চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে একযোগে পরিচছন্নতা অভিযান শুরু

    চট্টগ্রাম মেইল : ডেঙ্গুমুক্ত নগর গড়ার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো একযোগে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে পরিচছন্নতা অভিযান। বৃহস্পতিবার সকালে অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ আঙ্গিনায় ফগার মেশিনে মশার ওষুধ ছিটিয়ে এডিস মশার প্রজনন স্থান ধ্বংসের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দিনব্যাপি ক্রাশ প্রোগ্রাম উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন।

    এই উপলক্ষে প্রতিষ্ঠান মিলনায়তনে আয়োজিত সমাবেশে সিটি মেয়র বলেন চসিকের এই কর্মসূচির পাশাপাশি আমরা সবাই সামাজিক দায়িত্ব পালন করলে এডিস মশামুক্ত শহর গড়ে তোলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তিনি আরো বলেন দুই হাজার সালে কলিকাতা শহরে ডেঙ্গু রোগ মহামারি আকার ধরণ করেছিল। সেইদিন তারা ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহন করে। সেই কর্মসুচির সুফল পাচ্ছে আজ অর্থাৎ ১৯ বছর পর। বর্তমানে কলিকাতা শহরে কোনো ডেঙ্গু রোগী নেই বললে চলে।

    মেয়র বলেন আমরা বীরের জাতি, মাত্র নয়মাসে একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে পরাজিত করেছি। ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতা। শুধু তাই নয়,পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ গড়তেও সক্ষম হয়েছি আমরা। ডেঙ্গুমুক্ত নগর গড়ার লক্ষ্যে চসিকের আওতাধীন ৪১টি ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশন পরিচ্ছন্ন বিভাগের ৩৬৪৭ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং ৯২ জন সুপারভাইজার একযোগে নগরীর উম্মুক্ত স্থান, নালা-নর্দমা ও রাস্তাঘাটে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ গ্রহন করেছে ।

    এ পরিচ্ছন্ন অভিযান একদিনের জন্য সমীবদ্ধ নয় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, সারা বছর এডিস মশার প্রজনন স্থান ধ্বংসের জন্য কাজ করবে চসিক। মেয়র বলেন, এই কর্মসূচি সার্বিকভাবে তদারকী করবে ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ,সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এই পরিচ্ছন্ন কর্মসূচির সফলতা নির্ভর করবে নগরবাসীর সদিচ্ছা,সৎ মানসিকতা ও দায়িত্ববোধ। নিজেই সচেতন হবেন,অন্যদেরকেও সচেতন করবেন। তাই আপনার বাসা- বাড়ির ফুলের টব ,ফ্রিজের ট্রে ,এসির পানি তিন দিন পর পর ফেলে দেওয়ার আহবান সিটি মেয়রের।

    সিটি মেয়র বলেন যেদিন থেকে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে ,তখন থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এডিস মশার প্রজনন স্থান ধ্বংসের জন্য ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি নগরবাসীকে সচেতন করার নানান কর্মসূচি গ্রহন করে।

    চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান সবপ্রথম বিনামূল্যে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা শুরু করে। নগরীর বিভিন্ন সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান নিয়ে সমন্বয় সভার আয়োজন করে। এর উপর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। তাই নয়, নগরবাসীকে সচেতন করা লক্ষে স্থানীয় পত্রিকা সমূহে তিন সপ্তাহ ধরে বিজ্ঞাপন প্রচার করে চসিক। এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নগরবাসীকে ওয়ান টাইম কাপ ,প্লেট ,পাত্রে পানি যেন জমতে না পারে সেব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করে।

    তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিরাময়যোগ্য একটি রোগ। আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। জ্বর হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার নেই। আমরা সর্বোতোভাবে প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে এ নগরকে নিরাপদ রাখা যায়।

    বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ডেঙ্গু একটি বাস্তবতা। আগে ছিল,এখনো আছে। তবে শঙ্কা নয়, চাই সচেতনতা। সমস্যার মূলে আঘাত করতে হবে। আপনার টেবিলের নিচে, বাড়িতে, ছাদে এডিস মশা আছে। এই এডিস প্রজনন স্থল নির্মূল করতে হবে। এক্ষেত্রে ১ হাজার মানুষের জ্বর হলে ২ জনের ডেঙ্গু রোগ হতে পারে। ভরা পেটে প্যারাসিটামল, বেশি করে পানি, ফলের জুস খাবেন। তরল খাবার খাবেন। বিশ্রাম নেবেন। ব্যথার ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ এই চিকিৎসকের ।

    ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. তৈয়ব আলী ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, মশা পায়ে কামড়ায়। পায়ে মোজা থাকলে কামড়াতে পারবে না মশা। ক্লাবে বসে থাকলে পা নাড়াতে থাকবে। ইংলিশ কমোডের ঢাকনা দিয়ে আর সাধারণ কমোডের ওপর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ এই চিকিৎসকেরও।

    চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ বাচ্চু ,শৈবাল দাশ সুমন, তারেক সোলেয়মান সেলিম , অর্পণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য বিশিষ্ট সমাজসেবক এস.এম.সাইফুদ্দিন , চসিক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার সেলিম আকতার সেলিম চৌধুরী ,স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ আলী ,রাজনীতিক জামশেদুল আলম এবং অর্পণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ ,শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

    বিএম/রাজীব সেন..