আজ দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতুর ১৬৫০ মিটার

    বিএম ডেস্ক : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ১১তম স্প্যানটি ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে। এতে জাজিরা প্রান্তে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ১৬৫০ মিটার।

    মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে জাজিরা প্রান্তে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই স্প্যানটি বসানো হয়।

    এর আগে গত ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে বসানো হয় দশম স্প্যান। এবারই প্রথম এক মাসে দুইটি স্প্যান বসানো হলো।

    আজ সকাল সাড়ে ৬টা থেকে পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজ শুরু। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো সেতুর ১ হাজার ৬৫০ মিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ূন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

    সেতু বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবীর জানান, মঙ্গলবার ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর ১১তম স্পেনটি বসানো হয়েছে। এতে জাজিরা প্রান্তে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ১৬৫০ মিটার। প্রতি মাসেই একটি করে স্পেন বসানো হবে বলে আশা করছেন তিনি।

    তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে। দেশের অর্থনীতিতে নতুনমাত্রা যোগ হবে। পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে গড়ে উঠবে বিশ্বমানের শহর। কলকারখানায় ভরে উঠবে এ এলাকা। শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

    সর্বক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে আশা করছেন পদ্মা পাড়ের মানুষ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় সাত কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে এ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে।

    দোতলা এ সেতুর নিচতলায় চলবে ট্রেন। স্থাপন করা স্পেনগুলোয় এখন রেলের স্লাব বসানোর কাজ চলছে। জাজিরা প্রান্তের স্পেনগুলোয় ১২৮টি স্লাব বসানো হয়েছে। পুরো সেতুর দুই হাজার ৯৫৯টি স্লাব বসানো হবে। মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়াডে স্পেন ও স্লাব বসানোর কাজ চলছে।

    সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে মাওয়ার মুন্সীগঞ্জের কুমারভোগের বিষেশায়িত জেডি থেকে স্প্যানটি নিয়ে শক্তিশালী ভাসমান ক্রেন তিয়া নি হাউ জাজিরার উদ্দেশে রওনা দেয়।

    সোমবার বিকালে স্প্যানটি নিয়ে জাজিরা নাওডোবা এলাকায় পৌঁছে। মঙ্গলবার সকালে পিলারের ওপর তোলা হবে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ।

    গত বছর আরও একটি স্পেন ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে। এ নিয়ে দৃশ্যমান হয় এক হাজার ৬০০ মিটার।

    এর আগে ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সেতুর ১ম স্পেন এবং ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্পেন, ১০ মার্চ তৃতীয় স্পেন, ১৩ এপ্রিল ৪র্থ স্পেন এবং ২৯ জুন ৫ম স্পেন বসানো হয়।

    ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ষষ্ঠ স্প্যান, ২০ ফেব্রুয়ারি ৭ম স্পেন বসানোর হয়েছে। ২০ মার্চ ৮ম স্পেন, ১৮ এপ্রিল ৯ম স্পেন বসানো হয়। এ ছাড়া মাওয়া পয়েন্টের দিকে গত বছর আরও একটি স্পেন ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে। ওই স্পেনটি তৈরি করা হয়েছে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের ওপর বসানোর জন্য।

    নকশা জটিলতা ও পিলার তৈরি না হওয়ায় এবং ওয়ার্কশপে জায়গা না থাকায় অস্থায়ীভাবে ৪ ও ৫ নম্বর পিলারে তুলে রাখা হয় স্পেনটি। নকশা জটিলতা কেটে যাওয়ার পর ৬ ও ৭ নম্বর পিলার তৈরি হলে স্পেনটি সেখানে সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ।

    প্রতিটি স্পেনের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্পেন বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১টি পিলার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। এ স্পেনটি বসানোর সংবাদে পদ্মা পাড়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।

    পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুতে মোট ২৯৪টি পাইল আছে, যার মধ্যে নদীতে ২৬২টি পাইল। মূল সেতুর ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ইতোমধ্যে ২৪৭টি পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। ২৯৪টি পাইলে মোট ৪২টি পিলার। সেতুতে মোট স্প্যান বসবে ৪১ টি।

    বিএম/রনী/রাজীব