বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত: তথ্যমন্ত্রী

    তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জিয়াসহ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা কুশীলবদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পূর্ণ হবে না।’

    রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর, গণযোগাযোগ অধিদফতর এবং চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড আয়োজিত সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

    ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য কুশীলবদের বিচারের জন্য একটি কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার এখনো সম্পূর্ণ হয়নি, কারণ পলাতক খুনি ও বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কুশীলবদের বিচার এখনো হয়নি। এজন্য একটি কমিশন গঠন করে বিচার সম্পন্ন হলে সেটা ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদাহরণ হয়ে থাকবে’।

    এ সময় জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাবাস নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্য ‘বেগম জিয়া পাকিস্তানি সেনাদের কাছে যে সম্মান পেয়েছিলেন, এখন তাও পাচ্ছেন না’-এর প্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এমন মন্তব্যে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর কাউকে পানি খাওয়ানোর অপরাধেই পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করেছে, দুই লক্ষ সত্তর হাজার মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে, সেই পাকিস্তানি সেনারাই বেগম খালেদা জিয়াকে এতো খাতিরের কারণ কী? তদন্তের মাধ্যমে তা জানার চেষ্টা করা উচিৎ।’

    ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পরই ষড়যন্ত্রকারীরা ইতিহাস বিকৃতির পাঁয়তারা শুরু করে’ উল্লেখ করে উদাহরণস্বরূপ মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির একসময়ের নেতা সাদেক হোসেন খোকা বলেছিলেন, তিনি নাকি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বেতারে দেওয়া জিয়াউর রহমানের ঘোষণা শুনে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, যা সবটাই মিথ্যা।

    কারণ, চট্টগ্রাম বেতারের তখনকার সম্প্রচার আওতা ছিল ১০ কিলোওয়াট, যা কার্যত ছিল ৬ কিলোওয়াট। এখন তা ১০০ কিলোওয়াট হলেও চট্টগ্রামের বাইরে বেশি দূর তা শোনা যায় না।’

    স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে ড. হাছান মাহমুদ আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ হান্নান। তারপর তারা একজন সেনা অফিসার দিয়ে ঘোষণা পাঠ করানোর জন্য জিয়াকে দেন। প্রথমবার জিয়াউর রহমান ভুল পড়েন, পরে তা শুধরে আবার পাঠ করেন। তিনি সেটা চার দেয়ালের মধ্যে পাহারায় থেকে পাঠ করেছিলেন আর চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ অফিসের কর্মচারী নূরুল হক জীবন বাজি রেখে ২৬ মার্চ সারা চট্টগ্রাম শহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা রিকশায় মাইকিং করেছেন।’

    ‘স্কুলের পিয়ন ঘণ্টা বাজালে ছুটি হয়, তার মানে এই নয় যে ছুটি দেয়ার মালিক সে, তেমনি স্বাধীনতার ঘোষণাদানকারীর আর ঘোষণার পাঠকের পার্থক্যও না বোঝার কোনো কারণ নেই’, বলে উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।

    তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান তার বিশেষ আলোচকের ভাষণেও বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য ভূমিকার জন্য জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন।

    চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইসতাক হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় তথ্যসচিব আবদুল মালেক, গণযোগাযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. নিজামুল কবীর তাদের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোকপাত করেন।

    প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আজহারুল হক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহিন ইসলাম, ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক বিধান চন্দ্র কর্মকার, প্রেস কাউন্সিলের সচিব মো. শাহ আলম, তথ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান তথ্য অফিসার ফায়জুল হকসহ তথ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সভায় অংশ নেন।

    সভাশেষে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও অতিথিবর্গকে নিয়ে তথ্য ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।

    বিএম/এমআর