টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়কে ৫০ কিমি যানজট

    ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের শিকার হতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীদের।

    আজ শনিবার যানজট প্রায় ৫০ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। যানজটে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকায় মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন যাত্রীরা। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে চাপ বাড়লেও নির্বিঘ্নে পারাপার হচ্ছে মানুষ।

    গতকাল শুক্রবার থেকে এ যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে বিপাকে পড়েছে নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষ। শনিবারও ভোর থেকেই গাড়ি কখনও থেমে থেমে চলছে, কখনও আবার একেবারেই থেমে যাচ্ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত এ অবস্থা।

    এতে সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশুরা। টয়লেট, খাবার ও পানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন অনেক যাত্রী।

    পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শনিবার ভোর থেকেই মহাসড়কে গাড়ির অনেক চাপ বেড়েছে। মহাসড়কে টাঙ্গাইল অংশের ৬৫ কিলোমিটার সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশেল সাত শতাধিক সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।

    হাইওয়ে পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) সার্জেন্ট ইফতেখার নাসির রোকন জানান, এলেঙ্গা থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে।

    টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, গত ৮ তারিখ থেকে আজ ১০ তারিখ পর্যন্ত সেতুর টোল প্লাজা ১২ বার বন্ধ হয়েছে। সেতুর টোল আদায় বন্ধ থাকায় যানজট দীর্ঘ হয়েছে। এছাড়াও সেতুর পশ্চিম অংশের সিরাজগঞ্জ জেলার নলকা ব্রিজ, হাটিকুমরুল আর কড্ডা মোড় এলাকায় টানতে না পারার কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আজ বিকেলের মধ্যে এ মহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    তিনি আরো জানান, যানজট নিরসনে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের ৬৭০ জন পোশাকধারী পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ, র‌্যাব ও ১৯০ জন আনসার সদস্য কাজ করছে। এ যানজটের আরও একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। ঈদকে সামনে রেখে গাড়িগুলো সড়কে নেমে আসাসহ যত্রতত্র নষ্ট হয়ে সৃষ্টি করছে যানজট।

    বঙ্গবন্ধু সেতুর যানজটের সঙ্গে টোল আদায়ের সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন সেতুতে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল।

    তিনি গণমাধ্যমকে জানান, যানজটের কারণে প্রায়ই বঙ্গবন্ধু সেতুতে প্রবেশ করতে পারছে না যানবাহন। ফলে টোল আদায় বন্ধ থাকছে। যানবাহন সেতুতে এসে পৌঁছালে টোল আদায় করে তা পারাপারের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় পাশে প্রায় ৫০ কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মাঝে মাঝে যানজট ছাড়লেও খুবই ধীরগতিতে যান চলাচল করছে।

    এলেঙ্গায় যানজটের কারণ সম্পর্কে জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সাজেদুল ইসলাম বলেন, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় খানা-খন্দ হওয়ায় এ এলাকায় গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে।

    মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রায়েজুল ইসলাম জানান, শনিবার সকাল থেকে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কিছুটা কমেছে। মির্জাপুরে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

    অন্যদিকে, ঢাকা-আরিচা (পাটুরিয়া) মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকেই পুরো রাস্তা ছিল যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ। যা অব্যাহত আছে আজকেও। স্বাভাবিকের তুলনায় তিনগুন যানবাহনের কারণে মূলত এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ছোট গাড়ি। রাস্তার প্রসস্থতার তুলনায় অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরি ঘাট ৭০ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে কমপক্ষে ৫ ঘণ্টা সময় লাগছে প্রতিটি গাড়ির।

    এদিকে, পাটুরিয়া ঘাটে যানবহন প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। ঘাট কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় চার হাজার গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। ১৮টি ফেরি দিয়ে পারাপার করা হলেও অতিরিক্ত যানবাহনে জন্য ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময়।

    বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও যানজট নিরসনে র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।

    বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপারের রেকর্ড

    এবারের ঈদুল আজহায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক যানবাহন পারাপার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু কতৃপক্ষ।

    বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ হাজার ৩৩৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ ৪৩ হাজার ১৪০ টাকা। এর মধ্যে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী গাড়ির সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৩০৮টি আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী গাড়ি ছিল ১২ হাজার ১৩৯টি।

    বিএম/এমআর