বাংলাদেশ মেইল, ঢাকা : আদালতের নিষেধাজ্ঞায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৬ষ্ঠ কাউন্সিল বন্ধ হয়ে যাবার পর নতুন কৌশলে হাঁটছে বিএনপি। দীর্ঘ ২৭ বছর পর চলতি মাসের ১৪ সেপ্টেম্বর কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল ছাত্রদলের। সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও আদালতের আদেশে রণেভঙ্গ হয় কাউন্সিল। ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা কাউন্সিলের পরবর্তী তারিখ নিয়ে যখন প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন, তখনই ভিন্ন কৌশলে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুল সংগঠন।
মঙ্গলবার রাতে ৬ষ্ঠ কাউন্সিলের ৫৬৬ জন কাউন্সিলরকে বুধবার বিকাল চারটার মধ্যে ঢাকায় থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিকাল ৪টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কাউন্সিলরদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পক্ষ থেকে। মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আদালতের নির্দেশে স্থগিত ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বৈঠকে বসেন কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সেই বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপ এ যোগ দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকের পর রাতেই ফোন করে সারাদেশের কাউন্সিলরদের ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। সূত্র বলছে, আজই কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তক্রমে কাউন্সিলের পরবর্তী তারিখসহ অন্যান্য করণীয় ঠিক করা হবে।
আজ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসার জরুরি তলব পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের একাধিক কাউন্সিলর। তারা জানিয়েছেন, ফোন করে বিকাল ৪টার মধ্যে অবশ্যই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ছাত্রদলের কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এ বিষয়ে বলেন, ছাত্রদলের সব কাউন্সিলরদেরকে বুধবার বিকাল চারটার মধ্যে ঢাকায় থাকতে বলা হয়েছে।
কী কারণে তাদের জরুরি তলব এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতসহ বিভিন্ন বিষয় আছে। তাই তাদের ঢাকায় থাকতে বলা হয়েছে।
ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তফসিল অনুযায়ী, ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের ১১৬টি শাখায় মোট ৫৬৬ জন ভোটার (কাউন্সিলর) রয়েছেন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৯টি শাখায় ৪৫ ভোট, ঢাকা বিভাগের ২৯টি শাখায় ১৩৮ ভোট, চট্টগ্রাম বিভাগের ১২টি শাখায় ৫৮ ভোট, কুমিল্লা বিভাগের ৬টি শাখায় ৩০ ভোট, খুলনা বিভাগের ১৪টি শাখায় ৭০ ভোট, ময়মনসিংহ বিভাগের ৯টি শাখায় ৪৫ ভোট, রাজশাহী বিভাগের ১১টি শাখায় ৫২ ভোট, সিলেট বিভাগের সাতটি শাখায় ৩৫ ভোট, রংপুর বিভাগের ১৩টি শাখায় ৬৩ ভোট ও ফরিদপুর বিভাগের ছয়টি শাখায় ৩০ ভোট রয়েছে।
এদিকে সাংগঠনিক অভিভাবক নির্বাচন করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে সারাদেশ থেকে আসা ছাত্রদলের কাউন্সিলররা সর্বসম্মতিক্রমে সাংগঠনিক অভিভাবক নির্বাচন করেন। বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এ দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নেয়া এ সিদ্ধান্ত পরে ঘোষণা করা হয়।
একই সঙ্গে ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেয়া সব সিদ্ধান্ত ও পরামর্শের ওপর আস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নেন কাউন্সিলররা। বৈঠকে কাউন্সিলরদের লিখিত প্রস্তাবে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের সভাপতি ও কাউন্সিলর খন্দকার এনামুল হক এনামের সভাপতিত্বে এ কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তিনশর বেশি কাউন্সিলর অংশ নেন। কাউন্সিলে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পর্যালোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে ২৬ দফা প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
দলের ঘনিস্ট সুত্র জানিয়েছে তারেক রহমান ছাত্রদল গঠন, পুনর্গঠনসহ গঠনতন্ত্র সংশোধন, কাউন্সিল আহ্বান, কাউন্সিল মুলতবি, নেতৃত্ব নির্ধারণে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। সুত্রটি আরো জানায় কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে শুরু থেকেই কাউন্সিলের পক্ষে ছিলেন না দলের শীর্ষ এ নেতা।আদালতের নিষেধাজ্ঞার উপর ভর করে কমিটি গঠনে নিজের পছন্দসই সভাপতি সাধারন সম্পাদক করার কৌশল নেয়া হয়েছে।
ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা যায় সকল কাউন্সিলরকে ঢাকায় ডেকে আজই বিকল্প উপায়ে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষনা করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান।