চবির রাজনীতি : আতংকে শিবির, গ্রুপিংয়ে ছাত্রলীগ

    রাব্বি আদিভ, চবি প্রতিনিধি : ১৯৬৬ সাল থেকে চবিতে যত ধরনের অপ্রীতিকর রাজনৈতিক সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে তার মূলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্ধন যুগিয়েছে ইসলামী ছাত্র শিবির। চবিতে আতংকের আরেক নাম শিবির।

    স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত চবিতে শিবির বলয় এমনিতে গড়ে ওঠেনি। এই সংগঠনটি এখানে দুর্গ গড়তে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সহযোগিতা পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আশেপাশের এলাকার কিছু ব্যক্তির সহযোগিতার ফলে শিবিরের এ বলয় গড়ে তুলা সম্ভব হয়েছে।

    চট্টগ্রামে যেমন অনেক বাঘা বাঘা আওয়ামী লীগ নেতা রয়েছে, তেমন এক সময় এ স্থানটি বিএনপির দুর্গ ছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, এই নিষিদ্ধ দলটিকে ১৯৭৭ সালে মেজর জিয়াউর রহমান রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে যে ভুলটি করেছেন দেশবাসী এখন তা হাড়ে হাড়ে উপলদ্ধি করতে পারছে। এই সুযোগ পাওয়ার পর থেকে চবিতে ছাত্রদলের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।

    চারদলীয় জোট ক্ষমতা থাকার পরও আধিপত্য বিস্তার করেছে শিবির। শিবিরের ছাত্রদলের অবস্থাটা বুঝায় জন্য বোয়াল মাছের কাছে পুঁটি মাছের অবস্থার দৃশ্য দেখলে তা উপলদ্ধি করতে পারবেন। চবিতে শিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে অনেকেই নিহত হয়েছে। শিবিরের মধ্যে যারা নিহত হয়েছে তারা আবার শহীদের মর্যাদা পেয়েছে। ধর্মকে পুঁজি করে যাদের রাজনীতি গড়ে ওঠেছে তাদের কাছে শহীদ হওয়ার শর্তটা ভিন্নরকম।

    চবির শুরুতে যারা ছাত্রলীগের প্রকৃত অভিভাবক ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলেন আলহাজ্ব মামুনুর রশীদ মামুন। তার বলিষ্ঠ রাজনৈতিক চেতনা এখনো পর্যন্ত চবি ছাত্রলীগের মধ্যে বিরাজমান। তিনি ছিলেন দুঃসময়ের দলের কান্ডারী। এরূপ তেজদীপ্ত বর্ষীয়ান নেতা নেতা চট্টগ্রামে আর জন্ম নিবে কিনা তা আমার সন্দেহ।

    চবিতে শিবির বলয় গড়ে উঠার একটি অন্যতম কারণ হল ছাত্রলীগের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গ্রুপিং। কিছু ছাত্রলীগ নামধারী ছেলেদের জন্য এই দুর্নাম ছাত্রলীগের উপর পড়ছে। চবিতে ছাত্রলীগের অনেক গঠনমূলক কাজ রয়েছে যা তুচ্ছ করে দেখার বিষয় নয়।

    শিবিরের কর্মী সংগ্রহের পদ্ধতি : নতুন কর্মীকে দলে ভিড়ানোর জন্য ইসলামী ছাত্রশিবির বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। চবিতে যারা ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে তাদেরকে প্রথমে থাকার ব্যবস্থা করে এবং এদের সাথে পরীক্ষার পূর্বের রাত্রে M.C.Q পরীক্ষা নেওয়ার নাম করে দলীয় প্রচারণা চালায়। পরবর্তীতে এসব পরীক্ষার্থীদের ফলাফল জানিয়ে ভর্তি সংক্রান্ত কাজে সহযোগীতার আশ্বাস দেয়।

    ভর্তির কাজে যাদের সাহায্য করা হয় তাদেরকে হলে থাকার প্ররোচনা দেয়। কিন্তু এই প্ররোচনার ফাঁদে পা দেয় কতিপয় অভাবী ছাত্র। এই নতুন ছাত্রগুলো হলে জায়গা পায় কারণ যারা ইতিমধ্যে কর্মী হয়েছে তারা ছিট ছেড়ে দিয়ে নবাগতদের জায়গা করে দিয়ে কর্মী বানায়। তাছাড়া পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে একে অপরকে সাহায্য করে নতুন কর্মী তৈরী করে।

    তাছাড়া এমনো নজির রয়েছে চবির পাশের গ্রাম জোবরাতে একটি পাড়ার মধ্যে একটি টিউবয়েল প্রদান করে ঐপাড়াটিকে সম্পূর্ণ ইসলামী শিবিরপন্থী করে তুলা হয়েছে। এখানেও দারিদ্রতাকে পুঁজি করা হয়েছে। দু একজনকে রিকসা ও প্রদান করতে শোনা গেছে। এতে কিছু করার সুযোগ পায় তাহলে প্রশ্ন হলো এদের অর্থের যোগান দেয় কারা?

    বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও কটেজে যারা থাকে তাদের কাছে থেকে প্রতিমাসে ন্যূনতম মাসিক ১০ টাকা করে বাইতুলমাল সংগ্রহ করে যা অন্য সংগঠনের ছাত্ররা করলে চাঁদা বলে আখ্যায়িত হতো। এদের আবার বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের অর্থ পায় যা দ্বারা দলীয় কর্মকান্ড চালিয়ে নিতে এদের কোন সমস্যা হয় না।

    কর্মী সংগ্রহের জন্য এক সময় এদের নজর ছিল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রদের প্রতি। কিন্তু এখন এদের নজর পড়েছে সকল বয়সী ছাত্রদের প্রতি এমনকি কিন্ডার গার্ডেন পড়ুয়া ছাত্রদের প্রতিও। এত কিছুর পরেও এদের কর্মী সংখ্যা সীমিত বললেই চলে। ইসলামী ছাত্রশিবির ধর্মকে পুঁজি করে যেভাবে দলীয় প্রচারণা চালায় তা দেখে ও শোনে ছেলে মেয়েরা আকৃষ্ট হয়ে যায়।

    যখন আল্লাহ ও ইসলাম ধর্মের ব্যাখ্যা করে তখন ছেলে মেয়ে দের মন জয় করা অনেকটা সহজ হয়ে পড়ে, কিন্তু যখন বুঝতে পারে এর পিছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে তারা পুরোপুরি কর্মী। দল ত্যাগ করলে কঠিন শাস্তি পেতে হয় এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও।

    ছাত্রী সংস্থার নামে শিবিরে মেয়ে কর্মী সংগ্রহ : ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মী সংগ্রহের তালিকায় প্রথমে মেয়েদের কথা ছিল না। কারণ তখন তারা প্রচার করত মেয়েদের রাজনীতি হারাম। হায়রে ফতুয়া! কিন্তু যখন দলটি বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হলো তখন জোটের প্রধান ছিল মহিলা। পরক্ষণে এদের স্বর পাল্টে গেল, এরা আবার ছাত্রী সংস্থার নাম করে মহিলা কর্মীর জন্য কাজ শুরু করে ছিল।

    ধর্মই হাতিয়ার : শিবির নেতারা কখনো ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করে না, এখানে ধর্ম হলো হাতিয়ার মাত্র, আর যদি ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করে থাকে তবে অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সাথে এদের মতের মিল হয় না কেন? প্রত্যেক নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার রয়েছে। তবে অধিকার যদি জাতির বৃহত্তর অংশের দাবির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তাহলে সে অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়।

    সত্যিই যদি আপনার ধর্মীয় আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণীত হয়ে থাকে তবে নিজ দলের মধ্যে যারা যুদ্ধাপরাধী রয়েছে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা না করে প্রমাণ করতে হবে আপনারা ধর্মীয় আদর্শ মেনে চলেন। এই দেশটাকে মায়ের মতো করে ভালবাসতে শিখুন, তাহলে দেখবেন ‘৭১’ এ আপনারা ঘৃণ্য কাজগুলো করেছে তা হয়তো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে ছাত্রলীগ।

    ২০০৯ সালে চবিতে শিবিরের একক আধিপত্যের অবসান : ১৯৮২ সাল থেকে টানা দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতো ছাত্রশিবির। সেই সময় কথায় কথায় প্রতিপক্ষের কর্মী খুন, হল দখল ও অস্ত্রবাজি ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকা তখন ‘মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

    ২০০৯ সালে দেশে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর চবিতে শিবিরের একক আধিপত্যের অবসান ঘটে। ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণের চাবিকাটি চলে যায় ছাত্রলীগের হাতে। তবে এই পরিবর্তনে ক্যাম্পাস পরিস্থিতির সামান্যতম উন্নতিও হয়নি।

    শিবিরের দেখানো পথেই ছাত্রলীগ : শিবিরের দেখানো রক্তপাত ও অস্ত্রবাজির পথেই হাঁটতে শুরু করেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের দাপটের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
    বর্তমানে ক্যাম্পাসে শিবিরের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবে শিবিরের মত আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ছাত্রলীগ। নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দিন সমর্থিত দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পাসের আধিপত্য নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগ।

    গত ছয় বছরে ক্যাম্পাসে চারটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গত তিন বছরে নানা অজুহাতে ২৫ বারের বেশি শাটল ট্রেন অবরোধ করেছে ছাত্রলীগ। এ সময় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ব্যাহত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। হত্যা, লুটপাট এমনকি মুরগি চুরির মত অপরাধেও ছাত্রলীগ কর্মীদের নাম এসেছে। সংগঠনের সাবেক নেতা-পুলিশ ও সাংবাদিক লাঞ্ছনার অভিযোগ এসেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো আবার আগের মত অস্ত্রের ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে।

    দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৫ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মামুন হোসাইনকে সভাপতি এবং এমএ খালেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভাপতির বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ছিনতাই, নিয়োগ বাণিজ্য, গ্রুপিংয়ের অভিযোগ ছিল। এক সময় মামুনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তারই এক সময়ের অনুসারীরা।

    ২০১৪ সালের ১১ জুন শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠন কনকর্ড ও ভার্সিটি এক্সপ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে আলমগীর টিপুকে সভাপতি এবং ফজলে রাব্বিকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয় নতুন কমিটি। তবে নতুন সভাপতি’র বিরুদ্ধেও জোড়া খুনসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকা, সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি এবং পারিবারিকভাবে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কিন্তু এসব অভিযোগ তিনি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।

    ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শিবির ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে শিবির কর্মী মুজাহিদ ও মাসুদ বিন হাবিব নিহত হয়। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি ছাত্রলীগ-শিবির রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আমানত হলের শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন নিহত হয়। একই বছরের ১৪ ডিসেম্বর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তাপস সরকার। প্রসঙ্গত, ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারের বলি হিসেবে ১৯৮৬ থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ -২০ জন নিহত হয়েছে।

    চবিতে নানা অপকর্মের নেপথ্যে ছাত্রলীগের ১০ নেতা :  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নানা অপকর্মের নেপথ্যে আছে ঘুরেফিরে ছাত্রলীগের ১০ নেতা। এদের কাছে জিম্মি উপাচার্য। জিম্মি হয়ে আছে ২২ হাজার শিক্ষার্থীও। কারণ, বগিভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া এই নেতারা সারা বছরই ব্যস্ত থাকে মারামারি, গোলাগুলি কিংবা সংঘর্ষে। এ কারণে চলতি বছরই চবি অবরুদ্ধ ছিল ১৬ দিন।

    আবার আওয়ামী লীগ সরকার মনোনীত উপাচার্যের আমলেই চবিতে খুন হয়েছেন চারজন। ক্যাম্পাসে ছড়ি ঘোরানো ছাত্রলীগের এসব নেতা মতের অমিল হলেই করেন মারামারি। কোমরে নাইন এমএম বিদেশি পিস্তল নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করেন ক্যাম্পাসেও!

    এদেরই একজন ছিলেন আশরাফুজ্জামান আশা। উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দেওয়া আশা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন। পদের দিক থেকে অনেক নিচে থাকলেও ক্ষমতার দাপটে অনেক বেশি।

    পুলিশ বলছে, এই আশার গুলিতেই প্রাণ গিয়েছিলো সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকারের। একাধিক মামলার আসামি আশা বগিভিত্তিক সংগঠন ভিএক্সের নেতৃত্ব ছিলেন। তার মতো আরও যারা ছাত্রলীগের ব্যানার ব্যবহার করে বগিভিত্তিক সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন, তাদের মধ্যে সিএফসি গ্রুপে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি অমিত কুমার বসু, ক্যাম্পাস গ্রুপে যুগ্ম সম্পাদক সুমন মামুন, সিক্সটি নাইনে সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর টিপু, কনকর্ডে যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল হোসাইন ও ইউরেকাতে সহসম্পাদক আবদুল মালেক। এদের সহযোগী হয়ে আরও আছেন বিলুপ্ত কমিটির দপ্তর সম্পাদক জালাল আহমেদ, হাবিবুর রহমান রবিন, রূপম বিশ্বাস, শাহাদাত হোসেন জুয়েল প্রমুখ।

    এ প্রসঙ্গে তৎকালীন পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেছিলেন, চবি ক্যাম্পাস অশান্ত করে রেখেছিল ১০-১২ নেতা। গোলাগুলি, মারামারি সবকিছুর মূলে ছিলেন এরা। ক্যাম্পাস অশান্ত করতে কখনও কখনও শিবির অপতৎপরতা চালালেও বছরজুড়ে আমাদের ব্যস্ত থাকতে হতো এদের নিয়েই।

    ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত :  ২০১৫ সালের ২০ জুলাই আলমগীর টিপুকে সভাপতি ও এইচএম ফজলে রাব্বী সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৬ সালে আলমগীর টিপুকে সভাপতি ও এইচএম ফজলে রাব্বী সুজনকে সাধারণ সম্পাদক রেখে ২৬১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে বারবার নিজেদের মধ্যে সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ায় কমিটি গঠনের পরে দুইবার স্থগিতাদেশ দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ মে চবি ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংর্ষের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অনির্দিষ্টকালের জন্য এ শাখার কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়।

    চলতি বছরের ৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে অবরোধ কর্মসূচি পালনকারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। ছাত্রলীগ কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার সেল নিক্ষেপ করেছে। ছয় ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা প্রত্যাহার, প্রক্টরের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ঐদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল।

    সর্বশেষ ১৪ জুলাই ২০১৯ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক প্যাডে এ দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের।

    নতুন সভাপতি পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের রেজাউল হক রুবেল চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপ চুফ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের (সিএফসি) নেতা। একই সাথে চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি ও ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপমন্ত্রী আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু মার্কেটিং বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি বগিভিত্তিক আরেক গ্রুপ সিক্সটি নাইনের নেতা। ক্যাম্পাসে সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

    উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২০১৬-১৭ সালের কমিটি ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বিভিন্ন গ্রুপিং, সংঘর্ষ, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্মে সংগঠনটির সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠে। এর আগে সাত মাস স্থগিত ছিল ওই কমিটি।

    বিএম/রাব্বি আদিভ/আরএস..