ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা, ৩ নং সতর্ক সংকেত বহাল
    টানা বৃষ্টিতে ডুবলো চট্টগ্রাম নগর! সীমাহীন দুর্ভোগে শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষ

    চট্টগ্রাম মেইল : চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। গত শুক্রবার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সক্রিয় থাকায় শনিবার ভোর রাত থেকে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাবে বলে আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার রাত আর দিনে কখনো মুষল ধারে, আবার কখনো থেমে থেমে চলা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে হাটু থেকে কোমড় পানিতে।

    এতে যানবাহন চলাচল মারাত্মক ব্যহত হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও নিম্নআয়ের মানুষসহ নগরবাসী। জলাবদ্ধতায় এমন দুর্ভোগের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দায়ী করছে নগরবাসী। তাছাড়া যেসব এলাকায় মানুষ আগে জলাবদ্ধতা দেখেনি সেখানেও সড়ক ও ফুটপাত জুড়ে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে থাকতে দেখে ওয়াসাকেও দায়ী করছে কেউ কেউ।

    অন্যদিকে চট্টগ্রাম শহর জুড়ে বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতার স্বচিত্র ও ভিডিও চিত্র এখন শোভা পাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জনের টাইমলাইনে। কিছু কিছু গ্রুপে এসব ছবি আপলোড হলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় সাধারণ মানুষের মাঝে। রীতিমত ঝড় উঠেছে বিভিন্ন জনের মতামতে। মৌসুমি ডিঙ্গি নৌকার ব্যবসাও করতে আগ্রহী অনেকে।

    সোমবার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত নগরীর ওয়াসার মোড়, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ সিডিএ, হালিশহর, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুর, প্রবর্তক, পাথরঘাটা, কাতালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে নগরীর নিচু এলাকাগুলো পানিতে ডুবে গেছে।

    বিভিন্ন এলাকায় জমে থাকা পানিতে সিএনজি অটোরিকশাসহ বেশ কিছু গনপরিবহন বিকল হতে দেখা গেছে। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন চাকুরীজীবি, শিক্ষার্থী সহ নিম্ন আয়ের মানুষ। আবার কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা এতই বেশি যে কয়েক ঘন্টার দীর্ঘ যানজটে আটকে জনসাধারণ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

    টানা বৃষ্টিতেও চট্টগ্রাম নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রয়েছে। তবে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম।

    নগরীর বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল পরিদর্শণে সোমবার ভোর থেকেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর মাঠে রয়েছেন। সোমবার দুপুরে আগ্রাবাদ এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতার স্থানটি পরিদর্শণে গেলে কথা হয় ২১ নং জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের সাথে।

    তিনি জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে নগরীর কিছু এলাকাতে পানি জমে গেছে। সিটি কর্পোরেশর কর্মীরা নালা নদর্মা পরিস্কার করে দ্রুত পানি নিস্কাষনের জন্য বিরতিহীন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি আধা ঘন্টার জন্যও বৃষ্টি থেমে গেলে জমে থাকা সকল পানি সড়ক থেকে সরে যাবে।

    আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা বজলুর রশিদ জানান, সোমবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আগামী দুইদিন বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। এ কারণে সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রাখার কথা তিনি নিশ্চিত করেছেন।

    এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে খাদ্যশস্যসহ বৃষ্টিতে ভিজলে নষ্ট হয় এমন খোলা পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। তবে এনসিটি, সিসিটি ও জিসিবি বার্থের জাহাজে কনটেইনার হ্যান্ডলিং স্বাভাবিক রয়েছে।

    অন্যদিকে ভারী বর্ষনে পাহাড় ধ্বসের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামে পাহাড় বা ভূমি ধস মোকাবেলায় ও যে কোন দুর্ঘটনায় প্রানহানি এড়াতে জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে নিজ উদ্যোগে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে উল্লেখ করে গত দুদিনে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ২৫০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

    রেড ক্রিসেন্ট নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। মেডিকেল টিম গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…