামা কার্ডিয়াক সার্জন, ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ডা. দেবী শেঠী।

    বাংলাদেশে এই প্রথম আন্তর্জাতিক মানের পরিকল্পিত স্বাস্থ্য সেবা চালু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও ভারতের নারায়ণা হেলথের চেয়ারম্যান ডা. দেবী প্রসাদ শেঠী।

    চিকিৎসা বিজ্ঞানকে মানবতার মুক্তিতে কাজে লাগিয়ে হয়ে ওঠা কিংবদন্তী ডা. দেবী প্রসাদ শেঠী বলেন, ‘ভালো চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া বাংলাদেশি মানুষের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ফলে এমন প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আমি আশাবাদী।’

    এ সময় তিনি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল বাংলাদেশের সঠিক উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নতুন সংযোজন বলে উল্লেখ করেন।

    ডা. শেঠী ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল পরিদর্শন করে অবকাঠামো আধুনিক যন্ত্রপাতির স্থাপনা এবং আনুষঙ্গিক থেকে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

    অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ( আই এইচ এল ) বোর্ড চেয়ারম্যান ও চিটাগাং আই ইনফারমারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স (সিইআইটিসি) ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান। তিনি তার স্বাগত বক্তব্যে হাসপাতালের কয়েকটি বিশেষ দিক তুলে ধরেন।

    তিনি বলেন, উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতায় বহুসংখ্যক রোগী বিদেশে যেতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের ও তাদের পরিবারকে আর্থিক শারীরিক এবং মানসিক চাপের মুখে পড়তে হয়। এমন অবস্থা থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে উন্নত বিশ্বের আদলে হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকার স্বল্পমূল্যে হাসপাতালের জন্য জায়গা দিয়ে কাজকে আরও সহজতর করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক সহযোগিতা প্রদান করে এবং কতিপয় বেসরকারি ব্যাংক সহযোগিতা প্রদান করে যার নেতৃত্বে ছিলেন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।

    তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালের এক ছাদের নিচে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা রয়েছে। বিত্তবান, মধ্যবিত্ত অসুস্থ থেকে শুরু করে সব ধরনের রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাবে শুধু চিকিৎসাসেবা নয় একজন রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করা পর্যন্ত হসপিটালিটি বিভাগের মাধ্যমে যাবতীয় সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া দক্ষ মানবসম্পদ ধরে লোকে চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনিশিয়ানের জন্য প্রশিক্ষণসহ আবাসিক ব্যবস্থা, অচল রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ চিকিৎসা সুবিধা, দূরবর্তী দর্শনার্থীদের থাকার সুবিধাসহ আবাসন সুযোগ রয়েছে। উন্নতমানের সার্বক্ষণিক জরুরি সেবা এবং ১৪টি মডিউলার অপারেশান থিয়েটার। রয়েছে ১৬টি নার্স স্টেশন ও ৬২টি কনস্যালটেন্ট রুমের বহির্বিভাগ। বিশ্বমানের ৬৪টি ক্রিটিকাল কেয়ার বেড (আইসিইউ ও সিসিইউ) এ হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। রয়েছে নবজাতকদের জন্য ৪৪ বেডের নিওনেটাল ইউনিট ও ৮টি পেডিয়াট্রিক আইসিইউ।’

    তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি সংস্থা এ হাসপাতালের মূল নকশা প্রণয়ন করেছে। একটি ইউরোপিয়ান কনস্যালটেন্ট গ্রুপ এ হাসপাতাল তৈরিতে কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে। হাসপাতালে রয়েছে হেলিপ্যাড। যে কোনো স্থান থেকে হেলিকপ্টারে করে রোগীকে হাসপাতালে আনা যাবে।’

    সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তাঁর বক্তব্যে এদেশের জনগণ ও রোগীদের পক্ষ থেকে ডা. দেবী শেঠীকে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ধন্যবাদ জানান।

    চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সাত একর জমির ওপর ৫টি ভবন নিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গায় এ দৃষ্টিনন্দন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চিকিৎসাসেবায় কর্তৃপক্ষ যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করি।

    নগরীর পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালের পাশে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল।

    এর হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসা থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রম ডা. দেবী শেঠীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। এই বিভাগের নাম দেয়া হয়েছে ইম্পেরিয়াল-নারায়ণা কার্ডিয়াক বিভাগ।

    আজ সকালে বিশেষ একটি ফ্লাইটে কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম আসেন ডা. দেবী শেঠী। সাথে তাঁর বড় পুত্র বিরেন শেঠীসহ হাসপাতালের একটি টিমও আছে। দুপুরে ডা. দেবী শেঠী ব্যাঙ্গালুরু ফিরে গেলেও তাঁর টিম থেকে যাবে চট্টগ্রামে।

    ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের বোর্ড মেম্বার ও সিইআইটিসি ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ মালেক বলেন, আমরা বহুদিন ধরে চট্টগ্রামে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবার অভাব বোধ করছিলাম। এখানে উন্নতমানের স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়ায় প্রতি বছরই হাজার হাজার মানুষ প্রতিবেশি দেশ ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে ছুটতেন। যেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষকে নানাভাবে হয়রানির শিকারও হতে হয়। আমরা মানুষের এই ভোগান্তির অবসান ঘটাতে চেয়েছি। আমরা চট্টগ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছি। এই হাসপাতালের মাধ্যমে আমরা চট্টগ্রামের অসুস্থ মানুষ এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য কাজ করবো।

    এম এ মালেক বলেন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল একেবারে নীরবে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবায় একটি বিপ্লব সাধন করেছে। এখানকার মানুষ আজ থেকে মানুষ সেই বিপ্লবেরই সুফল পাবেন।

    এ ছাড়া বক্তব্য দেন হাসপাতালের কমিশনিং কনসালটেন্ট এডলি হ্যানসন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদুল ফেরদৌস চৌধুরী।

    উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ প্রমুখ।

    বিএম/এমআর