ডেঙ্গুতে চালকের স্ত্রীর মৃত্যু, এমপি পীর মিসবাহর আবেগঘন স্ট্যাটাস

    মাসুম দুই বাচ্চার মা হারানোর কান্না কোনভাবেই সহ্য করা যাচ্ছেনা।মা হারানোর কান্না আশপাশে বড় বেশী আঘাত করেছে। কবিরের দুই শিশু সন্তানের এই কান্না সবাইকে শোকার্ত করেছে।আমার গাড়ীর ড্রাইভার কবির।তার স্ত্রী আসমার হঠাৎ জ্বর এবং বমি হয়। তাকে ঢাকার ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়।

    ডাক্তাররা রক্ত পরীক্ষা করে ডেংগু সনাক্ত করেন।চিকিৎসা হচ্ছিল কয়েকদিন থেকে। আজ বিকেল সাড়ে পাচটায় তার মৃত্যু হয়। সে বাঁচতে পারেনি। সুস্থ হয়নি। ভর্তির পর থেকে ডাক্তাররা বলছিলেন কয়েককদিন পর ভাল হয়ে বাসায় চলে যেতে পারবে।গতকাল থেকে তার অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়।শরীরে পানি আসে।ব্লাড প্রেশার কমে যায়।গতরাতে কিছুটা উন্নতি হয়।

    আজ সকাল থেকে খারাপ।বিকেলে মৃত্যু।আসমার বয়স বেশী ছিলনা।পরিবার বলছে ৩০/৩১হবে।বড় মেয়ে আমার রোদশীর চেয়ে কিছু ছোট। ছেলে বিস্ময়ের কাছাকাছি। পড়াশুনায় বাচ্চারা ভাল।মা তাদের স্কুল -পড়াশুনার দায়িত্ব পালন করত। কবির সারাদিন আমার সাথেই থাকত। হয় সুনামগঞ্জ না হয় ঢাকায়।হাসপাতালে মায়ের নিরব দেহের সামনে তাদের আর কবিরের কান্না আশপাশে থাকা কোন মানুষ সহ্য করতে পারেনি।হঠাৎ এই ডেংগুতে তাদের মা চলে গেছে। এটা তারা মানবেই কিভাবে। কবির কিভাবে মেনে নেবে তার স্ত্রীর অকাল মৃত্যু। তার স্বজনরা চিৎকার করে কাঁদছে। সন্তানরা কাঁদছে। স্বামী কাঁদছে। ভাই-বোন মেনে নিতে পারছেনা এই মৃত্যু।

    ডেংগুতে হাসপাতাল রুগীতে পুর্ন।তাদের স্বজনদের এই মৃত্যু গভীর চিন্তায় ফেলেছে। তারা জানতে চাচ্ছেন।প্লাটিলেট আর প্রেশারের হিসেব।ডেংগুতে অনেকের মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। আজকেই শুনলাম এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর খবর। যারা মারা যাচ্ছেন তাদের স্বজনরা -সন্তানরা আসমার সন্তানদের মত স্বজনদের মত নিশ্চয় বিলাপ করছেন। এই মা হারানো সন্তানরা একদিন নিশ্চয় জানতে চাইবে আমার মা এর ডেংগু হয়েছিল কেন?সিটি করপোরেশনের মশা মারার ৫০কোটি টাকার ঔষধ কি হয়েছিল?

    সাংসদ পীর মিসবাহ’র ফেসবুক স্ট্যাটাস

    মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেংগুর প্রকোপ বেশী হয়।সবাই জানে।সিটি করপোরেশন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় সময়মত দায়িত্বপালন করলেন না কেন?রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন “কেউ বা মরে কথা বলে আবার কেউ বা মরে কথা না বলে। “মৃতের সংখ্য বাড়ছে।আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মৃতদের স্বজনরা কথা বলছেন। বিবেকবান মানুষরা কথা বলছেন।যাদের দায়িত্ব ছিল মশা নির্মুলের, মানুষের জীবন নিরাপদের, তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।কয়েকদিন আগেও ডেযগু নিয়ে দায়িত্বশীলরা তামাশা করেছেন।মৃত্যুর দায় তাদেরকে নিতে হবে। আসমার সন্তানদের মত, স্বজনদের মতই শুভ মানুষের দাবী সোচ্চার হচ্ছে।এর দায় তারা এড়াতে পারেননা।পারবেননা।ডেংগুর প্রকোপ বাড়ছে।মানুষ আতংকিত।আতংকের কারন আছে। ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েও আসমারা মুত্যুর কোলে ঢলে পরছে।আর যারা ঢাকার ভাসমান মানুষ তারা যখন আক্রান্ত হবেন।

    মফস্বলের জেলা -উপজেলায় যখন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে তখন ?অনেকে ডেংগু সনাক্তের আগেই মৃত্যুকে বরন করবে আবার অনেকে চিকিৎসার অভাবে। যারা দায়িত্বে ছিলেন এ টি কেমন কাজ করলেন আপনারা।অদ্ভুত আপনারা।এত মানুষের জীবন আপনাদের গুরুত্বে আসলনা। আসমার সন্তানদের মত মাসুম বাচ্চাদের বুকফাটা আর্তনাদ আপনাদের স্পর্শ করবে কি না জানিনা। সংবেদনশীল হলে দায়িত্বশীল হতেন। কাজেই আপনাদের স্পর্শ করবেনা।তবে আমার বিশ্বাস মা হারা শিশুদের বুকফাটা আহাজারী,বিলাপ আপনাদের অমঙ্গলই নিয়ে আসবে।নিশ্চয় এর প্রতিশোধ হবে। প্রকৃতির বিচার খুব কঠোরতরই হয়। ০২.০৮.১৯(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত)