বোয়ালখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : একযুগ ধরে বিকল এক্স-রে মেশিন

বোয়ালখালী প্রতিনিধি : বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক যুগ ধরে বিকল পড়ে রয়েছে এক্স-রে মেশিন। ফলে রোগ নিরুপনে দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগী সাধারণ। বেসরকারি রোগ নিরুপন কেন্দ্র থেকে এক্স-রে করতে হচ্ছে। এতে স্বল্পমূল্যের সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বোয়ালখালীবাসী।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে গত ২০০৭ সালের শেষের দিকে বিকল হয়ে পড়ে পুরাতন এক্স-রে মেশিনটি। এর ৩ বছর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের মার্চে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার মূল্যের ৫০০ এম এম আধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয় বোয়ালখালী হাসপাতালে।

তবে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও টেকনিশিয়ান জটিলতায় নতুন এক্স-রে মেশিনটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে এক্স-রে মেশিন পেয়েও এর সুফল ভোগ করতে পারেননি বোয়ালখালীর দরিদ্র জনগণ। পুরোনো এক্স-রে মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুবাধে ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট তৎকালীন এক্স-রে টেকনেশিয়ান (রেডিওগ্রাফি) মো. বাবুল মিয়াকে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল ও মিডফোর্ড হাসপাতালে প্রেষণে নিয়ে যাওয়া হয়।

বোয়ালখালীতে নতুন এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ হবার প্রায় ৩-৪ বছর পর প্রেষণে থাকা টেকনেশিয়ান বাবুল মিয়াকে তার কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার জন্য চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাকে না পেয়ে পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত এক্স-রে টেকনেশিয়ান আবুল কালাম প্রধানসহ বোয়ালখালীতে পরপর আরো ৩-৪ জন টেকনেশিয়ানকে পদায়ন করা হয়। তারা বিভিন্ন অযুহাতে সেই বদলী ঠেকিয়ে ফেলেন।

ফলে টেকনেশিয়ান জটিলতায় পড়ে দীর্ঘদিন চালু করা যায়নি এ মেশিন। শেষতক একজন টেকনিশিয়ান আসেন। টেকনেশিয়ান জটিলতা দূর হলেও সরকারের দেওয়া নতুন এক্স-রে মেশিনটি আর সাড়া দিচ্ছে না কারো ইশারায়। এতে বোয়ালখালীবাসীর কপালে জুটলো না ডিজিটাল এক্স-রে সেবা। সরকারি এক্স-রে সুবিধা বঞ্চিত রোগী সাধারণ বিভিন্ন রোগ নিরূপন কেন্দ্র থেকে স্বল্পমূল্যের এ সেবা গ্রহণ করছেন মোটা অংকের নগদ টাকায়। এ চাহিদাকে পুঁজি করে স্থানীয় রোগ নিরুপনী কেন্দ্রের মালিকরা রিপোর্ট দেওয়ার নামে প্রতারণা করছেন গ্রাহকদের সাথে।

২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলা হাসপাতাল কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির ৪র্থ সভা চলাকালীন সময়ে স্থানীয় সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদল ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ৫ বছরেও চালু করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ১৫ দিনের মধ্যে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন সচল করে জনসেবায় উম্মুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

এ নির্দেশের ৩ বছর পেরিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে শুধুমাত্র চিঠি লিখে দায় সেরেছেন কর্তৃপক্ষ। অসার ৫০০ এম এম ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন চালু করতে না পারায় অবশেষে অলস পড়ে রয়েছে কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনের একটি কক্ষে। হাসপাতালে কর্মরত এক্স-রে টেকনিশিয়ানকে পটিয়া উপজেলায় প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ।

সদ্য যোগদানকারী বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, মূল্যবান ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি সচল নেই। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে এক্সরে সেবা দেওয়া গেলে অনেক রোগীর রোগ নিরুপন সহজেই করা যেত। এতে কমে আসতো রোগী ও স্বজনদের দূর্ভোগ।

বর্তমানে এক্স-রে সেবা না থাকায় সামান্য আঘাত পাওয়া রোগীদেরও অন্যত্র স্থানান্তর করতে হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদল।

বিএম/পুজন সেন/রাজীব…