ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড়

    ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৭ জন নারী-পুরুষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

    এসময় বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে এক নারী সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ করেছেন।

    তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ থাকে। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। মুসলমান উগ্রপন্থীরা জমি ছিনিয়ে নিয়েছে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন।

    তার এই অভিযোগ করা ভিডিওটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।

    বাংলাদেশের মানুষ ও বাংলাদেশ সরকারকে হেয় করে তার এই অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইতে থাকে।

    অনেকেই বলছেন, ওই নারী এমন বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। অনেকেই বলছেন, এমন মিথ্যা কথা তিনি কীভাবে বললেন।এই অভিযোগকে দেশের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র দাবি করে ওই মহিলার বিচারের দাবি জানিয়েছে নেটিজেনরা। সামাজিক মাধ্যমে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, এটা দেখি ঘষেটি বেগম। অপর একজন লিখেছেন, এটা কাদের চাল হতে পারে বুঝলাম না। আবার অনেকেই বলছেন, ট্রাম্পের করুণা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতেই তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন।

    বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রতীক এজাজ তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন, প্রিয়া সাহা, নিতান্তই ব্যক্তিস্বার্থের জন্য আপনার উচিত হয়নি দেশকে হেয় করা। দেশ ও দেশের মানুষকে এমনভাবে ছোট করা উচিত হয়নি আপনার। আপনি মিথ্যা বলেছেন। সম্পুর্ণ মিথ্যা। আপনাদের জন্য অমাদের অর্জন শেষবেলায় এসে নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের এগোতে কষ্ট হয়।

    বিশিষ্ট ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট মাহমুদল হাসান তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন, এই হিন্দু মহিলার অভিযোগ শুনেন! বাংলাদেশে নাকি ৩৭ মিলিয়ন, মানে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান গুম হয়ে আছে!!! কিভাবে মিথ্যা বলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বিচার দিচ্ছে সবাই দেখেন। এটা খুবই খারাপ কাজ করছে। আমি এই মহিলার অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ করছি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত এই অভিযোগের জবাব দেয়া দরকার প্রয়োজন মনে করছি।

    সিনিয়র সাংবাদিক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট শঙ্কর মিত্র লিখেন, প্রিয়া সাহা নামক যে মহিলা ট্রাম্পের কাছে বিচার দিয়েছেন গত মার্চ মাসে পিরোজপুরে সেই মহিলার পৈতৃক বাড়ি কিন্তু জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিলো। লুটপাট করা হয়েছিলো। তিনি কি কারণে ট্রাম্পের কাছে বিচার দিলেন বা এতোদূর যেতে পারলেন তা বোধগম্য নয়। অতীতে না হোক শেখ হাসিনার আমলে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নির্যাতনের বিচার হয়। নাসির নগর,রামু,নাটোরের ঘটনায় বিচার চলমান। প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে ট্রাস্পের কাছে বিচার দিলেন কেনো বুঝতে পারছি না।

    সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশিষ্ট অনলাইন এক্টিভিস্ট সুলতান মাহমুদ কনিক লিখেছেন, এই মহিলার কি এমন হয়েছিলো যে তাকে ট্রাম্প পর্যন্ত যেতে হলো? সে কি তার সমস্যার কথা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছিলো? আমি মনে করি দেশের বিরুদ্ধে এটা এক বিরাট ষড়যন্ত্র। এই মহিলাকে বিচারের আওতায় আনা হোক। বাংলাদেশে নাকি ৩৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি ৭০ লক্ষ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান গুম হয়ে গেছে.. বাংলাদেশের মুসলিম মৌলবাদীরা নাকি হিন্দুদের জায়গা জমি দখল ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে… প্রিয়া সাহা নামে এই ভদ্র মহিলা বিচার দিয়ে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এবং ট্রাম্পের সাহায্য কামনা করেছে।

    ভিডির নিচে কমেন্টে জাহিদুর রহমান লিখেন, ‘এই মহিলা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। সরকারের উচিত এই মহিলাসহ তার সাথের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা।’

    ‘এত বড় মিথ্যাচার! যারা আজ বাংলাদেশে চাকুরী থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই একটা অঘোষিত কোঠা পেয়ে গেছে, যারা আজকে এমপি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের বড় বড় জায়গায় আধিপত্য বিস্তার করেছে অথচ তারাই বলছে তারা নাকি বিচার পায় না, অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত! এটা দেশের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র।’ – মোবারক হোসেনের মন্তব্য।

    নাঈম হায়দার ভিডিওটি তার ওয়ালে শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেন, ‘ভাই শুধু এই মহিলার দোষ দিয়া লাভ নাই। কারন এইটা একটা নাটকের অংশ মাত্র। তারা সবাই এর সাথে জড়িত। তারা বাংলাদেশে কিছু একটা করার পরিকল্পনা করতাছে। আমেরিকা ভালো করেই জানে এই দেশের খবর।’

    ‘এটি একটি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। দেশের আইনে তার বিচার করা হোক।’ – লিখেছেন সুমন মুনশী।

    সাইয়্যেদ জহিরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বেশি সুখে আছে তো তাই খুশির ঠেলায় পাগলের অভিযোগ। হিন্দু সমাজ বাংলাদেশে এত সুখে থেকে এত সুবিধা ভোগ করে আরও বদনাম করে, যা এই সরকারের জন্য হুমকি।’

    বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাশেদুল আলম লিখেন, ‘এরা সব ইন্ডিয়ান রক্তের বংশধর, ওদের দেহটা এদেশে থাকলেও মনটা ইন্ডিয়ায় থাকে। ওর আব্বুরা ইন্ডিয়ায় মুসলিমদের উপর নির্যাতন করতেছে, আর …. মহিলা তার উল্টোটা প্রচার করতেছে।’

    উপজেলা ছাত্রলীগ কর্মী আলী মোজাম্মেল ওই নারীর নাগরিকত্ব বাতিল চেয়ে লিখেছেন, বাংলাদেশে তারসহ তার পরিবারের নাগরিকত্ব বাতিল করা হোক।

    নালিশকারী ওই নারীর পরিচয়:
    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পের কাছে ৩৭ মিলিয়ন সংখ্যালঘু বিলীন হওয়ার অভিযোগ তোলা সেই নারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। প্রিয়া সাহা নামের ওই নারী বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি এনজিও ‘শাড়ী’ এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্বরত আছেন। এছাড়া, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদেরও একজন সংঘটক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রিয়া সাহা।

    ট্রাম্পের কাছে নালিশে যা বললেন: ট্রাম্পের কাছে নালিশকারী প্রিয়া সাহা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বাঁচানোর জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ গুম হয়ে গেছে। দয়া করে, আমাদের বাংলাদেশিদের সাহায্য করেন! আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষজন আছে।

    আমার অনুরোধ, প্লিজ আমাদের সাহায্য করেন, আমরা আমাদের দেশ ছেড়ে যেতে চাই না। আমাদের শুধু ওখানে যেন থাকতে পারি সে সাহায্য করেন! আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি, তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি।’

    ট্রাম্প তখন প্রিয়া সাহার কাছে জানতে চান, কারা জমি নিয়ে গেছে? কারা বাড়ি ও জমি দখল করেছে?
    সাহা একটু ভেবে বলেন, মুসলমান উগ্রপন্থীরা। তারা সসবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে। ট্রাম্প মনোযোগ দিয়ে সাহার কথা শুনলেও আর কোনো জবাব দেননি। অন্য এক নারীর অভিযোগ শুনতে শুরু করেন।

    বিএম/এমআর