কামরুল ইসলাম দুলু, সীতাকুণ্ড : গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতমূলক হলেও সীতাকুণ্ড উপজেলায় কোন প্রকার লাইসেন্স ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছে মতই গ্যাসের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। দেদারছে এ বিস্ফোরক দ্রব্যটির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলার হার্ডওয়ার দোকান,পানের দোকান, মোবাইলের দোকান, লাকড়ীর দোকান, চায়ের দোকানে। এমনকি ওষুধের ফার্মেসির সাথেও চলছে এ গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা।
খোজ নিয়ে জানা যায়, এদের প্রায় অনেকের কাছেই বিস্ফোরক লাইসেন্স নেই, নেই ফায়ার নির্বাপণ যন্ত্র। বিস্ফোরক লাইসেন্সের প্রদত্ত নিয়ম-কানুন অনুযায়ী গ্যাসের ডিলার পরিচালিত হয়। এতে নিরাপদে গ্যাস মজুদসহ নানা ধরনের দিক-নির্দেশনা থাকে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি এলাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়াই খুলে বসেছেন গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান। বিপনি দোকান গুলোতে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার রাখার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ দোকানে অগ্নিনির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার নেই। কয়েকটি দোকানে এ গ্যাস সিলিন্ডার জুলন্ত অবস্থায় দেখা গেলেও এর কোন কার্যকারিতা নেই বল্লেই চলে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এলপি গ্যাস ব্যবহার, বিপনন ও বাজারজাত করতে হলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীকে বাধ্যতামূলক বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও অগ্নি নির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার সংরক্ষনে রাখতে হবে। কিন্তু উপজেলা বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারের প্রায় ব্যবসায়ীর এলপি গ্যাস বিক্রির বৈধ লাইসেন্স নেই। কোন বৈধতা না থাকলেও প্রকাশ্যেই করে যাচ্ছেন ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্যবসা। ফলে নিয়ম ছাড়াই ঝুকিপূর্ণভাবে মজুদ হচ্ছে গ্যাসের সিলিন্ডার।
গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবসারও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের। যে যার যার মত ইচ্ছেমত দামে বিক্রি করছে গ্যাস। এছাড়া গ্যাসের অবৈধ এসব ব্যবসায়ীরা বাড়তি দাম, ওজনে কারচুপি সহ নানা অপকর্ম করছে। বৈধ ডিলারের সাইনবোর্ডে পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ নানা ধরনের গ্যাস কোম্পানীর নাম লিখা থাকে। কিন্তু অনুমোদনহীন অবৈধ ডিলারে এসব নাম থাকে না।
নিয়মানুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স বা বিস্ফোরক লাইন্সেস না নিয়ে কেউ গ্যাসের ডিলার দিতে পারেনা।গ্যাসের ডিলারের মূল ভিত্তি হল বিস্ফোরক লাইসেন্স।কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে নামবিহীন গ্যাস সিলিন্ডারে উপজেলার সর্বত্র জড়িয়ে পড়েছে, যা প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে এবং ঘটে চলছে নানা দুর্ঘটনা।
গত বছর জানুয়ারীতে পৃথক ৪টি দুর্ঘটনায় এসব নামবিহীন গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিপইয়ার্ড, গ্যাসের দোকান ও বসতবাড়িতে ২ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। উপজেলার বাড়বকুণ্ড অনন্তপুর এলাকায় এস এস রুপান্তর নামক টায়ার পুড়িয়ে তেল তৈরির কারখানায় সিলিন্ডার গ্যাস বিস্ফোরণে ৩ জন অগ্নিদগ্ধ হয়। এসব নামবিহীন গ্যাস সিলিন্ডার সর্বাধিক ব্যবহার হচ্ছে সীতাকুণ্ডের শিপব্রেকিং ইয়ার্ড ও পুরাতন জাহাজের স্ক্র্যাপ ডিপোগুলোতে। যা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক এবং পরিবহনকালে যানবাহনের নিরাপত্তা সঙ্গে নিরাপত্তা জালিতে আছন্ন রেখে মালামাল লোড-আনলোড করার নির্দেশ রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
পক্ষান্তরে সীতাকুণ্ড উপজেলায় কোনো প্রকার লাইসেন্স ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছে মতোই গ্যাসের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন নামহীন সিলিন্ডার দিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।আর এসব নামহীন গ্যাস সিলিন্ডার বাসা বাড়িতে ব্যবহার করে গৃহিণীরা প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলছেন।
উপজেলার কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় বিভিন্ন দোকান ও শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে এসব নামহীন সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল সরবরাহ করে থাকে। ১৬০টি ইয়ার্ডের রমরমা ব্যবসায় হয় সীতাকুণ্ড শিপ ইয়ার্ডগুলোতে। যার প্রধান উপকরণ এই সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল। মূল উপাদান হিসেবে গ্যাসের বোতল হওয়ার ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো নামহীন বোতল মজুদ রাখে এবং বিক্রয় করে থাকে। এতে রয়েছে নানা রকমের ঝুঁকি।
বিস্ফোরক অধিদফতর কর্তৃক নির্দেশ অনুযায়ী ২০০৪ সালের বিধিমালাতে যে কোনো দোকানে ৮টি এলপি গ্যাস মজুদসহ বিক্রি করার বিধান রয়েছে। অথচ নিয়ম অমান্যকারী কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মূল্য গ্যাস বিক্রিসহ অধিক মুনাফা লাভের আশায় নিজ আবাস্থলকে গোডাউনে পরিণত করেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি এলাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়াই খুলে বসেছেন গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান। একটি পরিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বোতলসহ রিফিলের স্বাভাবিক ওজন প্রায় ২৯ কেজি। এর মধ্যে ১২ কেজি গ্যাস মজুদ থাকার কথা। কিন্তু পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, সুপ্রতিষ্ঠিত কোম্পানির গ্যাসের বোতলে গ্যাস ঠিক থাকলেও নামহীন বোতলে অর্ধেক গ্যাস থাকে আর বাকি অর্ধেক পানি। আবার কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় সুনামধন্য কোম্পানির গ্যাসের বোতলও অর্ধেক করে বাজারে বিক্রি করছে। এতে করে গ্যাস ব্যবহারকারীরা বোতলে গ্যাস কম পাওয়াসহ নানা সমস্যা পোহাতে হয়।
বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবসা ও নামহীন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে জানতে কথা হয় চট্টগ্রাম বিস্ফোরক অধিদফতরের সহকারী পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেনের সাথে। তিনি বাংলাদেশ মেইলকে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভ করতে গিয়ে বিস্ফোরক অধিদফতরের নাম ক্ষুণ্ন করছে। ইতিমধ্যে আমরা এসব অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও তাৎক্ষণিক জেল দিয়েছি, আমাদের অভিযান চলমান, তার পরও কেউ যদি ঘরের ভেতর এসব অবৈধ কাজ করে, সেগুলো তো আমি, আপনি কেউ দেখছি না।
বিএম/কামরুল/রাজীব….