সেই জজ মিয়াই রয়ে গেলাম

    ২০০৪ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও হামলাকারী হিসেবে ফাঁসানো ক্যাসেট বিক্রেতা জজ মিয়ার দুঃখের অবসান হয়নি। সাজানো মামলায় পাঁচ বছর কারাগারে থাকার পর ২০০৯ সালে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু তাকে দেওয়া সরকারের প্রতিশ্রুতি এখনো রয়ে গেছে খাতা কলমেই।

    জজ মিয়া বলেছেন, আমাকে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। রিমান্ডের নামে সাজানো জবানবন্দি আদায়ে দীর্ঘ এক মাস ধরে আমার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। এত নির্যাতন সহ্য করার পরও আজ পর্যন্ত আমি এর কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। আগে যেই জজ মিয়া ছিলাম এখনো সেই জজ মিয়াই রয়ে গেলাম।

    পুলিশের নির্যাতনের বিষয়ে জজ মিয়া বলেন, প্রথমে আমাকে গ্রেনেড হামলার ভিডিওগুলো দেখানো হয় এবং বলে ভিডিওতে যেভাবে হামলা করা হয়েছে সেরকম জবানবন্দি দিতে। আমি মিথ্যা জবানবন্দি দিতে অস্বীকার করলে প্রথমে আমাকে অমানসিক নির্যাতন করে এবং পরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জবানবন্দি নেয়। সেখানে সিআইডির তিন জন কর্মকর্তা ছিলেন বলে জানান তিনি। তারা হলেন—এস এস রুহুল আমিন, এএসপি মুন্সী আতিক এবং এএসপি আবদুর রশিদ।

    নিজের পরিবার সম্পর্কে জজ মিয়া বলেন, ছেলের শোক এবং মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আঠারো মাস আগে তার মা জোবেদা বেগম মারা গেছেন। আগেই আমার মামলা চালানোর জন্য মা ভিটামাটি সব বিক্রি করে দিয়েছেন। টাকার অভাবে ঠিকমতো মায়ের চিকিত্সাও করতে পারিনি।

    বোন খুরশিদা বেগম ডিগ্রি পাশ করে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নার্সের চাকরি করেন। এছাড়া তার স্ত্রী সুপিয়া আক্তারও প্রাইভেট হাসপাতালে নার্সের চাকরি করেন। নিজের সম্পর্কে বলেন, আমাকে নিয়ে এত হইচই হলো; কিন্তু এখনো আমাকে প্রাইভেট কোম্পানির গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে।

    আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পুনর্বাসনসহ চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর পর গেছে আরও আট বছর। এখন তার বয়স ৩৮ হয়ে গেলেও প্রতিশ্রুত চাকরির দেখা পাননি জজ মিয়া।

    এতো নির্যাতন সহ্য করার পরেও কেন কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি—এ বিষয়ে বলেন, অনেকেই অনেক রকম আশ্বাস দিয়েছেন; কিন্তু ১৪-১৫ বছরেও কেউ আজ পর্যন্ত আমার জন্য কিছুই করেননি। সবাই শুধু আশ্বাস দিয়েই দায়মুক্ত হয়ে যায়। আমি চাই আমার যারা ক্ষতি করেছে তারা যেনো এর উপযুক্ত শাস্তি পায়। পাশাপাশি আমি যেন সব মানসিক যন্ত্রণা ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারি। তার জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই।

    বিএম…