অন্যকে ভালোবেসে এগিয়ে যাবে মানুষ : আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

    শিক্ষাঙ্গণ মেইল : ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে (ইডিইউ) আরো আগেই আসার কথা থাকলেও, পারিপার্শ্বিক নানা কারণে আসা হয়ে ওঠেনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা কিংবদন্তীতুল্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের। অবশেষে দীর্ঘ সে প্রতীক্ষার অবসান হলো আজ বৃহস্পতিবার। তিনি এলেন, ঘুরে দেখলেন ক্যাম্পাস, তরুণ শিক্ষার্থীদের সাহচর্যে মেলে দিলেন নিজেকে। এই জ্ঞানতাপসকে এতো কাছে পেয়ে আপ্লুত ও অভিভূত ইডিইউর শিক্ষার্থীসহ পুরো পরিবার।

    বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খানের সভাপতিত্বে প্রাক-সমাবর্তন সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক সায়ীদ। তিনি বলেন, আলোর উৎস হলো আগুন। তাই ভেতরের আগুন না জ্বালালে আলোকিত হওয়া যায় না। সৃষ্টির অদম্য তাড়না ও উৎসাহ হলো এই আগুন। একে জাগিয়ে তুলতে হবে। কিন্তু আলোকিত মানুষদের সম্পর্কে আমরা জানতে পারি বই থেকে। তাই আলোকিত হতে হলে বই পড়তে হয়।


    স্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রাক-সমাবর্তন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক সায়ীদ

    ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ হিসেবে আখ্যায়িত অধ্যাপক সায়ীদ আরো বলেন, বেশিদিন বাঁচার কোন অর্থ নেই। আমি সম্পূর্ণভাবে বাঁচলাম কি না, সেটিই মুখ্য। জীবন একটাই। এই সময়ের মধ্যেই কেউ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, কেউ অতি সাধারণ মানুষ। অর্থাৎ, সময় মুখ্য নয়, সময়ের ব্যবহারটাই মূল্যবান।ভিক্ষুকের লক্ষ্মী তার পায়ে। অর্থাৎ, যে যত বেশি হাঁটবে তার আয় তত বেশি হবে।

    রবি ঠাকুরের গানে আছে, আমার এ ধূপ না পোড়ালে গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে। অর্থাৎ ধূপের গন্ধের জন্য ধূপে আগুন জ্বালাতে হয়। তেমনই, আমরা আমাদের জীবনকে যতো ব্যবহার করবো, যতো আগুন জ্বালিয়ে দিবো, ততোই তা অর্থবহ হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

    এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মানুষ স্বপ্ন দেখবে,  উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়। কেননা, উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপাদান হলো লোভ, প্রতিযোগিতা। মানুষ এগিয়ে যাবে অন্যকে ভালোবেসে, কাউকে পরাজিত করে নয়। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সব জানার ভাব ধরে জ্ঞানী হওয়া যায় না। এখনো যে অনেক জ্ঞান অর্জন করা বাকি, সেটা বুঝতে পারাই প্রকৃত জ্ঞানীর বৈশিষ্ট্য। এজন্য নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। প্রশ্ন এবং তার উত্তরের মাধ্যমেই প্রকৃত সত্য খুঁজে নিতে হবে। যেভাবে সক্রেটিস করেছিলেন।

    ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে তিনি বলেন, এতো সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে আমি দেখিনি। এদেশে এতো চমৎকার স্থাপত্যশৈলী আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে যে পবিত্র আনন্দে মন ভরে যাওয়ার কথা, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে তা হয়। যেখানে ছাত্র, শিক্ষক, আলো, জ্ঞান- সব জড়াজড়ি করে আছে,তেমন বিশ্ববিদ্যালয় হলো ইস্ট ডেল্টা।


    স্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক সায়ীদ

    বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান বলেন, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সাথে একই মঞ্চে বসতে পারা, আমার গত দশ বছরের সবচেয়ে বড় অর্জন। জ্ঞানের বিস্তার ও আলোকিত মানুষ গড়তেই সারাজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন অধ্যাপক সায়ীদ। ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির যাত্রাও একই পথে। আমার পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ প্রত্যেকেই সমাজের অন্ধকারাচ্ছন্নতা দূর করে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠা করেছে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-শিক্ষাবোর্ড-বিশ্ববিদ্যালয়। আমার পরিবার যেমন আমাকে অনুপ্রাণিত করে, তেমনই আমি অনুপ্রাণিত হই অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে দেখেও।


    স্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রাক-সমাবর্তন সমাবেশে অধ্যাপক সায়ীদ

    সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সিকান্দার বলেন, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ মানুষের অন্তরে আলো জ্বালিয়েছেন। এজন্যই তাকে আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়।

    তিনি জানেন, বুঝেন এবং চিহ্নিত করতে পেরেছেন সমাজের প্রকৃত অভাব ও অসঙ্গতিকে।

    আর সেই অভাবকে দূর করতে দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।

    এখানেই তিনি আর সবার চেয়ে আলাদা ও ব্যতিক্রম।

    রেজিস্ট্রার সজল কান্তি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় এতে আরো উপস্থিত ছিলেন ট্রেজারার প্রফেসর সামস-উদ-দোহা, মহাপরিচালক সৈয়দ শফিকউদ্দীন আহমেদ, স্কুল অব লিবারেল আর্টসের ডিন মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন ড. মো. নাজিম উদ্দিন, স্কুল অব বিজনেসের ডিন ড. মোহাম্মদ রকিবুল কবিরসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

    রেজিস্ট্রার সজল কান্তি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় এতে আরো উপস্থিত ছিলেন ট্রেজারার প্রফেসর সামস-উদ-দোহা, মহাপরিচালক সৈয়দ শফিকউদ্দীন আহমেদ, স্কুল অব লিবারেল আর্টসের ডিন মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন ড. মো. নাজিম উদ্দিন, স্কুল অব বিজনেসের ডিন ড. মোহাম্মদ রকিবুল কবিরসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…