চকবাজারে মৃত্যুপুরী,ঢাকা মেডিকেলে লাশের সাড়ি,স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি

    রাজীব সেন প্রিন্স : রাজধানী পুরান ঢাকায় চকবাজার এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। রুপ নিয়েছে মৃত্যুপুরীতে। উদ্ধার করা অনেক গুলো লাশ কয়লা হয়ে গেছে আগুনে পুড়ে। যেগুলো শনাক্ত করারও উপায় নেই। অন্যদিকে বেলা যত গড়াচ্ছে ঢাকা মেডিকেলে ততই বাড়ছে লাশের মিছিল।

    এখন পর্যন্ত ৭০ জনের মরদেহ পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। বেশির ভাগ মরদেহ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। চেহারা বোঝা মুশকিল। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

    হতাহত হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা ভিড় করছেন হাসপাতালে। কান্নার রোলে আকাশ হচ্ছে ভারি। চারিদেকে যেন শুধু স্বজনদের আহাজারি। ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ফায়ার সার্ভিসের লাশ বহনকারী ব্যাগে মুড়িয়ে রাখা লাশের ভেতর নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। অনেক গুলো লাশে শনাক্ত করার কোন উপায় নেই।

    এযেন এক শোকের দিনে আরো একটি ভয়াবহ শোকের মাতম। মর্গে থাকা লাশের সাড়িতে ভাই খুঁজছে তার বোনের আর বোন খুঁজে ভাইয়ের মরদেহ। আত্মনাথ করতে করতে পরিবেশ ভারী করা আহাজারিতে মা খুঁজে বেড়াচ্ছে সন্তানের লাশ। স্বামী হারিয়ে নিঃস্ব স্ত্রী সন্তান খুজে তার জীবনসঙ্গী স্বামী ও ভরণ পোষণের একমাত্র কর্মক্ষম পিতাকে। সন্তান খুঁজে বেড়াচ্ছে তার স্নেহময় পিতাকে।

    স্বজনের লাশ শনাক্ত করে কেউ চিৎকারে ফেটে পড়ছেন। কেউ হয়ে যাচ্ছেন শোকে পাথর। কেউ আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করছেন দুই হাত তুলে। অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন এই শোক সামলাতে না পেরে। সব মিলিয়ে সমস্ত এলাকায় চলছে এক শোকের মাতম।

    আগুনে দগ্ধ হয়ে আহতের সংখ্যাও নিহাত কম নয়, পুড়ে অঙ্গার হয়েছে মানুষ, তছনছ হয়েছে ভবন, ক্ষয়ক্ষতির বিরাট ক্ষয়ক্ষতিতে চকবাজার এলাকা পরিণত হয়েছে এক পোড়া জনপদে।

    বিশ্ব মিডিয়ায় চকবাজার ট্রাজেডি : ঢাকার ঐতিহাসিক এলাকায় ভয়াবহ আগুন’ শিরোনামে বিশ্ব মিডিয়ার প্রধান বার্তা সংস্থাগুলোর মূল টাইমলাইনে এখন চকবাজার ট্রাজেডির সংবাদ। বিবিসি, বার্তা সংস্থা এএফপি, রয়টার্স, টাইমস অব ইন্ডিয়া, নিউইয়র্ক টাইমস, মিরর, ইয়াহু নিউজ, দ্য কুইন্ট, গার্ডিয়ান নিউজ, আলজাজিরা, এনডিটিভি, টেলিগ্রাফের মতো বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমগুলো খবরেও প্রধান সংবাদের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের পুরাণ ঢাকার ভয়াবহে অগ্নিকান্ডে হতাহতের খবর।

    বুধবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে নন্দ কুমার দত্ত সড়কের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানসনে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা আশপাশের ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুরান ঢাকায় নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এর পরই পাশের খুঁটির আরো দুটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছেন।

    ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের প্রায় ১২ ঘণ্টার চেষ্টায় অবশেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে ধ্বংসস্তূপ থেকে আগুন জ্বলছে। ইতিমধ্যে ফায়ার সার্ভিস থেকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার রাতে আগুন লাগার পর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন চকবাজারে থেকে বের হয়েছে একের পর এক লাশ। এ যেন মৃত্যুপুরী।

    বিএম/রাজীব সেন…