বিএম ডেস্ক : নিউ জিল্যান্ডের দুটি মসজিদে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হামলার ঘটনায় স্ত্রী হারানো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফরিদ আহমেদ।
শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চে নিহতদের স্মরণে দেশটির জাতীয় একটি অনুষ্ঠানে সমবেত ২০ হাজার মানুষের সামনে ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ওই হামলাকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
হামলাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি চাইনা আমার হৃদয় একটি উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরিতে রুপ নিক। আমি এমন এক হৃদয় চাই যা প্রেম এবং যত্নের সাথে পূর্ণ থাকবে, রহমত থাকবে এবং সহজে ক্ষমা করবে, কারণ এই হৃদয় আর কাউকে হারাতে দেখতে চায় না।’
ফরিদ আহমেদ আরও বলেন, ‘আমি এক সংস্কৃতির, আপনি অন্য সংস্কৃতি থেকে আসতে পারেন, আমার এক বিশ্বাস থাকতে পারে, আপনার আরেক বিশ্বাস থাকতে পারে, কিন্তু একসঙ্গে আমরা একটি সুন্দর বাগান’। তার এই বক্তব্যের পরে অকল্যান্ডের ৫২ বছর বয়সী কেল্লি স্মিথ আহমেদের বক্তব্যকে দারুণ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘তিনি যা বললেন তা আমার খুব ভাল লেগেছে : আমরা সবাই বিভিন্ন ফুল কিন্তু একসাথে আমরা খুবই সুন্দর এবং এটা খুবই সত্য।
১৫ মার্চ (শুক্রবার) ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের সন্দেহভাজন হামলাকারীর লক্ষ্যবস্তু হয় নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদ। শহরের হাগলি পার্কমুখী সড়ক ডিনস অ্যাভিনিউয়ের আল নূর মসজিদসহ লিনউডের আরেকটি মসজিদে তার তাণ্ডবের বলি হয় অর্ধশত মানুষ। হামলার পর থেকেই এর নিন্দা জানিয়ে নিহতদের প্রতি ধারাবাহিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন নিউ জিল্যান্ডবাসী।
শুক্রবার তৃতীয়বারের মতো বড় ধরনের স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনসহ অন্য বিদেশি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পরে মরিসসন সাংবাদিকদের বলেন, এই অনুষ্ঠানের সবকিছুই ছিল অনিন্দ্য সুন্দর। মসজিদে হামলায় হতাহতদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ফরিদ আহমেদের স্ত্রী হুসনা আহমেদ।
শুক্রবারের অনুষ্ঠানে ফরিদ বলেন, আমি আগ্নেয়গিরির মতো ফুটন্ত হৃদয়ের অধিকারী হতে চাই না। আগ্নেয়গিরিতে থাকে ক্রোধ, উন্মত্ততা আর ক্ষোভ। শান্তি থাকে না। তাতে থাকে ঘৃণা। নিজে নিজেই পুড়তে থাকে। পুড়িয়ে ফেলে আশেপাশের সবকিছুকে। আমি এরকম হৃদয়ের অধিকারী হতে চাই না। হামলার পর থেকেই মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি অভাবনীয় সহানুভূতি দেখাচ্ছে নিউ জিল্যান্ড।
দেশটির নাগরিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফরিদ বলেন, তিনি হামলাকারীর কাজকে সমর্থন করেন না। তার মুসলমান বিশ্বাস তাকে শিখিয়েছে সন্ত্রাসী হলেও সে আমাদের ভাই।
অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী মাওরি পোশাক পরে উপস্থিত হন নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডান। তিনি বলেন, বিশ্বে এখন উগ্রবাদের চক্রে আটকে গেছে। অবশ্যই এর অবসান হতে হবে। ক্রাইস্টচার্চে হামলায় নিহতদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছে তার দেশ।
জাসিন্ডা বলেন, তারা ছিলেন এক একটি সাহসের গল্প। তারা এখানেই জন্মেছিলেন, বেড়ে উঠেছিলেন বা নিউ জিল্যান্ডকেই নিজেদের বাড়ি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তারা শরণার্থী হিসেবে এসেছিলেন বা নিজের অথবা পরিবারের জন্য আরেকটু উন্নত জীবন চেয়েছিলেন। তাদের এসব গল্প এখন আমাদের সামগ্রিক ইতিহাসের অংশ। তারা আমাদের সঙ্গে চিরকাল থাকবে।
বিএম/তাইফুল/রাজীব…