আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মুসল্লিদের সম্মানে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৯ মার্চ) হ্যাগলে পার্কের স্মরণসভায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ অন্তত ২০ হাজার মানুষ অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেন, পৃথিবী উগ্রবাদের দুষ্টচক্রে আটকে গেছে। মানবতার মধ্যে উগ্রবাদের সমাধান রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, উগ্রবাদের ক্ষতিকর চক্রে বিশ্ব আটকে গেছে। অবশ্যই এর অবসান জরুরি। উগ্রবাদকে আমাদের একার পক্ষে মোকাবিলা সম্ভব নয়। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, কঠোর শাসন কাঠামো তৈরি কোনো সমাধান হতে পারে না।
বিশ্ববাসী ঘৃণার ভাইরাস থেকে মুক্ত নয় এবং কখনোই ছিলো না বলে মন্তব্য করেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্ন। ঘৃণা নয়, ভালোবাসর মাধ্যমে উগ্রবাদ নিরসন সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিনের বক্তব্যে ঘৃণা, উগ্রবাদ এবং বৈষম্যহীন পৃথিবী গঠনে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান বেঁচে যাওয়া মুসল্লিরা।
স্থানীয় মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শাগাফ খান বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া নারী শিশুসহ ৫০ জনের সুন্দর মুখগুলো দেখা আমার জন্য খুব কষ্টের ছিলো। তাদের হারিয়ে আমরা শোকার্ত। আমরা বিশ্বাস করি তারা শান্তিতে আছেন। আপনারা যারা আমাদের পাশে ছিলেন, হৃদয় দিয়ে আগলে রেখেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা; এজন্য আমরা গর্বিত।
বেঁচে যাওয়া এক মসুল্লি ফরিদ আহমেদ বলেন, আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ রাস্তায় যারা মারা যান, তাদের তোমরা মৃত বলো না। কারণ তারা মরে নাই, তাদের আত্মা জীবিত। আমরা মানবজাতি, কাউকে ঘৃণা করতে পারি না। পারস্পরিক সম্প্রীতি আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা। ঘৃণার আগ্নেয়গিরি নয়, ভালোবাসা, দয়ামায়া ভরা হৃদয় চাই।
স্মরণ সভায় গান পরিবেশন করেন বিখ্যাত ব্রিটিশ গায়ক ইউসুফ ইসলাম। গেলো ১৫ই মার্চ অস্ট্রেলীয় হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্টের হামলায় শতাধিক মুসল্লি হতাহত হন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিউজিল্যান্ডের জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ৪২ শতাংশ ধর্মে বিশ্বাসী নন। মুসলমানদের অনুপাত মাত্র ১ দশমিক এক, আট শতাংশ। বাকিরা অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। তবে নিউজিল্যান্ডবাসী বলছেন, ধর্মবিশ্বাসে আলাদা হলেও, মানবতায় তারা সবাই এক।
স্মরণসভায় হাজারও মানুষের উপস্থিতিতে শহীদদের নাম পড়ে শোনানো হয়। এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধ কর্তৃপক্ষ শহীদদের পরিবারের প্রতি এমন দুঃখজনক ঘটনায় আরও সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
স্মরণসভায় আরর্ডান বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সেরাটি তৈরি করা। কারণ আমরা ঘৃণা ভাইরাস, ভয় বা অন্যান্য কিছু থেকে দায় মুক্ত নই।
তিনি বলেন, এমন ঘটনা মোকাবেলায় আমরা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। কিন্তু জাতিকে বিশুদ্ধ করতে হবে। আমাদের এখন থেকে কাজ করতে হবে।
আল নুর মসজিদের পাশে হ্যাগলি পার্কে স্মরণসভায় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডানের সঙ্গে দেশটির উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারাও যোগ দেন।
যেখানে গত ১৫ মার্চ অস্ট্রেলীয় নাগরিক জঙ্গি ব্রেনটন ট্যারান্ট সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে আল নুর মসজিদেই ৪০ জন শহীদ হন। এ ঘটনায় ওই শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়। আগামী ৫ এপ্রিল তাকে আবার আদালতে তোলা হবে।
বিএম/রনী/রাজীব