নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে নুর উদ্দিন ও শামীমের জবানবন্দি

    বিএম ডেস্ক : ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার অন্যতম আসামি নুর উদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম।

    রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া শুরু করেন আসামি নুর উদ্দিন। রাত সাড়ে ৯টায় তার জবানবন্দি নেয়া শেষ হয়। এর পর রাত দেড়টা পর্যন্ত জবানবন্দি দেন শাহদাত হোসেন শামীম।

    জবানবন্দি শেষে স্পেশাল ইনভেশটিকেশন এন্ড অপারেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহেরুল হক চৌহান সাংবাদিকদের জানান, আসামিরা অপরাধ স্বীকার করেছন। তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

    তারা এখানে কয়েকজন সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিল। তারা পরিকল্পনায় অংশগ্রহন করেছে। তারা জেলখানা থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন।

    এখন পর্যন্ত আমরা ১৩ জনের নাম পেয়েছি। আরো কিছু নাম বিক্ষিপ্তভাবে এসেছে। সরাসরি হত্যাকাণ্ডে ৪ জন ছিল। আমরা ২ জনে ধরতে পেরেছি। আর দুইজনে সহসাই ধরতে পারবো বলে আশা করছি।

    তিনি আরও বলেন, গত ১০ তারিখে মামলাটি পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে যারা ঘটনার মূলনায়ক, যারা ঘটনা ঘটিয়েছেন তাদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করেছি। পিবিআই হেড কোয়াটার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের ভিত্তিতে আমরা শুধু গ্রেফতারে সহায়তা করেছি। তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনের মধ্যে থেকেই আদালতে উপস্থাপন করেছেন। আদালত দুইজন আসামিকে দীর্ঘ সময় যাবত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছন। তাদের বক্তব্য শুনেছেন। পরবর্তীতে তারা ১৬৪ ধারায় স্বতস্ফূর্তভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। পুরো বিষয়টাই তারা খোলসা করেছেন। একেবারে কিভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে, কারা ঘটিয়েছে তা বিস্তারিত এখন বলবো না। সহসাই তা জানতে পারবেন।

    জবানবন্দিতে নুর বলেছেন, ‘এপ্রিলের ১ ও ৩ তারিখ কারাগারে আটক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেখানেই নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অধ্যক্ষের পরামর্শেই নুসরাতের গায়ে আগুন ধরানো হয়।’

    ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার্থী রাফিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ১০ এপ্রিল বুধবার রাতে সাড়ে ৯টায় তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের দায়ের করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

    শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্তকারী সংস্থা বলেছে, দুটি কারণে নুসরাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১. শ্লীলতাহানির মামলা করে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করিয়ে নুসরাত আলেম সমাজকে ‘হেয়’ করেছেন। ২. আসামি শাহাদাত নুসরাতকে বারবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু নুসরাত তা গ্রহণ না করায় শাহাদাতও হত্যার পরিকল্পনা করেন।

    পিবিআই বলছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আরও অনেকের নাম উঠে আসতে পারে। তদন্তের কারণে কয়েকজনের নাম এখনই বলা হবে না।

    উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। এসময় কৌশলে তাকে ছাদে নিয়ে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থেকে গত বুধবার ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে মারা যান নুসরাত। মৃত্যুর আগে তিনি লাইফসাপোর্টে ছিলেন।

    বিএম/রনী/রাজীব

    আরো খবর::
    সিরাজের নির্দেশে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করে শামীম

    প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন নুসরাতের পরিবার