অসহ্য গরম ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে সারাদেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে

    বিএম ডেস্ক : অসহ্য গরম আর নিরাপদ পানির অভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগ। আক্রান্তের ৩০ শতাংশ শিশু হলেও সিংহভাগই বয়স্ক রোগী।

    রাজধানীতে ডায়রিয়া রোগের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র আইসিডিডিআরবিতে অন্য সময়ের চেয়ে রোগী আসছে প্রায় তিনগুণ বেশি। তাবু খাটিয়ে বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

    অতি গরমে পানিশূন্যতা থেকেই ডায়রিয়া বাড়ছে বলে জানান চিকিৎসকরা। এ সময় বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শ দেন তারা।

    প্রতিবছর এই সময়টাতে রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ে। তবে এ বছর এই সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র- আইসিডিডিআরবি’র তথ্য বলছে, মার্চ মাস থেকেই হাসপাতালে রোগী আসা বাড়তে থাকে। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে প্রতিদিন ছয়শ’র বেশি রোগী আসে এই হাসপাতালে। যা এখন প্রতিদিন নয়শ’ ছাড়িয়ে গেছে।

    আইসিডিডিআরবিতে কেবল চলতি মাসেই ভর্তি হয়েছে ১৯ হাজার ৫০৭ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। আক্রান্তের ৩০ শতাংশ শিশু। শয্যার অভাবে বারান্দা, এমনকি গবেষণার জন্য নির্ধারিত স্টাডি ওয়ার্ডেও ভর্তি করাতে হচ্ছে রোগী। চাপ সামলাতে হাসপাতালের সামনে তাঁবু টানিয়ে বানানো হয়েছে অস্থায়ী শয্যা।

    এক রোগী জানান, আমার শরীরের অবস্থা এত খারাপ হলো যে দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না। কেউ কেউ বলছেন, শহরে এসে পানি খাওয়ার ফলে এ সমস্যা হচ্ছে।

    স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে চলতি মাসে রাজধানীর বাইরে ১৭টি হাসপাতালে সাড়ে ২২ হাজার ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর চাপ। চিকিৎসকরা জানালেন, গরম আর নিরাপদ পানির অভাবেই অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

    গরমে পিপাসার্ত মানুষের পানি পানের চাহিদা বাড়লেও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ বাড়ে না সেইভাবে। প্রয়োজন মেটাতে নিরাপদ অনিরাপদ বাছ বিচার না করায় পানিবাহিত এই রোগে সহজেই ধরাশায়ী হন রোগীরা।

    গরমের পাশাপাশি বাসাবাড়ির পানির উৎস, রাস্তা ও হোটেলের বাসি-পচা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে এই রোগ ছড়াচ্ছে বলে জানান চিকিৎসকরা। ডায়রিয়া থেকে রক্ষায় ফোটানো পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

    চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে ডায়রিয়ার ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। তাই এই মৌসুমে তাজা খাবার গ্রহণ ও প্রতিবার খাবার আগে ভালোভাবে হাত ধোয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।

    আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের প্রধান অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, শিশুদের শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ। আর বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা দরকার। এর কোনো বিকল্প নেই।

    বিএসএমএমইউ’র মেডিসিন বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. নাহিদ সাজ্জাদ বলেন, বাসি ও পচা খাবারতো খাওয়া যাবেই না বরং রেস্টুরেন্টের খাবারও হাইজেনিক হতে হবে।

    ডায়রিয়া হলে করণীয় : পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। ডায়রিয়া দেখা দিলে বিধি মেনে স্যালাইন খেতে হবে। অবস্থার উন্নতি না হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যেতে হবে। রাস্তার উন্মুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। ঋতু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ায় গরম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোগ-জীবাণুর বিস্তার ঘটে। খাবার সহজে নষ্ট হয়। এ সময় বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুতে হবে। পানির উৎস হতে হবে নিরাপদ।

    বিএম/রনী/রাজীব