স্কয়ারের ভুল চিকিৎসায় পঙ্গু হওয়ার পথে ঢাবি ছাত্র

    বিএম ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের ছাত্র মেহেদী হাসান শামীমের হাতের কার্যক্ষমতা হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। বাম পাও খুঁড়িয়ে চলতে হচ্ছে। মেহেদীর অভিযোগ, স্কয়ার হাসপাতালের ডাক্তার কৃষ্ণা প্রভুর ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে এমন পরিণতি হয়েছে তার।

    বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির (ঢাবিসাস) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

    এ বিষয়ে শামীম বলেন, রক্তনালীর ব্রেন টিউমার (ইনসুলার ক্যাভারনোমা) হওয়ায় ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হই। তখন তিনি বলেন টিউমারের দ্রুত অপারেশন না করলে স্ট্রোক করে যে কোনো সময় আমি মারা যেতে পারি। কিন্তু ডাক্তারকে বারবার অপারেশনের কারণে রিস্ক ও পোস্ট অপারেটিভ সিম্পটম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেও উনি সবকিছু সচেতনভাবে এড়িয়ে যান। শামীম আরো জানান, স্কয়ারের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করাই ছিল ডাক্তারের মুখ্য উদ্দেশ্য।

    শামীম আরো বলেন, আমি আইসিইউতে থাকাকালীন ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ডাক্তারের পরামর্শে অপারেশন করা হয়। কিন্তু আমার অপারেশনে আমার ছোট ভাইকেও আমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়নি। গত ২৫ তারিখ যখন আমি ওয়াশরুমে যেতে চাই তখন ডিউটি ডাক্তার আমার ভাইকে জানান, আমার বাম পাশ আর কাজ করছে না। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে অপারেশনের সিডি চাইলে ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তালবাহানা শুরু করে।

    এ বিষয়ে ডা. কৃষ্ণা প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা জানিয়ে শামীম বলেন, অপারেশনের সময় আমার মস্তিষ্কের কয়েকটি নার্ভ কাটা যায় বলে জানানো হয় এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর যাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তার। সাক্ষাতে শামীম তার অপারেশনের রিস্কের বিষয়ে কেন জানানো হয়নি সে ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তার উত্তরে ডাক্তার বলেন, তার কারণেই তিনি (শামীম) পঙ্গু হলেও বেঁচে আছে। অন্য কেউ অপারেশন করলে সেটাও হতো না। তিনি পঙ্গু হাত নিয়ে বেঁচে থেকে সন্তুষ্ট থাকতে বলেন।

    ভূক্তভোগী শামীম বলেন, ‘গত ১ এপ্রিল স্কয়ার হাসপাতালের সিইও ইউসুফ সিদ্দিকীর কাছে অপারেশনের সিডির জন্য গেলে তিনি গোঁজামিল হিসাব দেন। অপারেশনের আগে বারবার জিজ্ঞেস করলেও তাকে অপারেশনের পসিবল রিস্ক ও পোস্ট অপারেটিভ সিম্পটম সম্পর্কে জানানো হয়নি। অপারেশনের সিডি না দিয়ে তারা তাদের ভুল ঢাকার চেষ্টা করে।’

    এরপর গত ৭ তারিখ স্কয়ার হাসপাতালের সিইও বরাবর তার অপারেশনের সিডি ও পেশেন্ট ফাইল চেয়ে লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার আবেদন গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় বলে শামিম দাবি করেছেন।

    শামীম জানান, এ কারণে তার বাম হাত ও পায়ের অবস্থান অবনতি হচ্ছে। বাম পায়ের কারণে খোঁড়াতে হলেও বাম হাত সম্পূর্ণই অকেজো হয়ে পড়েছে।

    স্কয়ার হাসপাতালের এমন অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ লালসার জন্য তার পঙ্গুত্ববরণ করে নিতে হচ্ছে তার বিচার চান শামীম। একই সঙ্গে ঢাবি প্রশাসন, ডাকসুসহ অন্যদের সহযোগিতা চান সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভুক্তোভূগী এই আবাসিক ছাত্র।

    ভুল চিকিৎসার বিষয়ে জানার জন্য স্কয়ার হাসপাতালের ডাক্তার কৃষ্ণা প্রভুকে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

    বিএম/রনী/রাজীব