নিম্নমানের গাইডবই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

    কামরুল ইসলাম দুলু, সীতাকুন্ড প্রতিনিধি : সীতাকুন্ডে বিভিন্ন লাইব্রেরীগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ গাইড বই। অভিযোগ রয়েছে এসব নোট ও গাইড বই চড়াদামে কিনতে বাধ্য করছেন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু শিক্ষক।

    নোট ও গাইড বই বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ সরকার নিষিদ্ধ করলেও কর্তৃপক্ষের কার্যকরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদাসীনতা, নিরবতা ও আইনি জটিলতার কারণে তা মানছে না কেউ। ফলে এসব নিম্নমানের নোট ও গাইড বই কিনে প্রতারিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা আর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অভিভাবকরা।

    অভিযোগ উঠেছে, বছরের শুরুর আগ থেকে এসব নোট ও গাইড বইয়ের পরিবেশকরা উপজেলায় বই পৌঁছে দিচ্ছে। অন্যদিকে প্রাইমারী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তাদের নোট ও গাইড বই চালাতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মোটা অংকের বখশিশ ও উপঢৌকন দিয়ে থাকেন।

    ফলে তাদের মাধ্যমে প্রকাশনীগুলোর নিম্নমানের বই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। শিশু শ্রেণীতে সরকারীভাবে বিনামুল্যে একটি বই দেওয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকরা কোমলমতি ছোট্ট শিশুদেরকে ৬ টি বইয়ের লিষ্ট দিচ্ছেন।

    বইগুলো হচ্ছে, চট্টল সিরিজ বর্ণমালা, চট্টল সিরিজ ছড়ার মেলা, ঈযধঃঃধষ ঝবৎরবং অইঈ, সোনামনিদের ধারাপাত ও অংক শেখা, নতুন বিশ্ব সাধারণ জ্ঞান এবং চট্টল সিরিজ চারু ও কারুকলা। বইগুলোর দাম ৮ শ থেকে এক হাজার টাকা যা অনেক গরীব অভিভাবকের দ্বারা ক্রয় করা সম্ভব নয়।

    উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষকরা বারবার তাগিদ দিয়ে এসব বই কিনতে বাধ্য করছেন। আর এসব বই চড়া দামে স্থানীয় লাইব্রেরীগুলোতে কিনে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। এই অতিরিক্ত খরচ মেটাতে অনেকেই হিমসিম খাচ্ছে।

    সেলিম নামের এক অভিভাবক বলেন, শিশু শ্রেণীতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত একটি বই অথচ শিক্ষকরা প্রকাশকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা কমিশনের বিনিময়ে ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের কাধে তুলে দিচ্ছেন বইয়ের বোঝা।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুন্ড উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুরুচ্ছফা বলেন, প্রথম শ্রেণীতে শুধুমাত্র সরকারীভাবে বিনামুল্যে একটি বই দেওয়া হয়। এর বাহিরে শিশুদের বাড়তি কোন বই দিতে পারবেনা। যেসব স্কুল একটি বইয়ের বেশি অতিরিক্ত বইয়ের লিষ্ট দেওয়া হচ্ছে সেসব স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
    জানা যায়, বছরের শুরুতেই বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থাগুলো বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসাগুলোতে ধর্ণা দিতে থাকেন তাদের বইগুলো দিতে, এতে স্কুলের শিক্ষকদের সাথে মোটা অংকের লেনদেন হয়ে থাকে। বলা যায়, প্রকাশনা সংস্থাগুলোর সাথে শিক্ষকদের একটা প্রতিযোগীতা শুরু হয় কোন প্রকাশনা কত টাকা বেশি দিতে পারে।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- বিভিন্ন প্রকাশনার প্রতিনিধিরা উপজেলায় তাদের প্রকাশনার এসব নিম্নমানের গাইড ও নোট বই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করতে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করছে শিক্ষকসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এদিকে সরকার এসব নোট ও গাইড বই বিক্রয় এবং বাজারজাত করণ নিষিদ্ধ করলেও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার কারণে দিনদিন বেড়েই চলছে এই অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট। কোন শক্তির জোরে এসব নিম্নমানের বইয়ের ব্যবসা খোলামেলাভাবে চলছে তা নিয়ে অভিভাবক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

    অনেক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেছেন, শিক্ষকদের সাথে বই প্রকাশকদের বিশাল টাকার লেনদেন হয়ে থাকে, এতে করে একবারে নি¤œমানের বইগুলো শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করছেন শিক্ষকরা। প্রতিটি ক্লাসে বাড়তি বইয়ের লিষ্ট ধরিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষকরা। এছাড়াও বাধ্য করেছেন লিষ্ট দেওয়ার সাথে সাথে বইগুলো কেনার। এসব সহায়ক বইয়ের পেছনে অভিভাবকদের খরচ হচ্ছে ৬৫০ থেকে দেড় হাজার টাকা। প্রকাশকদের সঙ্গে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের বিনিময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এসব বই পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে চাপিয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে।

    সফিকুল রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, সরকার প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যের বই বিতরণ করছে। এ কাজে সরকারের প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ কারণে অভিভাবকদের বই ক্রয়ের চাপ কমার কথা। কিন্তু স্কুলগুলো এভাবে অনুমোদনহীন বাড়তি বই দিয়ে তালিকা তৈরি করার ফলে বিনামূল্যে বই বিতরণের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

    এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সীতাকুন্ড উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মামুন বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বইয়ের বাহিরে বাড়তি কোন বই দেওয়া যাবেনা। আর নোট/গাইড বইতো নিষিদ্ধ। কোন প্রকার নোট বই, গাইড শিক্ষার্থীদের নিতে বাধ্য করারতো প্রশ্নই আসেনা।

    প্রকাশকদের সাথে টাকার বিনিময়ে বইয়ের লিষ্ট দেওয়া প্রসঙ্গে মামুন বলেন, এধরনের অনৈতিক কাজের কথা শুনেছি, তবে আমরা এব্যাপারে বিভিন্ন স্কুলের প্রধানদের সর্তক করে দিয়েছি। তারপরও যদি এরকম অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    বিএম/কামরুল/রাজীব..