স্কুল জীবনের প্রিয় শিক্ষক ইসহাক স্যারের বাসায় ড. হাছান মাহমুদ
    পায়ে ধরে সালাম করে ইসহাক স্যারকে কাঁদালেন তথ্যমন্ত্রী!

    চট্টগ্রাম মেইল : স্কুল জীবনের প্রিয় শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাক স্যারের খোঁজ নিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। চট্টগ্রামের সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৭৮ সালে এই স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করেন হাছান মাহমুদ। বয়সের ঘরে আশি বছর পাড় করা এই গুণী শিক্ষক ১৯৯৪ সালে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অবসর নেন।

    সময়ের পরিক্রমায় ড. হাছান মাহমুদ শুক্রবার তথ্যমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। রাষ্ট্রীয় নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে দিন-রাত ব্যস্ত থাকলেও ভুলতে পারেননি মুসলিম হাই স্কুল এবং প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতি।

    ভালোবাসার টানে শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় শৈশবের স্মৃতি জড়ানো বিদ্যাপীঠ মুসলিম হাই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাককে তাঁর বায়েজিদের বাসায় দেখতে যান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। প্রিয় ছাত্রকে পায়ে ধরে সালাম করতে দেখার সাথে সাথে চোখ ভিজে যায় প্রবীণ শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাকের। প্রিয় শিক্ষকের সান্নিধ্যে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তথ্যমন্ত্রীও। এসময় একই ব্যাচের শিক্ষার্থী জামাল নাসের চৌধুরী ও এস এম ইলিয়াছ দুলালও তথ্যমন্ত্রীর সাথে ছিলেন।

    ১৯৬৫ থেকে ৯৪ সাল পর্যন্ত মুসলিম হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন মোহাম্মদ ইসহাক। সর্বশেষ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকেই অবসর নেন তিনি। বহুদিন পর কাছে পেয়ে ড. হাছান মাহমুদের কাছে শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাক জানতে চান, তোমার সন্তান কয়জন ? মন্ত্রী জবাব দেন, ‘আমার এক ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে। মেয়ে একটা এ-লেভেলে পড়ছে।’ বলতেই শিক্ষক বলে উঠেন, ‘দেশের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ভালো। চট্টগ্রামে সবচেয়ে ভালো স্কুল হচ্ছে তিনটি- মুসলিম হাই, কলেজিয়েট ও খাস্তগীর।’

    প্রিয় শিক্ষকের কাছে তথ্যমন্ত্রী জানতে চান, এখন মুসলিম হাই স্কুলে পড়াশোনার মান কেমন? জবাব আসে, ‘খুবই ভালো। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়-এর মধ্যে থাকেই।

    প্রসঙ্গক্রমে প্রবীণ শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘উদারতার কোন বিকল্প নেই। আকাশসম উদারতা দেখাতে হবে।’ এসময় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজামকে প্রিয় সাংবাদিক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

    আলাপচারিতার সময় শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করেছি, আবার বৈরুতে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকেও ইংরেজিতে এমএ করেছি, এরপর শিক্ষকতায় এসেছি।’ এ সময় তথ্যমন্ত্রী বলে উঠেন, ‘স্যারের যোগ্যতা এত বেশী যে, শিক্ষকতায় না আসলে পাকিস্থানের সচিব হতেন।

    মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘আমি তো সেখানে (প্রশাসনের কর্মকর্তা) যাবো না বলে আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম।’ স্মৃতিচারণ করে তথ্যমন্ত্রী জানতে চান, স্যার আগে সাইকেল চালাতেন, এখনও কি চালান ?’ জবাবে বলেন, ‘অনেকদিন ধরে চালাই না।’

    প্রিয় শিক্ষকের সাথে স্কুল জীবনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, স্কুল জীবনে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ায় আপনি স্যার একবার আমার বাবাকে অভিযোগ দিয়ে বলেছিলেন আমি পড়ালেখার চেয়ে রাজনীতি নিয়ে ঘুরছি বেশি। এরপর বাবা আমাকে প্রচন্ড পিঠিয়েছিলেন। এসময় প্রিয় ছাত্রের স্মৃতি রোমন্থনে শিক্ষক মো. ইসহাক আবারো আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

    এসময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইসহাক স্যার সেসময়ে বাই সাইকেল নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতেন। স্যারের মতো গুণী শিক্ষকরা তাদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশে আলোকিত মানবসম্পদ উৎপাদনে অসামান্য অবদান রেখেছেন। স্যারের অসামান্য অবদান ভুলে যাবার নয়। এ গুণী শিক্ষক তাঁর সৃষ্টি ও কর্মের মধ্যে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন। তাদের ত্যাগ আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

    ফিরে যাওয়ার আগে আরেকবার প্রিয় শিক্ষকের পা ধরে সালাম করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাকও মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন তথ্যমন্ত্রীকে।

    বিএম/আরএসপি..