আমাজন সুরক্ষায় সাত দেশ চুক্তিবদ্ধ

    পৃথিবীর বৃহত্তম ট্রপিক্যাল বনাঞ্চল আমাজন রক্ষায় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দক্ষিণ আমেরিকার সাতটি দেশ।

    আমাজনে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনায় বৈশ্বিক উদ্বেগের মধ্যেই এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।

    এই সাতটি দেশ হলো—ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গুয়ানা, পেরু ও সুরিনাম।

    এই চুক্তির আওতায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাজনের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে।

    কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিতে আমাজনের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্বনায়নের বিষয়ে কাজ করতেও সম্মত হয় দেশগুলো।

    এ বছর আমাজন রেইনফরেস্টে ৮০ হাজারের বেশিবার দাবানল লাগার ঘটনা ঘটেছে।

    কলম্বিয়ার লেটিসিয়া শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইভান ডুকে বলেন, ‘আমাজন নামের সম্পদ যে দেশগুলোর অংশ, এ বৈঠক সেসব দেশের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবে।’

    এ ছাড়া পেরুর প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভিজকারা বলেন, ‘(আমাজনের) মঙ্গল কামনা করা আর যথেষ্ট নয়।’

    আমাজনে দুর্যোগ মোকাবিলায় সেখানে বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্ঠিদের ভূমিকা বাড়ানো ও তাঁদের শিক্ষাদানে আরো প্রচেষ্টার বিষয়েও একমত হয় সাতটি দেশ।

    সাত দেশের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন দেশগুলোর ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রীরা।

    তবে শারীরিক অসুবিধার কারণে সম্মেলনে যাননি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো।

    ভিডিওলিঙ্কের মাধ্যমে তিনি সম্মেলনে অংশ নেন।
    পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরই উৎস আমাজন। বিশ্বের বৃহত্তম এই রেইনফরেস্ট বিপুল পরিমাণ কার্বন জমা রেখে বৈশ্বিক উষ্ণতার গতিকে খানিকটা শ্লথ রেখেছে।

    যে কারণে আমাজনের আরেক নাম ‘পৃথিবীর ফুসফুস’।

    বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চল আমাজনের মোট আয়তনের প্রায় ৬০ শতাংশই ব্রাজিলে অবস্থিত। তবে আগুনের রুদ্রমূর্তি কেবল ব্রাজিল অংশের আমাজনে নয়, বরং লাতিন আমেরিকার অন্য দেশগুলোও দেখছে। ভেনেজুয়েলার আমাজনে এ বছর ২৬ হাজারেরও বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বলিভিয়া অংশে ১৭ হাজারেরও বেশিবার আগুন লেগেছে। কলম্বিয়াতেও আগুন লেগেছে ১৪ হাজারের বেশিবার।

    ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানিয়েছিল, এ বছরের প্রথম আট মাসে আমাজনে ৭৫ হাজারের বেশি দাবানলের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।

    এর মধ্যে আগস্টের এক সপ্তাহেই ১০ হাজারটি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের তুলনায় দাবানলের সংখ্যা বেড়েছে ৮৫ শতাংশ। গত বছর প্রায় ৪০ হাজারটি দাবানলের ঘটনা রেকর্ড করা হয়। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

    আমাজনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। এর আগে অগ্নিকাণ্ডের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে (এনজিও) দায়ী করেন তিনি। যেসব এনজিওর তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে আমাজনে আগুন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রেসিডেন্ট। তবে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

    পরিবেশবিদরা বলছেন, বোলসোনারোর নীতিগত ত্রুটির কারণে এ বছর আগুনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর কৃষিকাজ ও খনিজশিল্পের জন্য বনাঞ্চল বর্ধনের প্রতিশ্রুতি দেন বোলসোনারো। তাঁর এ উদ্যোগের ফলে বন উজাড় হয়ে যেতে পারে—আন্তর্জাতিক মহলের এমন উদ্বেগ তিনি উপেক্ষা করে গেছেন। এরপর থেকে দাবানলের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

    এদিকে, ব্রাজিলের শীর্ষস্থানীয় মাংস রপ্তানি শিল্প গোষ্ঠী এবং কৃষি ব্যবসায়ীরা পরিবেশবাদী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। আমাজন বন উজাড় বন্ধ করতে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

    আমাজনকে গবাদিপশুর চারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করতে চাওয়া কৃষকেরা জায়গা পরিষ্কার করতে শুকনো মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করেন। এ সময় বন দাহ্য হয়ে থাকে এবং খুব সহজেই তাতে আগুন লাগে। বোলসোনারো কাঠুরে ও কৃষকদের জমি সাফ করতে উৎসাহিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদীরা। এর প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা দেশ ব্রাজিল থেকে চামড়া ক্রয় স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

    বিএম/এমআর