একনেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ১২ প্রকল্পের অনুমোদন

    জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৩ হাজার ৪৭০ কোটি ২০ লাখ টাকার ১২টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এই অর্থের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিলের (জিওবি) ৩ হাজার ১৬৩ কোটি ৫০ লাখ এবং প্রকল্প ঋণ ৩০৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

    মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

    কারও গাফিলতির জন্য কোনও প্রকল্পের ক্ষতি হলে শাস্তির বিধার করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার কথা সাংবাদিকদের জনান।

    পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “প্রথম সংশোধত প্রকল্প মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেকে ভোলা জেলার চরফ্যাশন পৌর শহর সংরক্ষণ আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রকল্পের একটা গাফিলতির বিষয় ছিল, এটার কী করেছেন। একই ব্যাক্তি যার ভুলের জন্য আমাদের এত ক্ষতি হলো তাকে শাস্তি না দিয়ে আবার প্রকল্প কাজে রাখলেন। তাকে আবার এখানে কাজে দিলেন। এটা তো ভালো কাজ নয় শাস্তির বিধান করতে হবে।”

    এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার পর উপস্থিত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিব তারা শাস্তির বিধানের জন্য যে সকল আইনানুগ প্রক্রিয়া আছে সেগুলো শুরু করবে বলে জানিয়েছেন।’

    গাফিলতি ধরা প্রকল্পের সম্পর্কে সাংবাদিকরা জনাতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ভোলা জেলার চরফ্যাশন পৌরসভার সংরক্ষণের জন্য একটি সংশোধিত প্রকল্প এসেছে। এখানে আরেকটি প্রকল্প অতীতে করা হয়েছিল, যেখানে গাফিলতি ছিল।’

    ‘এই ইঞ্জিনিয়ারের ভুলের জন্য আমাদের বহু ক্ষতি হয়েছিল ওই প্রকল্পে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয় নাই, টাকা এভরিথিং জলে গেছে। উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, একই লোক নাকি আবার এখানে ইঞ্জিনিয়ার! উনি বলেছেন, হাউ ইজ ইট পসিবল? তার ভুলের জন্য আমাদের এত বড় ক্ষতি হলো, তাকে তিরস্কার না করে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’

    এদিকে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেকে ভোলা জেলার চরফ্যাশন পৌর শহর সংরক্ষণ’ প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।

    একনেক সভায় মোট ১২টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১২ প্রকল্পে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৭০ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ১৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩০৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ করা হবে।

    স্লুইস গেট নিয়ে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কয়েকটি নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, স্লুইস গেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত প্রকাশ করেছে কয়েকরার। এটা মরিচা লাগে এরপর কাজে লাগে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এগুলো নির্মান করবেন না। সেখানে একেবারে প্রয়োজন সেটা করতে হলে বিশ্লেষণ করে করতে হবে। পথে ঘাটে সব জায়গায় স্লুইস গেট বানানো যাবে না।’

    এছারা খুলনায় লবণাক্ত এলাকায় ভবণ নিমামনের সময় সময় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থ্যা নেয়া; নতুন যে সব সরকারি অফিস বানানো হবে সেখানের ভবন নির্মানের সময় ডেকেয়ারের ব্যবস্থা রাখা; পর্যায়ক্রমে সারাদেশের বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচ দিয়ে করার নির্দেশনা।

    পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে সড়ক নির্মাণ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রকৃতিকে বাঁধা দিয়ে কিছু করা যাবে না। তাই এসব সড়কে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহের জন্য প্রচুর ব্রীজ বা কালভার্ট রাখতে হবে। তাছাড়া যেখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা যায় সেখানে সেটিই করতে হবে। কোনো এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হলে সেই প্রকল্পের সঙ্গে গাছ লগানোর জন্যও বরাদ্দ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে কোনো প্রকল্প প্রস্তাবে গাছ লাগানোর প্রস্তাব থাকলে তা কেটে না দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা কমিশনকে বলেছেন।’

    প্রধানমন্ত্রী দুটি কার্গো বিমান কেনার বিষয়ে চিন্তা করতে বলেছেন জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিভিত্তিক প্রকল্প অনুমোদনের সময় একথা আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবজি রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ বিমানকে দুটি কার্গো বিমান কেনার বিষয়ে চিন্তা করতে বলেছেন।’

    ‘কারণ, কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়েছে। অন্য বিমানে বেশি ভাড়া নিয়ে পাঠাতে হচ্ছে বলে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। দুটি কার্গো বিমান কিনলে অনেক কম খরচেই রপ্তানি করা যাবে। এছাড়া নভেম্বর মাসে আরও একটি ড্রিমলাইনার বিমান আসছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।’

    অনুমোদিত প্রকল্প গুলি হল : প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘জিএনএসএস করস্-এর নেটওয়ার্ক পরিধি সম্প্রসারণ এবং টাইডাল স্টেশন আধুনিকীকরণ’; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৩টি— ‘থানচি-রিমাকরি-মদক-লিকরি সড়ক নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’, ‘সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ-হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা-জলসুখা সড়কাংশ নির্মাণ’ ও ‘রাঙামাটি সড়ক বিভাগের অধীন পাহাড়ভূমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের বিভিন্ন কিলোমিটারে ড্রেনসহ স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ’; অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘খুলনা কর ভবন নির্মাণ’; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩টি— ‘মধুমতি-নবগঙ্গা উপ-প্রকল্প পুনর্বাসন ও নবগঙ্গা নদী পুনঃখনন ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবন ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা’, ‘মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে ভোলা জেলার চরফ্যাশন পৌর শহর সংরক্ষণ (প্রথম সংশোধিত)’ ও ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি থেকে ধরাভাঙ্গা এমপি বাঁধ পর্যন্ত মেঘনা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ’; কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুটি— ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নাটোর জেলার সেচ সম্প্রসারণ’ ও ‘কৃষি বিপণন অধিদফতর জোরদারকরণ’; মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বিশেষত নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের ‘ইএউবি-গভসিআইআরটির সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্প।

    সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এসডিজি’র মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

    বিএম