তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ডের কৃতিত্ব : জ্বালানি সাশ্রয়ী সোলার চালিত ও ব্যাটারী নির্ভর বোট ‘সানফ্লাওয়ার’ কায়াক

    চট্টগ্রাম মেইল : ২৪ বছর আগে সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য ভাসমান লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল নিয়ে বাংলাদেশে আসেন ফ্রান্সে জম্মগ্রহনকারী বাংলাদেশী নাগরিক মি.ইভস মারে। তখন যমুনার চরে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের চিকিৎসা দেন তিনি। এর পর সিডরে আক্রান্ত হয়ে অনেক বাংলাদেশী জেলের ডুবে যাওয়ার দৃশ্যটি নিজের চোখে দেখেন তিনি। এসময় অনেক জেলের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

    এর পর পদ্মা ও যমুনার পারের এসব জেলেদের জন্য বিশেষ সুবিধা সম্বলিত মাছ ধরার বোট তৈরির কাজ শুরু করেন। ফাইবার গ্লাসের মাছ ধরার নৌযান তৈরি শুরু করেন এবং স্থানীয় জেলেদের মধ্যে এসব নৌকা বিতরণ করেন। এ নৌকা পানিতে ডোবেনা বলেও জানান তিনি।

    এর পর বাংলাদেশে দীর্ঘ পথচলা তার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে হওয়ায় বিষয়টি তাকে ভাবিয়ে তোলে। বিকল্প চিন্তা থেকেই শুরু হয় কাজ। দীর্ঘ পরিকল্পনার পর অবশেষে সফল হলেন তিনি। তৈরি করেছেন জ্বালানি সাশ্রয়ী সোলার চালিত ও ব্যাটারী নির্ভর বোট।

    নিজের তৈরি হাইব্রিড সোলার-পাওয়ার্ড ‘সানফ্লাওয়ার’ কায়াক বোটে চড়ে ব্রহ্মপুত্র থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছেন ৪৫০ কিলোমিটার সমুদ্র পথ। হাইব্রিড সোলার পাওয়ার্ড ‘সানফ্লাওয়ার’ কায়াক বোট বিশ্বে এটাই প্রথম।

    ব্যাটারী সরবরাহের প্রতিষ্ঠান রহিমা আফরোজ ও তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ডের কর্ণধার মি.ইভস মারে’র যৌথভাবে সোলার চালিত কায়াক বোটটি তৈরি করেছেন তিনি। মি. ইভস মারে’ বলেন, তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ড ও রহিমআফরোজ রিনিউএ্যাবল এনার্জি লিমিটেড পাইলট প্রকল্পের অধীনে সানফ্লাওয়ার কায়াক বোট তৈরি করা হয়েছে।

    মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মি. মারে। রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
    সাড়ে ১৬ ফুট লম্বা ও ৪ ফুট প্রস্থের এ বোটে ৬৩০ ওয়াটের পাওয়ার প্যানেল রয়েছে। ২ দশমিক ২ কিলোওয়াটের ব্যাটারি রয়েছে।

    একবার পূর্ণ চার্জ হলে আড়াই দিন থেকে ৩দিন থাকে, পাড়ি দিতে পারে ১১০-১২০ কিলোমিটার। বায়ু প্রবাহ অনুকুলে থাকলে পাল তোলার ব্যবস্থা রয়েছে বোটটিতে। এ পাল সাধারণ বোটের পালের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি কাজ করে।

    ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মি. মারে বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম থেকে সানফ্লাওয়ার কায়াক বোট নিয়ে দর্পন চাকমা ও তিনি ব্রহ্মপুত্র দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। সফলভাবে নির্দিষ্ট পথ পাড়ি দিতে পেরে খুব খুশি। দারুণ এডভেঞ্চার ছিল আমাদের জন্য।

    কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তির মুখে পড়তে হয়নি। স্থানীয় লোকজন থেকে শুরু করে প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করেছে। তিনি বলেন, ভাঙ্গন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে দেখেছি। তবে ট্যুরিজমের জন্য নদীপথ খুবই আকর্ষণীয় হবে বলে মনে হয়েছে। নদীপারের জীববৈচিত্র তাদের মুগ্ধ করবে।

    প্রকল্পের প্রধান শেখ মনোয়ার আহমেদ জানান, সানফ্লাওয়ার কায়াক বোট নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাইব্রিড সোলার-পাওয়ার্ড বোট তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ড। মে-জুনে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। ৮ জন, ১৫ জন, ২৫ জন থেকে ৫০ জনের বোট তৈরি হবে। এগুলোর মূল্য সাধারণ নৌকার মতোই হবে।

    মহাব্যবস্থাপক রিভু দেওয়ান বলেন, দেশে যে টেকনোলজি আছে তা দিয়ে এ প্রকল্প পরিচালনা করা হচ্ছে। ডিজেল চালিত বোট রিপ্লেস করতে ইলেকট্রিক সোলার পাওয়ার বোট তৈরি করবো আমরা। ইলেকট্রিক বোটের বিপ্লব ঘটাতে চাই আমরা।

    বিএম/রাজীব..