সরকার দুর্নীতির মহাসড়কে হাঁটছে বলেই সাধারণ মানুষের এত লাশের স্তূপ

    বিএম ডেস্ক : বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আগুন নেভাতে ও মানুষ উদ্ধারে সরকার আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়ার কোনো লেটেস্ট ডিভাইস নেই। দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকর্মীদের দ্রুত পৌঁছানোর জন্য কোনো উন্নতমানের বিকল্প ব্যবস্থা নেই। আগুন নেভাতে উন্নত ও স্বয়ংক্রিয় মই পর্যন্ত নেই। সবই সেকেলে ও মান্ধাতার আমলের।’

    বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের মুখে উন্নয়নের মহাসড়কের বুলি শুনতে শুনতে সাধারণ মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ২২ তলা ভবনে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম নেই। অথচ দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে বলে চাপাবাজি চলছে সপ্তকণ্ঠে। আসলে দুর্নীতির মহাসড়কে এই সরকার হাঁটছে বলেই সাধারণ মানুষের এত লাশের স্তূপ।’

    আজ শনিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলের এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। এ সময় তিনি কারাগারে বন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।

    বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কথা স্মরণ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একটি ভবনের ধোঁয়া অপসারিত হতে না হতেই আরেকটি উঁচু ভবনের অগ্নিকুণ্ডের ধোঁয়া সারা আকাশে বিস্তার লাভ করেছে। একটি বেদনাঘন শোক কাটতে না কাটতেই আরেকটি গভীর শোক আমাদের আচ্ছন্ন করছে। দেশবাসী যেন একটা বিশাল বিস্তৃত গোরস্থানের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিপ্রজ্বলনে মর্মস্পর্শী মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ট্র্যাজেডি দেশবাসীকে শোকে বেদনায় নির্বাক করে দিয়েছে। স্বজন হারানোর বেদনায় যন্ত্রণাকাতর মানুষ আর্তনাদ করছে।’

    ‘সবই সেকেলে ও মান্ধাতার আমলের। হেলিকপ্টারের সঙ্গে ঝোলানো বালতিতে হাতিরঝিল থেকে পানি নিয়ে বিল্ডিংয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে সেই বালতির সব পানি ফুটো তলানি দিয়ে ঝরে গেছে। অথচ উন্নত দেশে আগুন নেভাতে ও মানুষ উদ্ধারে কত আধুনিক সরঞ্জাম ও ব্যবস্থাপনা দেখতে পাওয়া যায়।’

    প্রতিদিনই নানা দুর্ঘটনায় প্রায় ৫০ জনের মতো মানুষের তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির নেতা বলেন, সরকার বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সঠিক সংখ্যাটিও প্রকাশ করে না। এরা ক্ষমতার মোহে এতটাই পাগল যে, মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে যায়। সুশাসন থাকলে এই অব্যবস্থাপনা চলত না। বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হয়নি, উঁচুতলার ভবনগুলোর কোনো নির্গমন পথ নেই, ভবনগুলোতে অগ্নি-প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেই- সেটা তদারকির দায়িত্ব সরকারের। শুধু লোভ ও লাভের জন্যই বেআইনিভাবে এই ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। আর এ কারণেই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের বসবাসের অযোগ্যের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে।’

    রিজভী বলেন, গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে দমন করার জন্য কত যে আধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে আসা হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। নিয়ে আসা হয়েছে সর্বাধুনিক বিপজ্জনক টিয়ারশেল, স্মোক গ্রেনেড, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, গোলমরিচ-স্প্রেসহ নানা ধরনের আধুনিক অস্ত্র।

    তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য, মানুষ হত্যার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে ৩০ হাজার আধুনিক মারণঘাতি ১২ বোর শর্টগান। শর্টগানের জন্য ৩০ লাখ কার্তুজ আমদানি করা হয় হাজার কোটি টাকা শ্রাদ্ধ করে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, নইলে রাজপথে আওয়াজ উঠবে’

    বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে রাজপথ শূন্য ও আওয়াজহীন থাকবে না বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘স্বৈরতন্ত্রের বন্দিশালা থেকে যিনি বারবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আপসহীন সংগ্রাম করেছেন তাঁকে সুকৌশলে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে গণতন্ত্রবিনাশী ভয়ঙ্কর একদলীয় শাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। আমরা আবারও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই- এই মুহূর্তে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, নইলে রাজপথে আওয়াজ উঠবে।’

    বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্ববাসী। অথচ তাঁর সেই চেতনায় গণতন্ত্র অনুপস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের অন্তনির্হিত স্পিরিটই ছিল গণতন্ত্র। শেখ হাসিনা ও তাঁর দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে গণতন্ত্রকে মুছে দিয়ে বাকশালকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বাকশাল হচ্ছে জনগণকে খোয়াড়ে বন্দি করার ব্যবস্থা।’

    বিএম/রনী/রাজীব