ফ্ল্যাশব্যাকে যান: ধরলাম আকাশ সুইসাইড করেনি!

    চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া সমসাময়িক চাঞ্চল্যকর ঘটনার আলোকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া সেরা মন্তব্যটি বাংলামেইল ডট টিভির পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরলাম।

    ধরলাম আকাশ ভাই সুইসাইড করেনি, একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যান তো। সেদিন রাত আকাশ ভাই আর তাঁর স্ত্রীর ঝগড়া হলো। স্ত্রীর ক্রমাগত করে যাওয়া অনৈতিক অবৈধ কাজগুলোর স্বীকারোক্তির জন্য তাঁর গায়ে ধরলাম হাত ও তুললেন তিনি। ঝগড়াঝাড়ি শেষে সকলকে বিস্তারিত জানিয়ে দিলো ফেসবুকে। তারপর ডিভোর্স দিয়ে দিলো তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত USMLE ট্রাই করে যাওয়া ডাক্তার মিতুকে।

    কী করতেন আপনারা? কতোটা বিরুপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতো ডাক্তার আকাশ! ভাবা যায়!!
    নারী নির্যাতন, মানহানির মামলা, অনলাইনের মামলা থেকে শুরু করে আরো কতো কী মামলা যে সাজানো হতো তাঁর বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তো মুখরোচক সব কাহিনী। সকলে ধিক্কার জানাতো 7 বছর প্রেম করে প্রচন্ড ভালোবেসে বিয়ে করা ছেলেটাকে। গালির তুবড়ি ফুটতো যত্রতত্র। সেই সাথে কাবিনের ৩৫ লক্ষ টাকার দায় তো আছেই। কেউ বুঝতেই চাইতোনা, প্রতারিত হওয়ার কী অসহ্য কষ্ট বুকে চেপে হাসি হাসি মুখে বেঁচে ছিলো ছেলেটা।

    আর যদি বাই চান্স সুইসাইড করে বসতো মেয়েটা!!! তাহলে তো কথাই নেই। রীতিমতো “ফাঁসি চাই” স্লোগান উঠতো তাঁর বিরুদ্ধে, যার অধিকাংশই তুলতো আজকের দিনে তাঁর জন্য আফসোসের বাণী ছুটানো মানুষগুলো। কী ভয়ানক contrariety ই না এই সমাজে চর্চা হয়।

    Can you all still feel that deep severe pain, যার জন্য বহু শিক্ষার্থীর মোটিভেশনগুরু নিজের বাঁচার জন্য কোন মোটিভেশন খুঁজে না পেয়ে শিরায় শিরায় পয়জন ঢেলে দিতে পারে! সাতটা বছর ভালোবেসে বিয়ের আগ মুহুর্তে যার অনৈতিকতার প্রমাণ পেয়েও মাফ তরে দিয়ে বসেছিলো বিয়ের পিঁড়িতে, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে এই আশায়। কেনো জানেন? তাও এই সমাজব্যাবস্থা, লোকচক্ষু আর দুপেয়ে জীবদের কথার তুবড়ি থেকে বাঁচার জন্য। বিয়ের পর আড়াইটা বছর মুখ বুঁজে নিজের সাথে নিজে সংগ্রাম করে গেছে, ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে স্ত্রীকে সেই কুপথ থেকে।চেয়েছিলো শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক সব।

    কেনো?? কারণ চারপাশে আমি, আপনি, আমরা বসে ছিলাম ভুল ধরে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করার জন্য। ফেসবুকে ক্রমাগত রঙিন রঙিন সব ছবি দিয়ে বোঝাতো কত্ত সুখী তারা। অথচ, নিজের বিবাহিত স্ত্রী ক্রমাগত অন্য পুরুষদের সাথে ঘুরছে, খাচ্ছে, শুচ্ছে ; একটা ছেলে কিভাবে সহ্য করবে এসব।

    কিন্তু এই সমাজ তো আর এসবের বিচারের কোন আইন তৈরি করেনি। বরং ঘটনা টা আকাশের সুইসাইড দিয়ে শেষ না হলে, বড়ো হয়ে যেতো। এ সমাজের আইন ঘাড়ে কেঁচকি মেরে ধরতো নানান মামলা, হামলা,অপমান, অপদস্থের খড়গ নিয়ে। বেঁচে থাকার কোন ওয়ে ছিলোনা তো তার। কে বলে, “তিনি সঠিক কাজ টা করেননি। তাঁর মতো ম্যাচিউরড মানুষ এমন কাজ কেমনে করলো” !!

    আকাশ ভাই, ইউ ডিড দ্য একচুয়াল জব হোয়াট ইয়ু শুড ডু।।।

    এই কাজটা না করলে এই সমাজব্যবস্থা বুঝতোই না, কতো বড়ো একটা গলদ, কতো বড়ো একটা অবিচার রয়ে গেছে আমাদের বিচার ব্যাবস্থায়। এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ারের মতো জঘন্য কুরুচির কাজের কী শাস্তির বিধান দেশের আইনে আছে আমি জানিনা। তবে যদি না থাকে, হে সমাজ জেনে নিও, আকাশ ই শেষ নয়। আরও কতোশতো আকাশ কিংবা আসমানী এ তালিকায় যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে। ভিক্টিম পুরুষ কিংবা নারী যে কেউই হতে পারে। আকাশ এখানে কেবল একটি নাম্বার মাত্র।আর কিচ্ছু না।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অধ্যাপক দম্পতির কথা মনে আছে? যার স্ত্রী বিদেশে PHD করতে গিয়ে তার চেয়ে অল্প বয়সের এক ইরানি ছেলের সাথে অনৈতিক কুরুচিপূর্ণ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে যিনি নিজেও ঢাবির শিক্ষক ছিলেন। এসব জানতে পেরে, স্বামী রাগের মাথায় স্ত্রীর চোখে আঘাত করে, কামড়ে মুখের মাংস তুলে নেয়। পুরো দেশ ঐ বেচারা স্বামীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো, তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হলো, আর মাঝবয়সে এসেও পরকিয়া করা মহিলাকে দেওয়া হলো উচ্চতর চিকিৎসা, সহমর্মিতা ও অন্যান্য সুবিধা।

    সেদিন যদি ঐ অধ্যাপক যদি সুইসাইড করতো, তাহলেই হয়তো এই সমাজ ফ্যাচ ফ্যাচ করতে করতে পরকিয়া করা উচ্চশিক্ষিতার বিরুদ্ধে যেতো। কিন্তু তিনি সুইসাইড না করে স্ত্রীর বিচার করতে গিয়ে ভিলেন হয়ে গেলেন।

    একটা হাদীস দিয়ে শেষ করি, যদিও পুরোপুরি হাদিসটা মনে নেই। একবার রাসুল (সা) এর সামনে তাঁর এক সাাহাবিকে জিজ্ঞেস করা হলো, যদি আপনি বাসায় গিয়ে দেখেন আপনার স্ত্রী একজন পরপুরুষের সাথে একই বিছানায় শুয়ে আছে, আপনি কী করবেন? তখন সেই সাহাবি জবাব দিলো, আমি তলোয়ারের আঘাতে তথক্ষণাৎ তাদের হত্যা করবো। তখন সেই সাহাবিকে বলা হলো, আপনি এতোটা ঈর্ষা করেন? সেই সময় রাসুল (সা) এই কাজে সম্মতি প্রকাশ করে বলেন, “আমি এ ব্যাপারে তার চেয়েও বেশি ঈর্ষান্বিত।এবং আল্লাহপাক এব্যাপারে সর্বাধিক ঈর্ষান্বিত”।

    অর্থাৎ, এটা এমন একটা কাাজ, যেখানে কোন মার্সি নেই।আমাদের ঘুম ভাঙবে কবে???

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স