স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও প্রশাসনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে রোহিঙ্গারা
    রোহিঙ্গাদের শরণার্থী জীবনের দু’বছর, দাবি আদায়ে সমাবেশ

    ইসলাম মাহমুদ,কক্সবাজার প্রতিনিধি : ২০১৭ সালের এই দিনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। শরণার্থী জীবনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল রবিবার সকাল ৯টার দিকে উখিয়ার মধুরছড়া এক্সটেনশন-৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের খোলা মাঠে সমাবেশ করেছেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা ।

    এ সময় শরণার্থীরা মিয়ানমারের রাখাইনে সংগঠিত গণহত্যা, ধর্ষণ ও বর্বর নির্যাতনের বিচার চান। ‘আমরাা বাংলাদেশে নয়, রাখাইনে থাকতে চাই’, ‘আমরা আমাদের দেশের নাগরিকত্ব চাই’ বলে স্লোগান দেন তারা। এসময় ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা উপস্থিত ছিলেন।

    সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’র চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ, মাস্টার আবদুর রহিম, মৌলভী ছৈয়দ উল্লাহ ও রোহিঙ্গা নারী নেত্রী হামিদা বেগমসহ অনেকেই।

    সমাবেশে বক্তারা গত ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যা, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতন এবং জড়িত সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী মগদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবি জানান। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরার আকুতি জানান।

    এজন্য বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক মর্যাদাসহ দাবিকৃত পাঁচটি শর্ত মেনে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকারকে জোরালোভাবে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান। এজন্য মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সংলাপ (ডায়ালগ) চলমান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পরে আল্লাহ’র দরবারে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

    এর আগে সকাল থেকে দলে দলে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও নানা স্লোগান নিয়ে সমাবেশে যোগদান করেন রোহিঙ্গারা। নানা স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা। এছাড়া উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের উনচিপ্রাংসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাখাইনে সংগঠিত গণহত্যার বিচারের দাবিতে সমাবেশ হয়েছে। ওই সমাবেশগুলোতেও নাগরিকত্ব এবং ভিটেমাটি ফিরিয়ে দিয়ে প্রত্যাবাসনের দাবি জানানো হয়।

    ক্যাম্পের অভ্যন্তরে পূর্ব থেকে ঘোষণা দিয়ে এরকম বিক্ষোভ সমাবেশ করায় স্থানীয় জনগণ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

    এবিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম এনডিসি (অতিরিক্ত সচিব) জানান ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা শরণাৃর্থীদের জন্য একটা কঠিন দিন। এ দিনে তারা তো একটা সমাবেশ করতেই পারে। এজন্য কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে।

    এবিষয়ে উখিয়ার গণমাধ্যম কর্মী নুর মোহাম্মদ সিকদার, রফিকুল ইসলাম ও গফুর মিয়া চৌধুরী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ করার অনুমতি দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন-এ ধরনের সমাবেশের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আরো ভয়ংকর, মারমুখী ও হিংস্র হয়ে উঠবে। যেটা স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও প্রশাসনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

    তারা রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান। এ ছাড়া উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ আগামী ৩১ আগস্ট শনিবার দ্রুত রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসনের দাবীতে উখিয়া স্টেশন চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।