সৈয়দপুরে গরু-মহিষের শিং-হাড়ের তৈরি বোতাম যাচ্ছে বিদেশে

    নীলফামারীর সৈয়দপুরে একটি কারখানায় গরু-মহিষের শিং ও হাঁড় থেকে উন্নতমানের বিভিন্ন রকমারি বোতাম তৈরি হচ্ছে।

    এগ্রো রিসোর্স কোম্পানি লিমিটেড নামের ওই কারখানায় গরু-মহিষের শিং ও হাঁড় প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে তৈরি এ সব বোতাম দেখতে আকর্ষণীয় এবং টেকেও অনেক দিন। আর বাহারি ডিজাইন ও নক্শার বোতাম রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

    কিন্তু বাংলাদেশ থেকে গরু-মহিষের শিং ও হাঁড় অবৈধভাবে পাচার হওয়ার কারণে কারখানাটি কাঁচামাল সংকটের সম্মূখীন হচ্ছে।

    কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিক

    এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

    কিন্তু অদ্যাবধি অবৈধভাবে গরু-মহিষের শিং ও হাঁড় পাচার বন্ধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।

    জানা যায়, বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরের কুন্দল এলাকায় বিগত ১৯৮০ সালে এগ্রো রিসোর্স কোম্পানী লিমিটেডের কারখানাটি গড়ে তোলা হয়।

    সে সময় মূলতঃ জবাইয়ের পর ফেলে দেওয়া গরু-মহিষের শিং ও হাঁড় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা থেকে গুঁড়া সার তৈরি করা হতো। আর এসব হাড়ের গুঁড়া সার কৃষকরা তাদের আবাদি জমিতে ব্যবহার করতেন। অবশ্য সে সময় থেকেই কারখানার হাঁড় ও শিংয়ের গুড়া সার বিদেশেও রপ্তানি করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।

    পরবর্তীতে এগ্রো রিসোর্স কোম্পানির কারখানাটিতে গরু-মহিষের শিং ও হাঁড় প্রক্রিয়াকরণ করে বিভিন্ন আকার ও সাইজের উন্নতমানের বোতাম তৈরি শুরু হয়। আর এ সময় বোতাম শার্ট, প্যান্ট, কোট, সাফারিসহ বিভিন্ন পোষাকে ব্যবহার করা হয়। দিন দিন প্রতিষ্ঠানটির তৈরি বোতামের চাহিদা বেড়ে যায়।

    এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের জন্য সৈয়দপুর শহরের বাইপাস সড়কে ও দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার দেবীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকায় পৃথক দুইটি কারখানা স্থাপন করা হয়। আর কারখানায় বিদেশ থেকে আমদনি করা বোতাম তৈরির অত্যাধুনিক সব মেশিনপত্র বসানো হয়েছে। কারখাানটিতে এ সব মেশিনের সাহায্যে গরু-মহিষের শিং ও হাঁড় থেকে উন্নতমানের বোতাম তৈরি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গরু-মহিষের শিং ও হাঁড় থেকে তৈরি করা হচ্ছে বাহারি নকশা ও ডিজাইনের চিরুনি ও শো-পিস।

    বর্তমানে কারখানা দুইটিতে সহস্রাধিক নারী পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন। কারখানায় তৈরি মালামাল রপ্তানির জন্য নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়া ছাড়াও ঢাকায় মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতিষ্ঠানের আলাদা আলাদা অফিসও খোলা হয়েছে।

    বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের কারখানায় তৈরি বিপুল পরিমাণ টাকার বোতাম চীন, অস্ট্রিয়া, হংকং, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

    এগ্রো রিসোর্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লায়ন মোঃ নজরুল ইসলাম। এর আগে তিনি দেশের অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি করে ১৯৯০ ও ১৯৯১ সালে পর পর দুই বার রপ্তানিখাতে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (সিআইপি) মর্যাদা লাভ করেন।

    প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম পারভেজ জানান, আগে গ্রামে গঞ্জে ও শহরে গরু-মহিষ জবাইয়ের পর সে সবের শিং ও হাঁড় ফেলে দেয়া হতো। কিন্তু এখন আর সে সব ফেলনা নয়। বর্তমানে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে গরু-মহিষের শিং ও হাঁড় সংগ্রহ করে তা থেকে বোতাম, চিরুনি তৈরি করে রপ্তানি করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন দেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে, তেমনি এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে।

    তিনি অভিযোগ করে বলেন, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দেশ থেকে অবৈধভাবে উন্নতমানের গরু-মহিষের শিং ও হাঁড় পাচার করছে। আর পাচার হওয়ার শিং ও হাঁড়ের মূল্য লেনদেন হচ্ছে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে।

    তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া যেমন রপ্তানি নিষিদ্ধ করে চাপড়াজাত পন্য রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। ঠিক তেমনি ভাবে গরু-মহিষের আস্ত শিং ও হাঁড় রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হোক। আর এ বিষয়টি আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

    বিএম/মনন