উন্নয়নের নতুন ধাপে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ : চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী

    চট্টগ্রাম মেইল : বহু প্রতীক্ষিত কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল উপমহাদেশের প্রথম যোগাযোগ বিপ্লব বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’নির্মাণ কাজ শুরুর মাধ্যমে উন্নয়নের নতুন ধাপে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রামের দুই প্রান্তকে সংযুক্ত করবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে যাওয়া এই টানেল। সৃষ্টি হবে উপমহাদেশের বুকে এক ইতিহাস।

    রবিবার বন্দরনগরীর পতেঙ্গায় আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, চার লেনের দুটি টিউব সম্বলিত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মিত হচ্ছে। এছাড়া টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজ সম্পন্ন টানেলটি চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে।

    প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮শ আশি কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকা। এ প্রকল্পের জন্য চীন সরকার সবচেয়ে বড় যে কাজটি করেছে সেটি হলো চীন সরকার কোন দেশকে ঋণ সঞায়তা বা ঋণ দিলে সাধারণত ৮৫ ভাগ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এ ঋণ সহায়তা শতভাগ দিয়েছে। বাংলাদেশের আগ্রহ দেখে চীনের প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ শতভাগ ঋণ সহায়তা প্রদান করেন। ৫ হাজার ৯শ ১৩ কোটি উনিশ লক্ষ টাকা অর্থায়ন করবে চীন সরকার। বাংলাদেশ সরকারের ৩ হাজার ৯শ ৬৭ কোটি ২১ লক্ষ টাকা অর্থায়ন থাকবে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে টানেল প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের ৩২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা করেন, সকল প্রক্রিয়া ঠিক থাকলে আগামী ২০২২ সালের মধ্যেই ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’নির্মাণ কাজ শেষ হবে। ২০২৩ সালের শুরু থেকে যানবাহন চলাচল শুরু করবে এ ট্যানেল দিয়ে। যোগাযোগ শুরু হলে এ অঞ্চলে বিশেষ অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রাখবে টানেলটি।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্যানেল প্রসঙ্গে বলেন, কর্ণফুলীর তলদেশে বহুলেন সড়ক ট্যানেল নির্মাণ প্রকল্প হচ্ছে বাংলাদেশের তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নদীর নিচে প্রথম ট্যানেল নির্মাণ প্রকল্প। ২০১০ সালে এ ট্যানেল নির্মাণের ঘোষণা করি। ২০১৪ সালের জুন মাসে কর্ণফুলীর তলদেশে একটি সড়ক টানেল নির্মাণের জন্য চীনা সরকারের সাথে জি টু জি ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

    সে স্মারকের ধারাবাহিকতায় চীন সরকার টানেল নির্মাণের জন্য চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটিডে (সিসিসিসি লিঃ) কে মনোনয়ন দেন। ২০১৫ সালের ৩০ জুন টানেল নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের সাথে সে কর্তৃপক্ষের বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। টানেল নির্শাণ কাজের শুভ উদ্বোধন হয় ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। উদ্বোধনের দিন চীনের প্রেসিডেন্ট শিজিনপিং উপস্থিত ছিলেন।

    তিনি বলেন, টানেলটি নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে। কর্ণফুলি নদীর পূর্ব প্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন তরান্বিত হবে। পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমান বন্দরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ ও উন্নত হবে। ফলে পূর্ব প্রান্তের শিল্প কারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমান বন্দর ও দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহণ সহজ হবে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ যোগাযোগ ব্যবস্থা মুল চট্টগ্রাম শহরকে বাইপাস করে হবে। ফলে ভ্রমণ সময় ও খরচ কমবে এবং চট্টগ্রাম শহরের যানজট উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, কর্ণফুলি টানেল নির্মিত হলে এলাকার আশেপাশে শিল্পায়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এতে করে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। এসব এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান উন্নত হবে,পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করবে।

    সভামঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, গৃহায়ন ও গণপুর্তমন্ত্রী স ম রেজাউল করিম, ভুমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, পটিয়া সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী, মিরসরাই সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুচ সালাম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সচিব সাজ্জাদুল হাসান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সালাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম, বিপ্লব বড়–য়াসহ চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

    এর আগে রোববার সকাল ১১টা ১০মিনিটে তিনি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এবং সেখান থেকে সকালে সরাসরি পতেঙ্গার পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। পৌঁছানোর পর সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বোরিং কার্যক্রম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিফ করেন।

    রোববার সকাল সাড়ে ১১টার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং প্রকল্পের নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করে পতেঙ্গার সাগর পাড়ে সুধী সমাবেশ মঞ্চে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স..