জিয়া ও এরশাদকে রাষ্ট্রপতি বলা যায় না: প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে রাষ্ট্রপতি বলা যায় না।

    রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতার মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন ।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই এ দুজনের কেউ আর রাষ্ট্রপতি হিসেবে কিন্তু থাকেন না। তাদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা হাইকোর্টের রায়ে বৈধ নয়, সেটা করা যায় না।

    তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের জাতির পিতার হত্যার পর জিয়া ক্ষমতা দখল করেন। তাকে অনুসরণ করে এরশাদ প্রথমে মার্শাল ল’ জারি করেন। এরপর নিজেই ক্ষমতা দখল করেন। হাইকোর্ট এই দু’জনের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এরফলে এই দু’জনের কাউকেই বৈধ রাষ্ট্রপতি বলা যায় না।’

    শোক প্রস্তাবের আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ হিসেবে জেনারেল এরশাদ সাহেব অমায়িক ছিলেন, মানুষের প্রতি তার দরদ ছিল।

    জিয়া ও এরশাদের ক্ষমতা দখলে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক মিলিটারি ডিক্টেটর থেকে আরেক মিলিটারি ডিক্টেটর আসুক, সেটা কখনোই আমাদের কাম্য ছিল না। এর বিরুদ্ধে আমরাই প্রতিবাদ করেছি। আমরা চেয়েছি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।’

    এরশাদের ক্ষমতাগ্রহণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জেনারেল এরশাদ যে ১৯৮২ সালে ক্ষমতা দখল করেছিলেন, সেই ক্ষমতা দখলের সুযোগটাই কিন্তু খালেদা জিয়াই করে দিয়েছিলেন।

    এই কারণেই তিনি খালেদা জিয়াকে শুধু দুটি বাড়িই নয়, নগদ ১০ লাখ টাকাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন। যে কারণে জিয়াহত্যার ব্যাপারে যে মামলা হয়েছিল, সেই মামলা বিএনপি চালায়নি।

    তবে, বহু বছর পরে ১৯৯১ সালে বা তারপর খালেদা জিয়া জেনারেল এরশাদকে তার স্বামী হত্যার জন্য দায়ী করেছেন।’

    এরশাদের আমলে আওয়ামী লীগের সংসদ নির্বাচনের অংশ নিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত চেয়েছি বলেই অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে অংশ নেই। ওই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে এ ধরনের বিতর্কিত হতে হতো না। একটি গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত হতো। এরশাদ নিজেই সেই সংসদ ভেঙে দিয়ে আবারও বিতর্কিত হয়ে যান। এরপর ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে কোনও দল অংশ নেয়নি। তখন আন্দোলনের মুখে তিনি ১৯৯০ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।’

    রওশন এরশাদের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দলটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে যদি জনগণের অংশগ্রহণ না থাকতো, তাহলে আমরা ৫ বছর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারতাম না।’

    শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া কখনোই গণতান্ত্রিক ধারা মজবুত হয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে শুরু করে সব দল অংশ নেয়। কিন্তু অংশ নিয়েও বিএনপি এই সংসদকে অবৈধ বলে। আবার তারা সংসদে ফিরেও এসেছেন। এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। তাদের অংশগ্রহণে বিরোধী দল সংখ্যায় বেড়েছে। গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে।’

    তিনি আরও বলেন, ‘তারা (বিএনপির এমপি) সংসদে বসেন, আবার বলেন, নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি। ভোট না দিলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির সরকারকে আমরা যেভাবে উৎখাত করেছিলাম, তারাও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেভাবে সরকারকে উৎখাত করতে পারতো। কিন্তু জনমর্থন নেই বলে তারা তা পারছে না।’

    ১৯৯১ সালে বিএনপির শাসনামলে এরশাদের জেল হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরশাদ সহেব যখন পদত্যাগ করেছিলেন, তখন তাকে গ্রেফতার করে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। রওশন এরশাদকেও বন্দি করে দিনের পর দিন নির্যাতন করেছিল। কারাগারের ভেতরও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে হেয় করা হয়েছে। আমরা তো সেই ধরনের অভদ্র আচরণ করছি না। আমরা যথেষ্ট উদারতা দেখাচ্ছি। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও খালেদা জিয়াকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে।’

    বিএম/এমআর