ওয়াসার পানি দিয়ে এমডিকে শরবত খাওয়ানোর প্রস্তাব

    বিএম ডেস্ক : ঢাকা ওয়াসার পানিকে ‘শতভাগ বিশুদ্ধ এবং সুপেয়’ দাবি করায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে সেই পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়ানোর প্রস্তাব করেছেন রাজধানীর জুরাইন এলাকার এক বাসিন্দা।

    সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমে এ কর্মসূচির বার্তা পাঠান মিজানুর রহমান নামে জুরাইন এলাকার এক বাসিন্দা। তার উদ্যোগে ২০১২ সালে জুরাইনের সাড়ে ৩ হাজার বাসিন্দা গণস্বাক্ষর নিয়ে ওয়াসার এমডি বরাবর একটি অভিযোগ করা হয়েছিল। তাতে কাজ হয়নি।

    এবারের কর্মসূচি অনুযায়ী, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের উদ্যোগে আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কারওয়ানবাজারে অবস্থিত সংস্থাটির ভবনে গিয়ে ওয়াসার পানির শরবত বানিয়ে এমডিকে খাওয়ানো হবে। এ উপলক্ষে জুরাইন রেলগেটে সকাল ৯টায় জমায়েতের আহ্বান জানানো হয়েছে।

    মিজান জানান, জুরাইন এলাকায় ১০ বছর আগে ওয়াসার পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করা যেত। কিন্তু ১০ বছর ধরে তাও সম্ভব হয় না। ময়লা কালো পানি আসে ওয়াসার পাইপ থেকে। ২০১২ সালে আমরা এলাকাবাসী এমডি বরাবর দরখাস্ত করেছিলাম সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে। বর্তমান এমডিই তখন থেকেই এই পদে আছেন। তিনি আশ্বাস দিলেও ৮ বছরে কোনো সমাধান হয়নি।

    তিনি বলেন, আমরা জুরাইনবাসীরা ওয়াসার পানি শুধুমাত্র গোসল ও ধৌত কাজে ব্যবহার করি। পানের জন্য এলাকার মসজিদে স্থাপিত গভীর নলকুপের পানি ব্যবহার করি।

    তিনি হতাশার সুরে অভিযোগ করেন, জুরাইন কি ঢাকা ওয়াসার অর্ন্তগত নয়? কারওয়ান বাজারে গিয়ে ওয়াসার এমডিকে এই প্রশ্নটাই করব। আর যদি তাই হয় তাহলে এই এলাকার পানি সুপেয় তো দূরের কথা পানের অযোগ্য কেন?

    কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েই তিনি জানান, এমডি যদি আমাদের পানি দেখে পানের অযোগ্য বলে স্বীকার করেন তবে আমরা চাইব যত বছর ধরে আমাদেরকে এমন নোংরা ও দূষিত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে ততদিনের ওয়াসা বিল টাকা আমাদের ফেরত দিক।

    মিজানের ফেসবুক স্ট্যাটাস

    গত ১৭ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) উদ্যোগে ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

    ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করে। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতিবছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়।’

    প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, গবেষণাটির জন্য টিআইবি মাঠপর্যায়ে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ওয়াসার ১০টি মডস জোনের মোট ২ হাজার ৭৬৮ জন গ্রাহকের মতামত নেয়। জরিপের ফলাফলে বলা হয়, এই গ্রাহকদের ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশই ওয়াসার সেবায় অসন্তুষ্ট। এর মধ্যে ২০ দশমিক ১ শতাংশ সন্তুষ্ট। আর ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ গ্রাহক ওয়াসার সেবায় মোটামুটি সন্তুষ্ট।

    টিআইবির রিপোর্টের সমালোচনা করে ‘ওয়াসার পানি শতভাগ বিশুদ্ধ এবং সুপেয়’ বলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।

    তবে গ্রাহকদের অনেকেই দাবি করেছেন, বাস্তবে ওয়াসার পানি সবসময়ই নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত এবং পুরোপুরি দূষিত।

    তাই এবার তাকসিম খানকে ‘ওয়াসার শতভাগ বিশুদ্ধ পানি’র শরবত (!) খাওয়ানোর কর্মসূচি গ্রহণ করেছে রাজধানীর জুরাইন এলাকার বাসিন্দারা।

    বিএম/রনী/রাজীব