বিএম ডেস্ক : ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি আওয়ামী লীগের নেতা পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে (৪৫) পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত।
সোমবার দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজেষ্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে গত ১২ এপ্রিল মাকসুদ আলমের বিরুদ্ধে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম। ওইদিন আদালত এর ওপর শুনানি না নিয়ে আজকের দিন ধার্য করেন।
এর আগে রবিবার মামলার অন্যতম দুই আসামি নুর উদ্দিন এবং শাহদাত হোসেন শামীম আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জড়িতদের নাম উল্লেখ করে। ভুক্তভোগীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু তথ্য জানিয়েছেন।
তদন্ত সূত্র জানায়, যৌন হয়রানির মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা গ্রেফতার হওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের নির্দেশে নুর উদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম অধ্যক্ষ মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করে। এজন্য সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলম তাদের ১০ হাজার টাকাও দিয়েছিল। এছাড়া, মাদ্রাসার আরেক শিক্ষকও আন্দোলন ও নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপ-পরিদর্শক ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, “কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে সোমবার ফেনী জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এর আগে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আমরা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করি। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন”।
এ নিয়ে এ মামলার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, কাউন্সিলর মাকসুদ সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সোনাগাজী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্বে আছেন। এছাড়াও তিনিসোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য। নুসরাত হত্যার সাথে সম্পৃক্ততার কারণে গত ১২ এপ্রিল পৌর আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়।
ফেনী পিবিআই’র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান, গত শুক্রবার সকালে পিবিআই’র একটি দল রাজধানীর ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেল থেকে মাকসুদকে গ্রেফতার করে।
প্রসঙ্গতঃ গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা আলিম পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগাম দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেছেন এমন অভিযোগ এনে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকাশ্যে অধ্যক্ষের পক্ষ নেন কাউন্সিলর মাকসুদ। তিনি নুসরাত ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পক্ষে মাকসুদ একটি মানববন্ধনের আয়োজনও করেন বলে অভিযোগ রয়েছে নুসরাতের পরিবারের। এমনকি মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিচার চেয়ে ওই মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের সাবেক সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর শেখ মামুনের নেতৃত্বে একটি মানববন্ধন করা হলে মাকসুদ তাকেও মারধর করেন।
বিএম/রনী/রাজীব